Saturday, May 25

লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও আমল

ইমরান চৌধুরী::
লাইলাতুল কদর আরবী যৌগিক শব্দ । লাইলাতুন শব্দের অর্থ হল-রজনী। আর আল-কদর অর্থ হল-মর্যাদা, মহিমাময়, ভাগ্য, সম্মান, পরিমাণ ইত্যাদি। তাই লাইলাতুল কদর এর যৌগিক অর্থ দাঁড়াল, কদরের রাত, ভাগ্যের রজনী, মহিমাময় রাত, পরিমাপের রাত ইত্যাদি।
এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয় এজন্য যে, এ রাতে ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। এ রাতেই রাসুল সা.এর উপর সর্বপ্রথম কোরআন অবতীর্ণ হয়ছে। আর কোরআন হচ্ছে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ।  কোরআনের ছোঁয়ায় এ রাত মহিমাময় ও মর্যাদা মণ্ডিত হয়েগেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।( সুরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
তাছাড়া এ রাতের মর্যাদা এত বেশি যে, কদর নামে কোরআনে কারিমে স্বতন্ত্র একটি সুরা রয়েছে এবং তাতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। মাহে রামাযানের এ রাতেই ওহী নাযিল শুরু হয় এবং দীর্ঘ ২৩ বছরে প্রয়োজনানুসারে পর্যায়ক্রমে পুরো ৩০ পারা কোরআন অবতীর্ণ হয়।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি কদরের রাতে কোরআন অবতীর্ণ করেছি।(সুরাতুল কদর- আয়াত ১)
লাইলাতুল কদর কখন? শবে কদর বা লাইলাতুল কদর কখন কোন রাত্রে অনুষ্ঠিত হয় তা নিয়ে উম্মতের বিজ্ঞজনের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। মুহাদ্দিস হযরাত ও মুফাসসিরদের মতামত জানার পূর্বে আমরা এ সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পারি যে, কোরআন অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছে মাহে রামাযানে। আবার পবিত্র কোরআনের সুরাতুল কদরে এ কথাও স্পষ্ট আছে যে, লাইলাতুল কদরে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। কাজেই আমরা বলতে পারি যে লাইলাতুল কদর মাহে রামাযানের একটি রাত। তবে হানাফী মাজহাবের কেউ কেউ কদরের রাত সারা বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছেন।
লাইলাতুল কদর কখন বা কোন রাতে অনুষ্ঠিত হয় এব্যাপারে কোরআনে স্পষ্ট কোন উল্লেখ নেই। তাছাড়া হাদীসে বিভিন্ন বর্ণনায় একাধিক বিপরীতমুখী বক্তব্য বিদ্যমান। ফলে তা নির্ধারণ করা নিয়ে ইমামগণের মাঝে এখতেলাফ রয়েছে। এ বিষয়ে চল্লিশেরও বেশি মতামত পাওয়া যায়। নিম্নে কয়েকটি মতামত তোলে ধরা হল।

(১) শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী বলেন, লাইলাতুল কদর দু’টি। একটি হচ্ছে শাবান মাসের পনের তারিখ। অপরটি হচ্ছে রামাযানের শেষ দশকের কোন এক রাত।
(২) হযরত ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস এবং হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ফকীহ কাযীখান গ্রন্থকার আল্লামা ফখরুদ্দীন আবুল মুফাখির আল-কারিগিনী প্রমুখ হতে বর্ণীত আছে যে, কদরের রাত সারা বছরে মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়।
(৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের মতে কদরের রাত মাহে রামাযানের সাথে সম্পৃক্ত। রামাযানের সারা মাসেই তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৪) হযরত যায়েদ বিন আকরাম,ইবনে মাসউদ ও ইমাম আবু দাউদ রহ এর মতে কদরের রাত মাহে রামাযানের ১৭তম রাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
(৫) ইমাম শাফেয়ী এর মতে রামাযানের ২১তম রাতই হচ্ছে কদরের রাত।
(৬)আবু শাইবা সহীহ সনদে মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণা করেন যে, কদরের রাত রামাযানের ত্রয়োবিংশতম রাত।
(৭) ইবনে মাসউদ, কাতাদাহ, শা’বী ও হাসান বসরী থেকে বর্ণীত আছে যে, কদরের রাত ২৪ রামাযান রাতে অনুষ্ঠিত হয়।
(৮)হযরত আয়শা রাজি. থেকে বর্ণীত আছে যে, কদরের রাত মাহে রামাযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতসমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
(৯) কারো মতে কদরের রাত রামাযানের ২৫ কিংবা ২৯ তারিখে হতে পারে। তবে প্রত্যেক বছর যে একই তারিখে হবে তা নিশ্চিত নয়।
(৯) ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ ও অধিকাংশ বুজুর্গ মনীষার মতে কদরের রাত রামাযানের ২৭ তারিখ রাত। তারা যুক্তি পেশ করেন এভাবে যে, সুরাতুল কদরে “লাইলাতুল কদর” বাক্যটি তিনবার এসেছে। আর লাইলাতুল কদর লিখতে ৯টি অক্ষরের প্রয়োজন। অতএব ৯কে ৩দ্বারা গুন করলে সাতাশই হবে। তাই সাতাশ তারিখ রাতই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
(আনওয়ারুল মিশকাত ৩/৩৬২)

