Wednesday, October 29

হিজরি নববর্ষে জীবনের হিসাব নিন


ড. হুসাইন বিন আবদুল আজিজ আলে শায়খ:হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছেন, 'তুমি দুনিয়ায় মুসাফির অথবা পথিকের মতো জীবন যাপন করো।' ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, 'তুমি সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার অপেক্ষা কর না এবং সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকাল পর্যন্ত জীবিত থাকার অপেক্ষা কর না। আর সুস্থ থাকা অবস্থায় অসুস্থ সময়ের জন্য আমল করে নাও এবং জীবন থাকতে মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের পুঁজি সংগ্রহ কর।' (সহিহ বোখারি)। জীবনের মূল্যবান সময়টাকে হেলায়-খেলায় কাটিয়ে দিলে পরজগতে আক্ষেপের সীমা থাকবে না। আল কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'সেখানে তারা আর্তচিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের আবার দুনিয়ায় পাঠান। আগে যা করেছি তা আর করবো না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদের এতটা সময় দেইনি, যাতে উপদেশ গ্রহণ করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আজাব আস্বাদন করো। জালেমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।' (সূরা ফাতির : ৩৭)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি ৬০ বছর হায়াত পেল কিন্তু পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করেনি আল্লাহ পাক তার কোনো ওজর-আপত্তি কবুল করবেন না।' (সহিহ বোখারি : ৬৪১৯)। সুতরাং এ জগতেই জীবনের হিসাব নেয়া এবং পরজীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করা অপরিহার্য কর্তব্য। হজরত ওমর (রা.) বলেন, 'পরকালে জীবনের হিসাবের মুখোমুখি হওয়ার আগে ইহজগতে তার হিসাব লও। এবং মিজানের পাল্লায় জীবনের আমল পরিমাপের আগে নিজেরা মেপে নাও।' কেননা এ জীবন আল্লাহ পাকের আমানত। পরকালে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নেয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।' (সূরা জিলজাল : ৮)। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, 'বিচার দিবসে প্রত্যেককে চারটি প্রশ্ন করা হবে। ১. জীবন সম্পর্কে; তা কোন কাজে ব্যয় করা হয়েছে। ২. যৌবন সম্পর্কে; তা কীভাবে কাটানো হয়েছে। ৩. ধন-সম্পদের ব্যাপারে; কীভাবে তা উপার্জন করা হয়েছে এবং কোন পথে ব্যয় করা হয়েছে। ৪. ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করা হয়েছে।' (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে এসেছে, পাঁচটি জিনিসকে অপর পাঁচটি জিনিসের আগে কদর কর। ১. বার্ধক্যের আগে যৌবনকে। ২. অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে। ৩. সচ্ছলতাকে অসচ্ছলতার আগে। ৪. অবসর সময় কাটানোর আগে। ৫. জীবনে মৃত্যু আসার আগে। (মুস্তাদরাকে হাকিম)। মানুষের জীবন বহতা নদীর মতোই চলমান। সময়ের চাকা ঘুরেই মাস-বছরের আবর্তন-বিবর্তন হয়। সুতরাং জিন্দেগি ও বন্দেগি উভয়ই সময়কেন্দ্রিক। নতুন বছরের আগমনে আমাদের জিন্দেগি যেন বন্দেগিওয়ালা হয় এবং ইবাদতের পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়, সে চেষ্টা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে দীর্ঘ হায়াত পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে।' (তাফসিরে ইবনে কাসির)। আমাদের জীবন থেকে আরও একটি বছর বিদায় নিল। বিগত বছরটি আমাদের কেমন গেল তার হিসাব কষতে হবে। নতুন বছরে মানুষ বৈষয়িক জীবনের হিসাব-নিকাশ কষে। লাভ-লোকসানের খতিয়ান তৈরি করে। কিন্তু পরজীবনের হিসাব-নিকাশে বড় উদাসীন। পরকাল ভুলে থাকা এবং সেই জীবনের হিসাব নিতে অলসতা করা মানবতার ধ্বংসের কারণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা তোমাদের পালন কর্তার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।' (সূরা ইমরান : ১৩৩)। অতএব নব-উদ্যমে নতুন বছরটিকে বরণ করতে হবে। করুণাময়ের কাছে বলতে হবে, আমাদের জন্য বছরটি পুণ্যময় ও কল্যাণকর করে দিন। আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ, তিনি হিজরি বর্ষের সর্বশেষ ও প্রথম মাসদ্বয়কে বিশেষ ইবাদত দ্বারা বিশেষায়িত করেছেন। যেমন জিলহজ মাসে রয়েছে হজ ও কোরবানির মতো মহান ইবাদত। আর মহররমের আশুরার রোজা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। অতঃপর রমজানের রোজা ফরজ হলে এ দিনের রোজা নফলে পরিণত হয়। (সহিহ বোখারি : ২৬৮)। কিন্তু তথাপি আশুরার রোজার গুরুত্ব কমে যায়নি। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, রমজানের পর আশুরার রোজা সর্বোত্তম। তিনি আরও বলেছেন, আমি আশা রাখি, আশুরার দিনে রোজা রাখলে আল্লাহ তায়ালা পেছনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (মিশকাত : ১৭৯)। ৩০ জিলহজ মদিনার মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন মাওলানা মাহবুুবুর রহমান নোমানি

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়