নিউজ ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল শুক্রবার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর
নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ
হাসিনা। দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৩৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগকে
নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন।
এই দীর্ঘ সময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থেকে
নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কারাবরণ, জীবননাশের হুমকিসহ অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে
হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
অনেক চড়াই-উৎড়াই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন।
শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের ফলেই
আওয়ামী লীগ তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগের এই শাসন আমলেই
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নীত
হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে।
আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য
আয়ের দেশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যেই দেশ নিম্ন
-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার হাত দিয়েই বাংলাদেশে
তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে
যাচ্ছে। সম্প্রতি মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধ-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ
শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বেরই সফলতা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ
রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু শেখ হাসিনা ও শেখ
রেহানা তখন দেশে ফিরতে পারেননি। দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের
১৭ মে ভারত থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিপর্যস্থ হয়ে
পড়ে আওয়ামী লীগ। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন দলের
নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে।
দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে দল। এ পেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সেই
থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন এবং দলের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন।
সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে
তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় আরেক সংগ্রামী জীবন। দীর্ঘ
আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগকে আজকের
অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম
অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড়
অর্জনও বয়ে এনেছেন তিনি। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে
যাচ্ছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তিনিই দিয়েছেন। মানুষের আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নে তার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।
শুধু বাংলাদেশই নয় বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য
দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনার পরিধি বাড়ছে।
১৯৮১ সালে দেশের মাটিতে ফিরে এলে ঢাকায় লাখো
জনতা তাকে স্বাগত জানায়। এ সময় শেরে বাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখো জনতার
সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, “সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে
এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির
জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি
আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের
নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী
মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক
মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।”
এর পর থেকেই শুরু হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনার পথ চলা। তার নেতৃত্বে দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে
বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে
আন্দোলনে নামে।
তার নেতৃত্বে বর্তমানে টানা দ্বিতীয় বার
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। আর তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব
পালন করছেন। তিনি তিনবার বিরোধী দলের নেতাও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়