হাদীসের দৃষ্টিতে লাইলাতুল কদরঃ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদীসে বিভিন্ন মতামত বর্ণিত আছে।  নিম্নে কয়েকটি হাদীসের সরল অনুবাদ তোলে ধরা হল:
(১) হযর ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণীত। তিনি বলেন, রাসুল সা. এর সাহাবীদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখানো হল যে, কদরের রাত শেষের সাত রাতের মধ্যে। তখন রাসুল স. বললেন, আমি তোমাদের স্বপ্নসমূহ একই রকম শেষ সাত রাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ দেখেছি। সুতরাং যে তালাশ করে সে যেন (রামাযানের) শেষ সাত রাতে তালাশ করে। (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত-হাদীস নং ১৯৮৪)
(২) হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণীত। তিনি বলেন নবী সা. বলেছেন, তোমরা লাইলাতুল কদরকে রামাযানের শেষ দশকে-মাসের নয় দিন বাকি থাকতে, সাত দিন বাকি থাকতে এবং পাঁচ দিন বাকি থাকতে তালাশ করবে। (বুখারী, মিশকাত-হাদীস নং ১৯৮৫)
(৩) হযরত যির বিন হুবাইশ থেকে বর্ণীত।
তিনি বলেন, একদা আমি উবাই বিন কা’ব রা.জিজ্ঞেস করে বল্লাম যে আপনার ভাই ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করবে সে কদরের রাত পাবে। উবাই বিন কা’ব বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। তিনি এর দ্বারা ইচ্ছা করেছেন যেন লোকজন এর উপর নির্ভর করে না থাকে। অবশ্যই তিনি জেনেছেন  তা রামাযান মাসে এবং তা রামাযানের শেষ দশকের সাতাশতম রাতে। অতঃপর তিনি ইনশাআল্লাহ না বলে দৃঢ়ভাবে শপথ করে বলেন যে, নিশ্চয় তা রামাযানের সাতাশ তারিখ। তখন আমি বললাম, হে আবু মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলেন?তিনি বলেন, রাসুল সা.আমাদেরকে যে চিহ্ন বা নিদর্শন বলে দিয়েছেন তার ভিত্তিতে। (তা এই যে) ঐ দিন (প্রভাতে) সূর্যোদয় হবে তবে তার কিরণ থাকবে না।
(মুসলিম, মিশকাত-হাদীস নং১৯৮৭)
(৪) হযরত আবু বকরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল সা.-কে বলতে শুনেছি-তোমরা লাইলাতুল কদরকে রামাযানের নয় রাত বাকি থাকতে, অথবা সাত রাত বাকি থাকতে, অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে কিংবা তিনরাত বাকি থাকতে অথবা রামাযানের শেষ রাত্রে তালাশ করবে। (তিরিমিযি, মিশকাত-হাদীস নং ১৯৯১)
(৫) হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা রাসুল সা.-কে কদরের রাত্রি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, তা প্রত্যেক রামাযানেই রয়েছে।
(আবু দাউদ, মিশকাত-হাদীস নং ১৯৯২)
উল্লিখিত হাদীসগুলোতে দেখা যাচ্ছে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বিপরীতমুখী বক্তব্য বিদ্যমান। তাই আমরা কোনো নির্ধারিত রাতকে লাইলাতুল কদর বলে ধার্য করতে অপরাগ। হাদীসের ভিন্নতার ফলে একাধিক মতামত থেকে আমরা নির্দিষ্টভাবে কোনো এক রাতকে লাইলাতুল কদর বলে নির্ধারণ করতে পারছি না। তবে এ কথা বলা যায় যে, লাইলাতুল কদর রামাযান মাসে এবং শেষ দশকে হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের একধরণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
যদিও সাতাশ তারিখের ব্যাপারে বুজুর্গানে কেরাম প্রাধান্য দিয়ে থাকেন যুক্তির মাধ্যমে। বস্তুত সাতাশ তারিখ রাতে নাও হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসকে মূল হিসেবে ধরে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করাটাই হবে সত্যের কাছাকাছি। হযরত আয়শা রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন,  তোমরা রামাযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করবে। (বুখারী, মিশকাত-হাদীস নং ১৯৮৩) আর শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো হচ্ছে ২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯ তারিখ।
