Showing posts with label মতামত. Show all posts
Showing posts with label মতামত. Show all posts

Friday, November 7

 জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসঃ ঐক্যের স্মৃতি ও আজকের প্রেরণা

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসঃ ঐক্যের স্মৃতি ও আজকের প্রেরণা


মহি উদ্দিন জাবের::

আজ ৭ নভেম্বর,  জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। এটি একটি দিন যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের জন্য ঐক্য ও সংহতির অপরিসীম গুরুত্বের কথা। ১৯৭৫ সালের সংকটময় সময়ে দেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি কেবল নেতা নন, বরং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। তাঁর সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বে বিপ্লবের স্মৃতি সংহতির আলোয় রূপ নিল। এবং এক শক্তিশালী বার্তা দিলো, ঐক্যই সব সংকটের মোকাবেলায় দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি।

আজকের দিনে, যখন বাংলাদেশ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন জাতীয় সংহতি আগের চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, একতার শক্তি এবং সমষ্টিগত সাহসই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস শুধু অতীতের স্মৃতি নয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং দেশের স্বার্থে সংহতি বজায় রাখা।

জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের প্রেরণা আজও আমাদের পথপ্রদর্শক। বিপ্লবের স্মৃতি, সংহতির বার্তা, এবং একতার চেতনা- এই তিনটি উপাদানই আমাদের জাতিকে সংকটের মধ্যেেও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।


সাতই নভেম্বর ও পাঁচই আগষ্ট : একই বৃন্তে দু'টি কুসুম

সাতই নভেম্বর ও পাঁচই আগষ্ট : একই বৃন্তে দু'টি কুসুম


প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিন ::

সাতই নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী অধ্যায় সাতই নভেম্বর, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার মাইলস্টোন সাতই নভেম্বর, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নতুন বাঁক ও গতিধারা প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক ক্ষণ সাতই নভেম্বর এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দৃপ্ত অঙ্গীকারের চেতনা সাতই নভেম্বর। সাতই নভেম্বর বহুমুখী ঘটনা অনুঘটনার এক মহা-সম্মিলনের নাম।

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর দেশের মুক্তিকামী ও দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতা এক বিশাল পরিবর্তনের প্রত্যাশা লালন ও ধারণ করে রাস্তায় নেমে আসে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের অনুগত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে  অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জাতীর ইতিহাসের মোড় সঠিক ও কাংখিত পথে ঘুরিয়ে দিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতা ভারতীয় আধিপত্যবাদের সমস্ত ষড়যন্ত্রের নীল নকসা নস্যাৎ করে সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ঘুরে দাড়াঁনোর প্রত্যয় ঘোষণা করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের দেশবিরোধী ব্যর্থ অভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তাঁর নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দেশপ্রেমিক সিপাহী ও বীর জনতার পাল্টা প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের ফলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বন্দী দশা হতে মুক্তি লাভ করেন। একটি বিশৃংখল, অরাজক ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশকে সাম্য, সম্প্রীতি ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ধ্রুব তারকার মতো রাজনীতির Centre point এ আবির্ভূত হন। আর এভাবেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনতার জিয়াউর রহমানে পরিণত হন, পরিণত হন সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের রুপকার ও চালিকা শক্তি হিসাবে। পরবর্তী কালের ইতিহাস কেবলমাত্র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিজয় গাঁথা,  সাফল্য ও গৌরবজনক ইতিহাস। 

ইতিহাস, ঐতিহ্য, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও চেতনার দিক হতে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর ও ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট মিলিত হয়েছে একই মোহনায় এবং আগামী দিনের বাংলাদেশের এক অভিন্ন পথরেখা তৈরী করেছে। এই দু'টি অভ্যুত্থানের চেতনা ও উদ্দেশ্য এক, অভিন্ন ও একই সুত্রে গাঁথা। কিন্তু ভবিষ্যত বাংলাদেশের সামনের দিন গুলোতে রয়েছে হরেক রকমের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ। ঐ সমস্থ চ্যালেঞ্জ সমূহ অত্যন্ত সুকৌশলে, দক্ষতা ও পরিপক্বতার সাথে মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির সোপানে, স্বর্ণশিখরে।

