Thursday, March 19

কানাইঘাটে মহিলা ইউপি সদস্যার ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার ১ , এলাকায় তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:   
কানাইঘাট সাতবাঁক ইউনিয়নের ৭নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্যা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাতিমা বেগমের দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় লেখক আব্দুল কাহিরকে কানাইঘাট থানা পুলিশ গত বুধবার দিবাগত রাতে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আব্দুল কাহিরকে ইউপি সদস্যার সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সাতবাঁক ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন।
ইউপি সদস্যা ফাতিমা বেগমের মামলা নিয়ে বিপাকেও পড়েছে পুলিশ। এমনকি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম ঐ ইউপি সদস্যা ফাতিমার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হয়রানী মূলক বলে জানিয়েছেন। সে মহিলা আওয়ামীলীগের দলীয় পদ ব্যবহার করে তার ব্যক্তিস্বার্থ সহ নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা জানান উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার উত্তর দলইমাটি গ্রামের বাবুল আহমদের সাথে মহিলা ইউপি সদস্যা ফাতিমা বেগমের স্বামী সাতবাঁক ইউপির পশ্চিম জুলাই গ্রামের আলী আহমদের সাথে আর্থিক লেনদেন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
এ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সাতবাঁক ইউপির চাপনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের পুত্র বর্তমানে পৌরসভার ডালাইচর গ্রামে বসবাসরত কয়েকটি বইয়ের লেখক আব্দুল কাহির সহ আরো অনেকে চেষ্টা করেন। এতে আলী আহমদ আব্দুল কাহিরের উপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন। আলী আহমদের স্ত্রী ইউপি সদস্যা ফাতিমা বেগম অভিযোগ করেন যে, গত ১৪ মার্চ শনিবার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে রাত ৭টার দিকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে সাতবাঁক ইউনিয়নের বীরাখাই ব্রীজ সংলগ্ন পৌঁছিলে আব্দুল কাহির ও বাবুল আহমদ একটি সিএনজি গাড়ী নিয়ে তার পথরোধ করে টানা হেছড়া করে একটি শীম ঝাড়ের পাশে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পালাক্রমে ধর্ষণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যায়।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্যা ফাতিমা বেগম গত ১৬ মার্চ মঙ্গলবার সিলেট ওমেক হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলে ওসিসি থেকে ফাতিমা বেগম ধষর্ণের অভিযোগটি এফআইআর করার জন্য থানায় প্রেরণ করা হলে থানা পুলিশ ফাতেমা বেগমের অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করে আব্দুল কাহির ও বাবুল আহমদ কর্তৃক তাকে ধর্ষণের কোন সঠিক আলামত না পাওয়ায় অভিযোগটি আরো অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নিলে ফাতিমা বেগম থানা পুলিশ তার ধর্ষণের মামলা রেকর্ড করেছেন না বলে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণাপন্ন হয়। থানা পুলিশ বুধবার গভীর রাতে আব্দুল কাহিরকে গ্রেফতার করে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউপি সদস্যার দায়েরকৃত অভিযোগ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ এর ৯(৩) ধারায় রেকর্ড করলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আব্দুল কাহিরকে গ্রেফতার করার পর এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকজন থানা এলাকায় ভীড় করেন। তাৎক্ষণিক দুপুর ১২টায় সাতবাঁক ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী মখদ্দুছ আলী, সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য আব্দুন নুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য রইছ উদ্দিন, ইউপি সদস্য শায়িকুল আলম, আ’লীগ নেতা ফারুক আহমদ, আব্দুল মুছব্বির, বিএনপি নেতা কুটি মিয়া, বিশিষ্ট মুরব্বী আলতাফ উদ্দিন, মঈন উদ্দিন, হাবিব আহমদ, তবারক আলী, নুর উদ্দিন এবং পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খাজা শামীম আহমদ সহ আরো অনেকে ইউপি সদস্যা ফাতিমা বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ব বিরোধের জেরধরে ধর্ষণ মামলার নাটক ও আলামত সাজিয়ে সে আওয়ামীলীগ নেতা সমাজসেবী বিভিন্ন বইয়ের লেখক আব্দুল কাহির ও জাপা নেতা বাবুল আহমদের বিরুদ্ধে সাজানো ধর্ষণ মামলা দিয়েছে। ১৪ মার্চ বিরাখাই ব্রীজ ও আশপাশ এলাকায় এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তারা জানান। এলাকার কেউই জানেন না। বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। মামলার আসামী বাবুল আহমদের স্বজনরা জানিয়েছেন, ১৪ মার্চ অসুস্থ অবস্থায় সিলেট ল্যাব এইড ডায়গনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসায় ছিলেন রাত ১২টা পর্যন্ত। তিনি কিভাবে ইউপি সদস্যা ফাতিমাকে ধর্ষণ করলেন। গ্রেফতারকৃত আব্দুল কাহিরের স্বজনরা জানিয়েছেন, ঐদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি কানাইঘাট বাজার ও বাসায় ছিলেন অনেকের সাথে। অথচ তিনি ফাতিমাকে গণধর্ষণ করেছেন বলে হাস্যকর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শামসুদ্দোহা পিপিএম এর সাথে স্থানীয় সাংবাদিকদের কথা হলে তিনি বলেন, ইউপি সদস্যা ফাতেমা বেগমের ধর্ষণের অভিযোগ আমার কাছে সন্দেহজনীত মনে হচ্ছে। যেহেতু ওসিসি থেকে তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য বলা হয়েছে, সেই আলোকে আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ নিয়েছি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত তদন্ত করে অভিযোগের আসামী আব্দুল কাহির ও বাবুল আহমদের সম্পৃক্ততা না পেলে তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে এবং প্রকৃত ঘটনা আমরা উদ্ঘাটন করা হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়