লাইলাতুল কদর নির্দিষ্টভাবে না জানানোর কারণঃ আল্লাহ তা’লা রাসুল সা.-কে ওহীর মাধ্যমে লাইলাতুল কদর নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তা রাসুল সা. এর অন্তর থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ মর্মে হযরত উবাদা বিন সামিত রা. থেকে বুখারী শরীফে হাদীস রয়েছে।
তিনি বলেন, একদা রাসুল সা. আমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে সংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। এ সময় মুসলমানদের দুই ব্যক্তি পরস্পরে ঝগড়া করছিল। তখন রাসুল সা. বলেন, আমি বের হয়েছিলাম তোমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য। কিন্তু অমুক আর অমুকের ঝগড়ার তার পরিচিতি (আমার অন্তর থেকে) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সম্ভবত এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। সুতরাং তোমরা তা ঊনত্রিশ, সাতাশ ও পঁচিশ তারিখ রাতে তালাশ করবে। (মিশকাত-হাদীস নং ১৯৯৪)
অত্র হাদীস থেকে জানাগেল যে, কদরের রাতকে অনির্ধারিত করা হয়েছে আমাদের কল্যাণের জন্য। কেননা যদি নির্ধারণ করা হয়ে যেত তবে আমরা কদরের রাতের উপর নির্ভর করে ইবাদাত বন্দেগী থেকে হাত ঘুটিয়ে নিতাম।
মূলত ঝগড়া হয়েছিল হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি হাদরাদ এবং কা’ব বিন মালিকের মাঝে। ঘটনাটি এই যে, আব্দুল্লাহ বিন আবি হাদরাদ রা. থেকে হযরত কা’ব বিন মালিক রা. কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু কোন কারণবশত তা নির্ধারিত তারিখে পরিশোধ করতে অক্ষম হলে উভয়ের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়ে যায়। রাসুল সা. ঘটনাটি শুনে হযর‍ত আব্দুল্লাহ বিন আবি হাদরাকে কিছু টাকা ক্ষমা করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। রাসুল সা. এর নির্দেশ মোতাবিক তিনি তা করলেন।  রাসুল সা. তাদের উভয়কে ঝগড়া করতে দেখে মিমাংসা করতে গেলে তার অন্তর থেকে উম্মতের কল্যাণের লক্ষ্যেই কদরের ণির্দিষ্ট তারিখ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। উঠিয়ে নেওয়ার কারণ হিসেবে রাসুল সা. বললেন, কল্যাণের লক্ষ্যে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। বস্তুত উঠিয়ে নেওয়াই হচ্ছে আমাদের জন্য কল্যাণকর।
লাইলাতুল কদরের নিদর্শনঃ বিভিন্ন হাদীসের আলোকে লাইলাতুল কদর চেনার কয়েকটি কিছু নিদর্শন স্থির করা হয়েছে। ক. সেদিন সূর্যের কিরণ কমে যাবে। খ. অথবা ঐ রাতের ঔজ্জ্বল্য সূর্যের আলোকে হার মানাবে। গ. ইবনে হাজার বলেন,  ঐ রাতে প্রতিটি বস্তুকে সেজদারত দেখা যাবে। ঘ. অথবা সে রাতে সচরাচর অন্ধকার থাকা স্থানগুলোকে আলোকিত দেখা যাবে। ঙ. অথবা সে রাতে ফেরেশতাদের সালাম শোনা যাবে। চ.দোয়া কবুল হবে। ছ. অথবা ঐ রাতে যেকোনো আমল বিশেষত কোরআন তেলাওয়ার করতে অন্তরে প্রশান্তি অনুভূত হবে। জ. ঐ দিন বৃষ্টি হবে অথবা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে।  তবে মুহেব্ব তিবরীসহ কেউ কেউ বলেন, কদরের রাত হওয়ার জন্য কোন প্রকার নিদর্শন আবশ্যক নয়।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা:
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা অপরিসীম। কোরআনে কারিমে এ মর্মে বলা হয়েছে ” লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম” (সুরা আল-কদর- আয়াত নং ৩)