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর এর অব্যবহিত পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন করে পথহারা বাংলাদেশের সঠিক নিশানা নির্ধারণ করে নির্মাণ সাধন করেছিলেন, ঠিক একই ভাবে ও একই কায়দায় জনাব তারেক রহমান সকল জাতীয় ও ভূ- রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে সামনের দিনগুলোতে নেতৃত্ব দিবেন। জনাব তারেক রহমান হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের একজন দক্ষ পাঞ্জেরী। পাহাড় সমান কঠিন কাজটি সুচারুরুপে সম্পন্ন করতে জনাব তারেক রহমান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর এ জন্যই জনাব তারেক রহমান Loudly and Clearly প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোন দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ। 

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের পর জনতার  জিয়াউর রহমান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশে যেভাবে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল, নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল, ঠিক একই ভাবে জনাব তারেক রহমান সাতই নভেম্বর ও পাঁচই আগষ্টের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে জনগণের কাংখিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করে ইতিহাসের মহানায়কের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হবেন- জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে সকলের প্রত্যাশা ও আকাংখা বোধ করি এখানেই। 


লেখক : প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিন 

সাবেক সহ-সভাপতি, যুক্তরাজ্য বিএনপি।

Thursday, October 9

নীরব সাধনায় দীপ্ত বাউল দেওয়ান কালা মিয়া

নীরব সাধনায় দীপ্ত বাউল দেওয়ান কালা মিয়া


✍️ মিলন কান্তি দাস:

বাউল সংগীত: আমাদের আত্মার সুর

সংগীতের একটি অনন্য শাখা হলো বাউল সংগীত-যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে নাড়া দেয়, আনন্দ ও শান্তিতে ভরিয়ে তোলে মনকে। বাংলাদেশ আউল-বাউলের দেশ; হাজার বছরের সংগীত সাধনায় এই মাটিতে গড়ে উঠেছে বাউল ঐতিহ্যের এক গভীর শেকড়।

বিশেষত সিলেট অঞ্চল বাউল ও মরমী সংগীতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। হাছন রাজা, রাধারমন দত্ত, শাহ আব্দুল করিম, ক্বারী আমীর উদ্দিন, শীতালং শাহ-এইসব কিংবদন্তিরা শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক সংগীত জগতেও উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিলেটের মাটি থেকে জন্ম নিয়েছেন আরও বহু বাউল, গীতিকার ও মরমী সাধক।

ধর্মপ্রাণ এই সিলেটের মাটিতে যেমন আধ্যাত্মিকতা, তেমনি মরমী সংগীতের প্রতিও রয়েছে মানুষের নিবিড় অনুরাগ।

কানাইঘাটের ধর্মপ্রাণ মাটিতে এক শিল্পীর জন্ম

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলা-ধর্মপ্রাণ ও রক্ষণশীল সমাজের জন্য সুপরিচিত। এখানে সংগীতচর্চার তেমন পারিবারিক উৎসাহ বা প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ না থাকলেও, এই মাটিতেই জন্ম নিয়েছেন এক অনন্য সংগীত সাধক-বাউল গীতিকার ও সুরকার দেওয়ান কালা মিয়া।


শৈশব ও শিক্ষা জীবন

কানাইঘাট পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৯ সালের ১১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন দেওয়ান কালা মিয়া। তাঁর পিতা মরহুম মাস্টার মুফজ্জিল আলী ছিলেন কানাইঘাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং মাতা মরহুমা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকেই কণ্ঠস্বর ছিল মধুর ও আকর্ষণীয়। বাড়ির পাশের শিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কানাইঘাটের দারুল উলুম দারুল হাদিস কৌমিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে শিবনগর ও কুওরের মাটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায়ও পড়াশোনা করেন। কিন্তু কৈশোরে পৌঁছেই সংগীতের প্রতি তাঁর টান ক্রমে গভীরতর হয়। লুকিয়ে লুকিয়ে গান গাওয়া, গান শোনা-এভাবেই বেড়ে ওঠে তাঁর আত্মার সাধনা।

