মহি উদ্দিন জাবের::
শাপলা-সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও পুষ্টির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। গ্রামের খাল-বিল, পুকুর কিংবা হাওরের পানিতে সকালবেলা দেখা মেলে জলে ভাসা এই শুভ্র রূপসীর। সাধারণ অথচ শুদ্ধ এই ফুলটি শুধু চোখের শান্তিই দেয় না, বরং বহুমাত্রিক গুরুত্বে ভাস্বর আমাদের জাতীয় জীবনে।
সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল হিসেবে পরিচিত। যদিও শাপলার রয়েছে নানান প্রজাতি ও রঙ-তবে শুধুমাত্র সাদা শাপলাই জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফুলও শাপলা, তবে তাদেরটি নীল রঙের, যাকে তারা ‘নীল মাহানেল’ নামে ডাকে।
শাপলা ফুল সাধারণত ভোরে ফোটে আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৫টি প্রজাতির শাপলা রয়েছে। এদের মধ্যে লাল, নীল ও সাদা রঙের শাপলা দেখা যায় আমাদের দেশে। বাংলা ভাষায় নীল শাপলাকে 'শালুক', লাল শাপলাকে 'রক্তকমল' বলা হয়। মনিপুরে শাপলা পরিচিত 'থারো আংগৌবা' নামে, আর তামিলে একে ডাকা হয় 'ভেলাম্বাল'।
বর্ষা ও শরৎকাল শাপলা ফোটার শ্রেষ্ঠ সময়। জলমগ্ন শাপলার পাতা আর তার মাঝখানে মাথা তুলে দাঁড়ানো ফুল যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে আঁকা এক জলছবি।
শাপলা শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি খাদ্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। শাপলার রাইজোম বা মূল, যাকে শালুক বলা হয়, দেখতে অনেকটা আলুর মতো। এটি কচি অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। শালুক হজমশক্তি বাড়ায়, ক্ষুধা নিবারণ করে এবং দেহে শক্তি জোগায়।
শাপলার ডাঁটাও জনপ্রিয় সবজি। এতে রয়েছে ফাইবার, পানি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া, চুলকানি ও রক্ত আমাশয়ের মতো কিছু রোগ নিরাময়ে শাপলা ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে।
শাপলা আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশের জলজ প্রকৃতির প্রতীক। শিশুর হাতের আঁকায়, কৃষকের চোখে বা শিল্পীর তুলিতে এই ফুল বারবার ফিরে আসে। এটি যেমন নান্দনিক, তেমনি উপযোগিতায় ভরপুর। শাপলার মতো একটি সাধারণ ফুল, মানব মনে কতটা গভীরভাবে ছুঁয়ে যেতে পারে-তা যে কেউই অনুভব করবে যখন তার সৌন্দর্য, খাদ্যমান এবং সাংস্কৃতিক আবেদন একসাথে চোখে পড়বে।
আজ যখন জলাভূমি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, তখন শাপলার অস্তিত্বও পড়ছে হুমকির মুখে। প্রয়োজন সচেতনতা, সংরক্ষণ এবং এই ফুলের ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়