Wednesday, October 29

সুনিপুণ সৃষ্টি সূর্য


যুবায়ের আহমাদ 'আর আমি সৃষ্টি করেছি একটি প্রজ্বলিত বাতি।' (সূরা নাবা : ১৩)। সূর্যের আলোচনায় কোরআনুল কারিম সব জায়গাতেই 'প্রজ্বলিত বাতি', 'উজ্জ্বল জ্যোতি', 'চমক/ঝলক', 'শিখা' বলেছে। যার অর্থ সূর্য নিজে দহনক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচন্ড তাপ ও আলো উৎপন্ন করে; পক্ষান্তরে চাঁদের আলোচনায় বলেছে, 'স্নিগ্ধ আলো'। বিজ্ঞানও গবেষণা করে ঠিক তাই বলেছে। বিজ্ঞান বলছে, সূর্য তার কেন্দ্রভাগে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ৬২ কোটি মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম উৎপাদন করে। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৭৭৮ কেলভিন বা ৫৫০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সূর্যই তাপশক্তির ও আলোর প্রধান উৎস। পক্ষান্তরে চাঁদের ব্যাপারে বিজ্ঞানের বক্তব্য হলো, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্যের প্রতিফলিত আলোই তার সম্বল। পবিত্র কোরআনুল কারিম আরও স্পষ্ট করে বলছে, 'আল্লাহ চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোরূপে আর সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে'। (সূরা নূহ : ১৬)। অর্থাৎ কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলে দিয়েছে, তাপশক্তির মূল উৎস সূর্য আর চন্দ্র শুধু তার আলো। সৃষ্টিকুলের মৌলিক একটি চাহিদা হলো পানি। আল্লাহ সূর্যের মাধ্যমেই সৃষ্টিকুলকে পানি সরবরাহ করেন। ১৫৮০ সালে বর্নার্ড পলিসি বলেন, পানিচক্রে সূযের্র ভূমিকাই প্রধান। সূর্যতাপ পুকুর, খালবিল, নদী ও সমুদ্রসহ গোটা ভূপৃষ্ঠের পানিকে জলীয়বাষ্পে পরিণত করে বায়ুমন্ডলের ওপরের দিকে ওঠায়। তা ঠান্ডা হয়ে সৃষ্টি হয় ছোট ছোট পানিকণায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানিকণা একত্রিত হয়েই আকাশে মেঘ হিসেবে ঘুরে বেড়ায়। জীবাণু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন সেখানে ততটুকু বর্ষণ করে। এরশাদ হচ্ছে, 'আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।... আর আমি এটা তাদের মধ্যে বণ্টন করি; কিন্তু অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে।' (সূরা ফোরকান : ৪৮-৫০)। আলোচ্য আয়াতে বৃষ্টির পানিকে বিশুদ্ধতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'তহুরা'। অর্থাৎ যা নিজেও পবিত্র, অন্যকেও পবিত্র করে দেয়। বিজ্ঞান যেন কোরআনের কথাটিই বলছে। তা হলো, ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকসহ নানা জীবাণু রয়েছে। জীবাণুর কারণে ভূপৃষ্ঠের পানিও সুপেয় নয়। পক্ষান্তরে বৃষ্টির পানিই সবচেয়ে বিশুদ্ধ। বৃষ্টির পানি চুইয়ে চুইয়ে মাটির নিচে গিয়ে সঞ্চিত হয় ভূগর্ভস্থ পানি হিসেবে। গভীর কিংবা অগভীর নলকূপের মাধ্যমে উঠিয়ে আমরা তা পান করি। ব্যবহার করি সেচকাজে। সূর্যতাপ না পেলে সাগরের পানি সাগরেই থাকত। একদিকে যেমন সিক্ত হতো না আমাদের ফসলের মাঠ, ভূগর্ভেও পেতাম না সুপেয় পানি। মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সূর্যের তাপের ভূমিকা কম নয়। University of Edinburgh এবং University of Southampton-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, উত্তর মেরু অঞ্চলের লোকজন, যারা সূর্যের আলোর সংস্পর্শ খুব কম পায়, তারা উচ্চ রক্তচাপে বেশি ভোগে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারও সেখানে বেশি। 'জার্নাল অব ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি'তে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকলে সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। (নিউজম্যাক্সহেলথ ১৯-০১-২০১৪)। শীতের সকালে রোদের সঙ্গে মানুষের টান অকৃত্রিম। সূর্যকিরণেই তো সন্ধান মেলে শিশির নামক মুক্তোদানার। বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সূর্যালোক ধারণ করে তার সাহায্যে লাইট জ্বালানো, ফ্যান ঘোরানোতেই শেষ নয়। গাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল লাগিয়ে করছে জ্বালানি সাশ্রয়। এমনকি সূর্যালোক থেকে সূর্যচুলি্ল পদ্ধতিতে তাপ সৃষ্টি করে টারবাইন পাম্পে উপকৃত হচ্ছে কৃষি। এ পদ্ধতিতে শিল্প পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে স্পেনে। সৃষ্টি করা হচ্ছে আড়াই হাজার সেন্টিগ্রেড তাপ। (আমার দেশ ০৮-০৮-২০১২)। লেখক : খতিব, বায়তুল ফালাহ মসজিদ, বাবর আলী গেট, কুষ্টিয়া

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়