সংগীতের পথে যাত্রা শুরু

মাত্র ১৮ বছর বয়সে সংগীতের আহ্বানে ছুটে যান সিলেটের বিশিষ্ট গীতিকার সিদ্দিক আলী সাহেবের কাছে। সিদ্দিক আলী তাঁর কণ্ঠে গান শুনে মুগ্ধ হলেও পিতা-মাতার সম্মতি ছাড়া শিষ্যত্ব দিতে রাজি হলেন না। তবু সংগীতপ্রেমী এই তরুণের মনকে কিছুই থামাতে পারল না। আত্মার তাড়নায় তিনি আবারও সিলেট শহরে যান, আশ্রয় নেন তৎকালীন বিখ্যাত বাউল ওস্তাদ ফিরোজ মিয়া-র কাছে। ফিরোজ মিয়া তাঁর কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। টানা সাত বছর ওস্তাদের সান্নিধ্যে থেকে দেওয়ান কালা মিয়া হয়ে ওঠেন এক পরিপূর্ণ বাউল শিল্পী।

সংগীত জীবনের উত্থান

ওস্তাদের শিক্ষা শেষে তাঁর সংগীতজীবন আর থেমে থাকেনি। নব্বইয়ের দশকে বাউল সংগীত সিলেটসহ সারাদেশে ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। শাহ আব্দুল করিম, ক্বারী আমীর উদ্দিন, অন্নদা রঞ্জন দাস, আব্দুল খালিক প্রমুখের সঙ্গে তিনি এক মঞ্চে গেয়েছেন বহুবার। ক্বারী আমীর উদ্দিন তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁর প্রেরণা ও সান্নিধ্যে দেওয়ান কালা মিয়া হয়ে ওঠেন সিলেট অঞ্চলের এক স্বনামধন্য বাউল শিল্পী। এরপর থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জসহ দেশের নানা স্থানে তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন। মানুষ মুগ্ধ হয়েছে তাঁর কণ্ঠে, মরমী সুরে ও গভীর গীতিতে।

৪০ বছরের সংগীত জীবনে তিনি অর্জন করেছেন মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও অগণিত প্রশংসা।

গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী হিসেবে উত্থান

দেওয়ান কালা মিয়া শুধু একজন শিল্পী নন-তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত সাধক। তাঁর গাওয়া গানগুলো বেশিরভাগই তাঁর নিজের লেখা ও সুর করা। বর্তমানে তাঁর দুই শতাধিক মৌলিক গান রয়েছে, যার বেশিরভাগই বাউল, মরমী, আধ্যাত্মিক ও দেশাত্মবোধক ধারার

🎵 জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান:

> “সুজলা সুফলা সবুজ শ্যামল

বাংলা মা, আমার প্রাণেরই প্রাণ

আমি বাংলা মায়েরই সন্তান…”

এই গানে মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা যেন প্রতিটি পঙক্তিতে অনুরণিত হয়েছে। এমন নিপুণ শব্দচয়ন কেবলমাত্র একজন প্রকৃত সংগীত সাধকের পক্ষেই সম্ভব।


🎶 সিলেট নিয়ে লেখা তাঁর জনপ্রিয় বাউল গান:


> “এই মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন শাহজালাল, শাহপরান

পূণ্যভূমি ধন্য আমি, সিলেট আমার জন্মস্থান।”


এই গানে তিনি সিলেটের প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতির চিত্রকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বর্তমান প্রজন্মের বহু শিল্পীই এই গান পরিবেশন করে থাকেন।