-এ আয়াত থেকে জানা গেল যে কদরের রাতের আমল হাজার মাসের আমলের চেয়ে উত্তম।
-এ রাতে কোরআন অবতরণ শুরু হয়। কোরআন মর্যাদাময় কিতাব। কোরআনের ছোঁয়ায় রাতটি হয়েছে মর্যাদাময়। আল্লাহ বলেন, রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।’ (সুরা বাকারা- আয়াত: ১৮৫)।
-এ রাতে হযরত জিবরিল আ. এবং ফেরেশতাগণ যমিনে নেমে আসেন শান্তির বার্তা নিয়ে।
-এ রাতে ফেরেশতাগণ ইবাদাতরত বান্দাদের জন্য দুরূদ পাঠ করেন। হাদীসে এসেছে কদরের রাতে জিবরিল আ. ফেরেশতাদের দল নিয়ে দুনিয়াতে অবতরণ করেন এবং আল্লাহর এমন বান্দাদের জন্য দোয়া করেন যারা দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহর জিকির করতে থাকেন। (মিশকাত-হাদীস নং ১৯৯৫)
– এটা শান্তি বর্ষণের রাত। এ রাতে ইবাদত গুজার বান্দাদেরকে ফেরেশতারা ফজর পর্যন্ত শান্তির বাণী শোনান এবং ফজরতক শান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে।
– এ রাতের ফাযীলত বর্ণনায় একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়। যার নাম সূরা কদর।
– এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগীরা গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়। রাসূল সা. বলেন,
“যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে জেগে ইবাদত বন্দেগী করবে তার ইতোপূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (বুখারী১৮০২,  মুসলিম- হাদীস নং ৭৬০)
– এটি এমন একটি রাত, যে রাতে সৃষ্টজীবের পূর্ণ এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেক প্রাণির পানাহার, জীবিকাসহ সর্বপ্রকার কাজ-কর্ম নির্ধারণ করা হয় বলে এই রাতকে লাইলাতুল কদর বা পরিমাপ নির্ধারণী রাত বলা হয়।আল্লাহ বলেন, হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি কোরআন এক মুবারকময় রজনীতে অবর্তীণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সুরা: আদ দুখান, আয়াত: ১-৪)
শবে কদরের আমলসমূহ : কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাহিয়্যাতুল ওজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ,সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল এবাদত করা।  মহিমাময় এ রাতকে পাওয়ার আশায় রামাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা। হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা.রামাযানের শেষ দশকে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত  ইতিকাফ করতেন এবং তার পর  তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন। (বুখারী, মিশকাত-হাদীস নং ১৯৯৬)
তাছাড়া একবার হযর‍ত আয়শা রা. শবে কদরের রাত পেলে কি বলে দোয়া করবেন জানতে চাইলে রাসুল সা. বললেন,  তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি। সর্বোপরি সকল মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা।
আল্লাহ আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের মর্যাদা দানের পাশাপাশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন।
লেখক-শিক্ষক, ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

2 comments:

  1. ধন্যবাদ সম্পাদক মাহবুবুর রশীদ ভাইকে। যিনি ফেবু লিস্টে না থেকেও আড়াল থেকে আমাকে লেখালেখি করতে সহায়তা করছেন।

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ সম্পাদক মাহবুর রশীদ ভাইকে। যিনি আমার ফেবু লিস্টের বাইরে থেকে আড়াল থেকেও আমাকে সহায়তা করছেন।

    ReplyDelete

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়