মিলন কান্তুি দাস:
শ্রদ্ধা ও আবেগে মিশ্রিত নামটি-বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। নামটি বিশেষনে বিশেষায়িত করলে অনেক কিছু বলা যায় ।যেমনঃপ্রবীণ জাতীয় রাজনীতিবিদ,উপমহাদেশের বর্ষীয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান,সংবিধান প্রণেতা ও বিশেষজ্ঞ,সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলের প্রেসিডিয়াম সদস্য,৯৬সালের ৭ম জাতীয় সংসদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
যার এতো এতো পরিচয়, এতো এতো বিস্তৃতি-তিনি আর কেউ নয়,তিনি আমাদের বৃহত্তর সিলেটের কৃতিসন্তান,মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি। যিনি দল মত নির্বিশেষে সিলেটের সকল মানুষের কাছে দাদা নামে পরিচিত ছিলেন।
স্কুল জীবনে শুধু এই বিখ্যাত ব্যাক্তিটির নামই কেবল শুনতাম।পত্রিকার পাতায় ছবি দেখতাম।অথচ কলেজ জীবনে যাবার পর বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে দেখার সৌভাগ্য অর্জনে খুব একটা সময় লাগেনি।বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত তখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্থ সহচর।
সেই সময় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থেকে নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন দিনের পর দিন,মাসের পর মাস,বছরের পর বছর পরিচালনা করেছে।সেই সময়ের আওয়ামীলীগ বলতে আমরা প্রথমেই বুঝতাম বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।তারপরেই আমরা যাদের বুঝতাম তারা হলেন-বর্ষীয়ান জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান,আব্দুর রাজ্জাক,আমির হোসেন আমু,তোফায়েল আহমদ,বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত,ঢাকার সাবেক মেয়র মোঃহানিফ,মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ।এরাই ছিলেন তখনকার সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চালিকাশক্তি।এদেশের গণমানুষের ন্যায্য দাবী সম্বলিত যৌক্তিক নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলাবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এরাই নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।এই জাতীয় নেতাদের নেতৃত্বেই সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন,বাংলাবান্ধা থেকে বান্দরবন পর্যন্ত মানবপ্রাচীর তৈরী হয়েছিলো।এই প্রমুখ জাতীয় নেতারাই ২১ আগস্ট গ্রেণেড হামলার দিনে মানববর্ম তৈরী করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবন বাচিয়েছিলেন।সেখানে তারা তাদের জীবনের মূল্যকে উপেক্ষা করেছিলেন প্রাণপ্রিয় নেত্রীর জীবন বাচানোর জন্য।আর এইসব প্রমুখ জাতীয় নেতার অন্যতম ছিলেন এই উপমহাদেশের বিশিষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান,সংবিধান বিশেষজ্ঞ,ছন্দময় বক্তব্যদানের কারুশিল্পী শ্রদ্ধেয় বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।
আমি সমগ্র বাংলাদেশের কথা বাদ দিয়েই দিলাম।শুধুমাত্র সিলেটের কথা চিন্তা করলে দেখা যায় যে,বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ছিলেন তার প্রিয় সিলেটবাসীর আস্থা,বিশ্বাস,ভালোবাসার এক অনন্য প্রতীক।সিলেটের আওয়ামী পরিবারের কাছে দাদা ছিলেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার এক বলিষ্ট চেতনার নাম।
বঙ্গবন্ধু কন্যা যেদিন বা যখন সমাবেশে আসতেন,তখন সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তব্য ছাড়া দ্বিতীয় যে বক্তব্যটির শোনার জন্য সাধারন জনগণ রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে অধীর আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করতো, সেই ব্যাক্তিটি সদ্য প্রয়াত বাবু শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বক্তব্য মানেই জনগণের নিরব চাহনীতে সরব উপস্থিতি।স্বয়ং শেখ হাসিনাও এই বক্তব্যটি অপলক দৃষ্টিতে শুনতেন ও প্রশংসা করতেন।তার বক্তব্যের মধ্যে ছিলো কাব্যিক ও রসাত্মক ছন্দ।জনগণ তার বক্তব্যের মধ্যে আত্মতৃপ্তি পেতো,কেউবা পেতো রাজনৈতিক চেতনা।সবমিলিয়ে জনগণের নেতা ছিলেন এই জননেতা।ছিলেন আজীবন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এক অনন্য রাজনীতির কবি।
সেই ব্যাক্তি গত ৫ ফেব্রুয়ারী সবাইকে কাদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।কেদেছে স্বদেশ,কেদেছে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠন,কেদেছে সিলেট,কেদেছে সুনামগঞ্জ।সেই অশ্রুজলের ধারা এখনো বহিছে।
পরিশেষে কবির ভাষায়,
মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে।
খবর বিভাগঃ
মতামত
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়