ব্যক্তিজীবন ও মানবিক চিন্তাধারা

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক সন্তানের জনক। ধর্মপ্রাণ এই শিল্পীর জীবনে নৈতিকতা, অধ্যবসায় ও বিনয়ই তাঁর পরিচয়। তিনি চান তাঁর সন্তান যেন একজন সৎ ও শিক্ষিত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে। শিক্ষক পিতা মরহুম মুফজ্জিল আলীর স্মৃতি তিনি আজও বয়ে বেড়ান। পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি শিক্ষকদের অবদান নিয়ে একাধিক গান রচনা করেছেন, যা ফেসবুক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দেওয়ান কালা মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বেতার, সিলেট-এর তালিকাভুক্ত শিল্পী। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের অডিশনেও অংশগ্রহণ করেছেন এবং শিগগিরই তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে তাঁর নাম যুক্ত হবে বলে আশা করছেন অনুরাগীরা।

বর্তমানে তাঁর ইচ্ছা-চার দশকের সাধনার ফলস্বরূপ সৃষ্টিগুলো পুস্তক আকারে প্রকাশ করা, যা বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সংরক্ষিত থাকবে। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

উপসংহার

দেওয়ান কালা মিয়া একজন অমিত প্রতিভাবান সংগীত সাধক-যিনি চার দশকের সংগীতচর্চায় নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। প্রচারবিমুখতার কারণে হয়তো তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি এখনো মেলেনি, তবে তাঁর শিল্পকর্মই তাঁকে অমর করে রাখবে।

বাঙালির চেতনা, মানবতা ও সংগীত ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে হলে দেওয়ান কালা মিয়ার মতো গুণী বাউল সাধকদের স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।কারণ, দেওয়ান কালা মিয়ার সংগীত বেঁচে থাকলে—বেঁচে থাকবে আমাদের বাঙালি চেতনা, সংস্কৃতি ও জাতীয় আত্মপরিচয়।

🖋️ লেখক: মিলন কান্তি দাস

(সাংবাদিক ও সাহিত্য অনুরাগী)

Wednesday, October 8

ক্যালিগ্রাফির আলো ছড়াচ্ছেন কানাইঘাটের দুই গুণী শিল্পী

ক্যালিগ্রাফির আলো ছড়াচ্ছেন কানাইঘাটের দুই গুণী শিল্পী


মিলন কান্তি দাস ::

ক্যালিগ্রাফি। আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি বিষয়, প্রিয় একটি শিল্প, প্রিয় একটি জগৎ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীল ও মননশীল মানুষেরা এই জগতের বাসিন্দা। ক্যালিগ্রাফি শিল্পে যারা শিল্পী হিসেবে কাজ করেন, তারা সত্যিই এক অনন্য উচ্চতার মানুষ। তাদের সৃজনশীলতা আমাকে অভিভূত করে। আমি সৃজনশীল মানুষকে গভীর শ্রদ্ধা করি-এই শ্রদ্ধা হৃদ্যতার, আন্তরিকতার।

এই পৃথিবীতে “সম্মান” একটি আবেগিক বিষয়-এক দুর্লভ সম্পদ, যা কখনও আর্থিক মূল্যে পরিমাপ করা যায় না। সম্মান কোনো বস্তু নয়, এটি মানুষের হৃদয় থেকে উৎসারিত অমূল্য অনুভূতি। ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা সেই সম্মানের মানুষ-যারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার অক্ষরকে নান্দনিক রূপে, শৈল্পিক প্রকাশে জীবন্ত করে তোলেন। এটি এক অনন্য সৃজনশীলতা, নৈপুণ্য ও নান্দনিকতার মেলবন্ধন।

যিনি ক্যালিগ্রাফি করেন, তিনি কেবল শিল্পী নন, তিনি একজন অনন্য মানুষ-সাধারণ আচ্ছাদনের ভেতর লুকিয়ে থাকা অসাধারণ এক সত্তা। তার পোশাকে, তার চলায়, তার বলায়-থাকে শৈল্পিকতার ছোঁয়া, মাধুর্য ও গাম্ভীর্য। একজন মানুষের এর চেয়ে সুন্দর গুণ আর কী হতে পারে?

আমার পরিচিত অনেক ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আছেন, যারা একই সাথে বহু বিষয়ে পারদর্শী। তাদের সৃজনশীলতা, শৈল্পিকতা ও মৌলিক কর্ম আমাকে প্রতিনিয়ত বিমুগ্ধ করে। তারা শুধু আমার নয়, সমাজেরও শ্রদ্ধা ও প্রশংসার পাত্র। তাদের অনেকেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।

আমার জন্মস্থান সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলা। এখানকার প্রান্তরজুড়ে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষের ভিড়ে কিছু অসাধারণ মানুষ-কিছু সৃজনশীল, শৈল্পিক ও মৌলিক প্রতিভা। ক্যালিগ্রাফি শিল্পেও রয়েছেন এমন কিছু সৃষ্টিশীল মনের মানুষ। আজ আমি সংক্ষেপে এমন দুইজন গুণী ক্যালিগ্রাফি শিল্পীর কথা উল্লেখ করতে চাই। এটি কেবল প্রশংসা বা বন্দনা নয়-এ আমাদের দায়বদ্ধতা, এক প্রয়াস বর্তমানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার ও তাদের অনুপ্রাণিত করার।

প্রথমজন চিত্রশিল্পী ভানু লাল দাস। তিনি কানাইঘাট পৌরসভার বিষ্ণুপুর গ্রামের সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে শিল্পচর্চায় নিজেকে নিবেদন করেন। চিত্রকর্মের পাশাপাশি ক্যালিগ্রাফিতেও তিনি অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে একক চিত্র ও ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন,এর মধ্যে সিলেটের কেমুসাসে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীটি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

একজন চারুকলার শিক্ষক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন সিলেটের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোমে কর্মরত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি একজন সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও সফল উদ্যোক্তা। তিনি “লাবণ্য সিতি ফাউন্ডেশন”-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়মিত এলাকার গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

দ্বিতীয়জন হলেন তরুণ শিক্ষক ও ক্যালিগ্রাফার জাহেদ হোসাইন রাহীন। তিনি কানাইঘাট উপজেলার ৮নং ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের তিনচটি গ্রামের বাসিন্দা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রাহীন একাধারে শিক্ষক, ক্যালিগ্রাফার, চিত্রশিল্পী, প্রচ্ছদ শিল্পী, ফুটবল রেফারি ও অনুষ্ঠান উপস্থাপক। এখন পর্যন্ত তিনি শতাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ নির্মাণ করেছেন, যার অনেকগুলোতেই নিজস্ব ক্যালিগ্রাফি যুক্ত করেছেন। তার সৃজনশীলতা ও নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একাধিকবার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।

পরিশেষে বলা যায়,ক্যালিগ্রাফি কেবল একটি শিল্প নয়, এটি এক উন্নত মননশীলতার প্রকাশ। যারা এই শিল্পচর্চা করেন, তারা নন্দন ও আদর্শ জীবনদর্শনের অনুগামী। কানাইঘাটে এমন আরও অনেক ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আছেন, যাদের প্রত্যেকেই শ্রদ্ধা ও প্রশংসার যোগ্য। সময়ের সীমাবদ্ধতায় সকলের নাম উল্লেখ করা সম্ভব হলো না, তবুও আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সবার জন্য সমানভাবে নিবেদিত।

তাদের সৃষ্টিশীল কর্মে উজ্জ্বল হয়ে উঠুক কানাইঘাট, বিকশিত হোক এই মননশীল শিল্পের চর্চা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়-এই কামনাই রইল।

লেখকঃ মিলন কান্তি দাস,কবি, কলামিস্ট ও গীতিকার

Thursday, August 28

গৌরব, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ৪৭ বছর : দেশ পুনর্গঠনে তারেক রহমানের মিশন ও ভিশন

গৌরব, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ৪৭ বছর : দেশ পুনর্গঠনে তারেক রহমানের মিশন ও ভিশন

 


প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিন ::

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ( বিএনপি'র ) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পহেলা সেপ্টেম্বর। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের রাজনীতির এক মাহেন্দ্রক্ষণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দেশপ্রেম, কর্মকৌশল, নীতি, আদর্শ, দূরদর্শিতা ও ক্ষিপ্রতা সর্বোপরি দেশের প্রতিটি প্রান্তে, কোণে, গ্রাম-গঞ্জে, শহরে, বন্দরে দূর্দান্ত বিচরণের নির্যাস স্বরূপ বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিএনপি আবাল বৃদ্ধ বণিতা তথা সারা দেশ ব্যাপী সর্বস্তরের শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়। বাংলাদেশের জনগণের আর্থ - সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের ম্যাগনাকার্টা হিসাবে স্বীকৃত ১৯ দফার ভিত্তিতে গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচীর সুবাদে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি'র গগণচুম্বী জনপ্রিয়তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিস্তৃতি লাভ করে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর দেশের জনসাধারণের আশা আকাংখা পূরণে তৎকালীন সরকার নজিরবিহীন ভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু জিয়াউর রহমান ও বিএনপি'র নেতৃত্বে সারা দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভাবে  আশা সঞ্চারিত হয় এবং জনসাধারণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির এক অনুপম মহা সম্মিলন ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে শুরু করে অদ্যাবধি বিএনপি'র ঐতিহাসিক ভূমিকা ও গণমূখী কর্মসূচীর কারণে বিএনপি একটি জনপ্রিয় ও সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

একটি জনবান্ধব দল হিসাবে বিএনপি বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে অসাধারণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন  করে। জনগণের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বিএনপি  বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি টার্নিং পয়েন্টে দেশপ্রেমিক ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন না করলে ইতিহাসের গতি প্রকৃতি ভিন্ন ভাবে রচিত হতে পারতো। বাংলাদেশের ইতিহাসের উল্লেখ যোগ্য ও ঐতিহাসিক তিনটি অধ্যায় হলো- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা বিরোধী ঐতিহাসিক ছাত্র - জনতার গণঅভ্যুত্থান।  এই তিনটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সাথে বিএনপি ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং আন্দোলন সংগ্রামে বীর সিপাহশালার ভূমিকা পালন করে। এমন গর্বিত ইতিহাস বিএনপি ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের নেই।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, সেক্টর কমান্ডার ও বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরাঙ্গণা নারী এবং জনাব তারেক রহমান একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি মূলত প্রধান, অগ্রগণ্য ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফ্যাসীবাদী শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে বিএনপিই ছিল মূল চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রতিটি ঘটনা অনুঘটনার সাথে বিএনপি'র সম্পৃক্ততা ও ভূমিকা দেশ বিদেশে স্বীকৃতি ও প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।

সন্দেহ নেই, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের জনসাধারণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছে যে,  সুদীর্ঘকাল পর ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সরকার ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে - যা সত্যিকার অর্থে আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত দর্শন - Government of the people, for the people and by the people এর বাস্তব রুপায়ন ঘটবে। 

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে হরেক রকম কর্মসূচী ও অঙ্গীকার দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন প্রতিনিয়ত করে চলছেন। জনাব তারেক রহমান জনগণের শক্তিতে আস্থাশীল। আর এ জন্যই দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর নির্দেশনা,  জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সাথে রাখুন। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। এই বাংলাদেশ কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা দলের নয়। এই বাংলাদেশ আমাদের সকলের। এই বাংলাদেশ আমাদের সবার। সবার আগে বাংলাদেশ। 

একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাষ্ট্র কাঠামো পুর্নগঠন ও সংস্কারের ভিত্তি হিসাবে ৩১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে - যা বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার জনসাধারণের General will ও আশা আকাংখার প্রতিফলন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন ১৯ দফার ভিত্তিতে পথ হারা বাংলাদেশের পুর্নগঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, ঠিক একই ভাবে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে ৩১ দফার আলোকে ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও কাঠামো পুর্নগঠন করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে - যার নেতৃত্ব প্রদান করবেন জনাব তারেক রহমান। সময়ের প্রয়োজনে ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ৩১ দফার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হতে পারে।

বিএনপি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ও যুগোপযোগী করার নিমিত্তে সূদুর প্রসারী ও বৈপ্লবিক পরিকল্পনা  গ্রহণ করে। Traditional বা গতানুগতিক ধারার পরিবর্তন সাধন করে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, কারিগরি ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য জনাব তারেক রহমান দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রুপান্তর করার জন্য জনাব তারেক রহমান এর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে স্কুল পর্যায় হতে শিক্ষা কারিকুলামের মধ্যে ICT ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। জনাব তারেক রহমান কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় আনা হবে। দেশের ও প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবি ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে- যার মূল লক্ষ্য হবে - প্রাথমিক পর্যায় হতে বহুভাষা, ক্রীড়া, কৃষি এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নয়ন সহ ব্যবহারিক  বিষয় সমূহ শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় Electricians, Mechanics, Dental hygenist, Medical Technician  ইত্যাদি স্বল্প মেয়াদী Trade course চালু করা হবে।

জনাব তারেক রহমান এর পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করতে এপ্রেন্টিসশিপ, ইন্টার্নশিপ এবং ইন্ডাস্ট্রি - একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে বিভাগীয় শহর গুলোতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন করা হবে। ফলে শিক্ষার্থীগণ হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করার পাশাপাশি কর্মজীবনে ব্যাপকহারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে। জেলা পর্যায়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ইনোভেটিভ বিজনেস আইডিয়া বাণিজ্যিকীকরণ করতে প্রতিযোগিতা মূলক প্রক্রিয়ায় Seed Funding  ইনোভেশন গ্রান্ট প্রদান করা হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্যম্পাস হতে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা তৈরি করা। ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাগণ নতুন ও সৃজনশীল ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন।

শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মতো পরিকল্পনা স্বাস্থ্য খাতে ও গ্রহণ করেন জনাব তারেক রহমান। বৃটেনের NHS এর মতো করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার রয়েছে জনাব তারেক রহমান এর। সুদীর্ঘ কাল লন্ডন অবস্থান করার সুবাদে নিজস্ব অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা জনাব তারেক রহমান এর রয়েছে। রোগ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে টিকাদান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরির একাধিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, স্যানিটেশন এবং পুষ্টির উপর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য Specialised Training Scheme শুরু করা হবে। তারা রোগের দ্রুত সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে দক্ষ হয়ে উঠবেন। নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য আধুনিক পরিশোধন ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার জন্য পর্যায়ক্রমে দেশ ব্যাপী রিসার্ভার তৈরি করা হবে। আর তখনই প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ নিরাপদ পানি পান করার সুযোগ পাবে।

জনাব তারেক রহমান দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন- রাজনীতিতে ভিন্নতা থাকবে এবং ভিন্ন মত হলো রাজনীতির সৌন্দর্য। বিএনপি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহমর্মিতায় বিশ্বাস করে। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে অনগ্রসর রেখে জাতি হিসাবে সার্বিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। নারী অধিকার ও নারী সচেতনতার উপর জনাব তারেক রহমান খুবই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। নারীদের স্বয়ং সম্পূর্ণ ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা খুবই জরুরী। বিএনপি  সরকার পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ প্রান্তিক পরিবারের মধ্যে Family card চালু করা হবে। নারীদের এই Family card এর প্রধান করা হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজন বোধে প্রান্তিক পরিবার সমূহের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারী উদ্যোগে গ্রহণ করা হবে।

Environmental issues শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় বরং এটি একটি Global Challenging  issue। বিশ্বের উন্নত দেশ গুলো এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ কমপক্ষে বনায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশে খুব সম্ভবত ১৭ ভাগ এর কাছাকাছি, যা কোন ভাবেই মঙ্গলজনক হতে পারেনা। জনাব তারেক রহমান বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা  করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও সংরক্ষণ এর উপর জোর দিয়ে দেশে বনায়ন বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আর এ জন্য জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি জনাব তারেক রহমান ঘোষণা করেন- বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৫ বছরে কমপক্ষে ২৫ কোটি গাছ লাগানো হবে এবং  সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক জীবন মান বৃদ্ধি, সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ও টেকসই করার জন্য বিএনপি বদ্ধ পরিকর। বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে এ ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আধুনিক  বিশ্ব ব্যবস্থায় Global Challenge মোকাবেলা করে সকল রাষ্ট্রের সাথে পারষ্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা, পারষ্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যু সমূহ আলাপ আলোচনা ও বোঝা পড়ার মাধ্যমে সামাধান করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই বিএনপি'র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের ক্রীড়া, সাহিত্য, Arts ও Culture এর সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে বিএনপি অঙ্গীকারাবদ্ধ। 

বিকএনপি একটি কৃষি ও কৃষক বান্ধব রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের কৃষি  অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ, গতিশীল ও আধুনিকায়ন  করার জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণে বিএনপি অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশে তৈরী বিভিন্ন রকমের  পণ্য সামগ্রী বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে তৈরী পণ্য সামগ্রী Online Market এ কেনা বেচার সুযোগ তৈরীর জন্য বিএনপি'র বাস্তব ভিত্তিক ও প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ বিএনপি গ্রহণ করবে। Amazon, Alibaba, eBay ইত্যাদি বিশ্ব খ্যাত online  E - Commerce platform ব্যবহার করার কার্যকর  উদ্যোগ গ্রহণ করবে বিএনপি। ঐ সমস্ত প্লাটফর্মে বাংলাদেশে তৈরী পণ্য সামগ্রী কেনা বেচা করার উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা অনেক গতিশীল ও সমৃদ্ধ হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরী করার ফলে অর্থনীতির চাকা যেমন সচল হবে, ঠিক তেমনি বেকার সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নের কারিগর ও নির্মাতা হবে বিএনপি। 

জনাব তারেক রহমান এর ঘোষণা - রাজনীতির মূল শক্তি জনগণ এবং জনগণের সাহস হলো বিএনপি। সরাসরি ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার চর্চা জনগণকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, কিংবা কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রচলিত রাজনীতির ধারার গুণগত পরিবর্তন করতে হবে। জবাবদিহি মূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আইনের শাসন ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে- যা বিএনপি'র অন্যতম প্রধান স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। 

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধ শতাব্দী অতিক্রান্ত হবার পরও জাতি হিসেবে আমরা কাংখিত লক্ষ্য - উদ্দেশ্য, অগ্রগতি ও সফলতা অর্জন করতে পারিনি। যখনই বাংলাদেশ একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, ঠিক তখনই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ফলে জাতি হিসাবে হোঁচট খেয়েছি, পথ হারা ও পথভ্রষ্ট হয়েছি। ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসীবাদী শেখ হাসিনার পতনে  আবারো সুবর্ণ সুযোগের হাতছানি। দেশের অগ্রগতি, উন্নয়নের সুযোগ ও সোনালী সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর এখনই উপযুক্ত সময়। জাতি হিসাবে আমরা  যদি আবারো কোন ঐতিহাসিক ভুল করি, তাহলে এর খেসারত চড়াদামে শোধ করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে বিএনপি কর্তৃক গৃহীত সকল পরিকল্পনা ও জাতিকে দেয়া Committment বা প্রতিশ্রুতি সমূহ পূরণে বিএনপি'র দায়বদ্ধতা জাতির কাছে অবশ্যই থাকবে। আর তখনই সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম ও জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। আর এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধনকে কেন্দ্র করেই বিএনপি'র রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। সকল বাঁধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান ও উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনাব তারেক রহমান সর্বদা প্রস্তুত।

Yes, Certainly জনাব তারেক রহমান প্রস্তুত, আপনি প্রস্তুত তো ?


লেখক: প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি, যুক্তরাজ্য বিএনপি।