Thursday, September 11

ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলে রংপুরে জাপায় অস্থিরতা


ঢাকা: জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মসিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় অস্থির হয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টি। অস্থিরতার ঢেউ গিয়ে লেগেছে রংপুরেও। দলের প্রেসিডিয়াম থেকে দুই নেতাকে বাদ দেয়া ছাড়াও রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে নতুন কমিটি। তবে পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের হুটহাট পরিবর্তনকে সহজভাবে নিতে পারছে না নেতাকর্মীরা। ঘন ঘন কমিটি পরিবর্তনের ফলে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের ফলে অস্তিত্ব রক্ষার সংকটের মুখোমুখি দলটি। বুধবার এইচ এম এরশাদের ভাগিনা হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নতুন আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয় এক সময়ের বহিষ্কৃত নেতা মানিক, মোস্তফা ও ইয়াসিরকে। এরশাদের এ সিদ্ধান্তে তাঁর উপর এখনও আস্থা রাখতে পারছেন না আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারা। তারা বলছেন, আমরা বিষয়টি অবজার্ভ করছি। কারণ এর আগেও বহুবার কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। এরশাদের এই সিদ্ধান্তে কমিটি থেকে বহিষ্কার হওয়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন,“তিনি (এরশাদ) আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্তে আমি অখুশি নই। উনি ওনার সংবিধান হিসেবে এটা করতেই পারেন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আমি ঠিকভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে পারছিলাম না। তবে আমি এখনও কোনো কাগজ পাইনি। যদি পার্টির চেয়ারম্যান এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে আমি বলবো ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’।” হঠাৎ করেই মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় ঘটনায় রংপুরে নীরব উত্তেজনা বিরাজ করছে। বুধবার দুপুরে কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানা গেছে, এরশাদের বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কান্ডারিবিহীন হয়ে পড়ে। একে অপরকে বহিষ্কার, এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান রেখে তৃণমূল জাতীয় পার্টি গঠন, গণপদত্যাগসহ বহু নাটকীয় ঘটনা ঘটে। প্রার্থীতা নির্বাচনে এরশাদের সিদ্ধান্তেও ক্ষুব্ধ ছিলেন এরশাদ ভক্তরা। অভিযোগ ছিল, এরশাদপ্রিয়দের দূরে ঠেলে দিতে এরশাদকে ভুল বুঝিয়ে দলের নানা সিদ্ধান্ত ওলটপালট করা হয়েছে। সে কারণে রংপুর সিটি করপোরেশনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এরশাদ তাঁর দলের কাউকে বসাতে পারেননি। ওই সময় জাতীয় পার্টির দু’নেতা সাবেক রংপুর পৌরসভার মেয়র একেএম আবদুর রউফ মানিক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ডাকসাইটে নেতা হিসেবে পরিচিত এস এম ইয়াসিরকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে নতুনভাবে রংপুর জেলা ও মহানগর সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় বর্তমান প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। কমিটিতে জেলা সম্পাদক হিসেবে মাসুদ চৌধুরী নান্টু ও মহানগর সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন কাদেরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কমিটির মেয়াদ ১ বছর যেতে না যেতেই ফের ভেঙ্গে দেয়া হয় কমিটি। এরশাদের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পাওয়া নতুন কমিটির নেতারা কমিটি গঠন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া নগর কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনও আনন্দিত নই। কারণ এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো আস্থা রাখতে পারছি না। দেখি কি হয়। স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে সরাসরি দেখা করে সিদ্ধান্ত নেব।’ কমিটিতে স্থান পাওয়া জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক এ কে এম আব্দুর রউফ মানিক বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানিনা। জানলে এ ব্যাপারে মতামত জানাবো।’ মহানগর কমিটির সদস্য সচিব এসএম ইয়াসির জানান, ‘আমরা স্যারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। এরশাদ স্যার আমাদের অভিভাবক। আমরা কোনো কারণে তাঁর সঙ্গে অভিমান করেছিলাম মাত্র।’ তবে আশার বাণী শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে পুরনো সেই ত্যাগী নেতাদের নিয়ে আবার হারানো ঐতিহ্য ফিরে আনার চেষ্টা করবো।’ এ ব্যাপারে মতামত নেয়ার চেষ্টা করা হলে এরশাদের ভাতিজা ও নতুন কমিটির রংপুর জেলা সদস্য সচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু ও যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন কাদেরীর মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বহু আগ থেকেই রংপুর জাতীয় পার্টিতে নীরব কোন্দল চলছিল। কোন্দলের কথা মুখ খুলে বলার কারো সাহস হয়নি। কিন্তু সিটি নির্বাচনে সাহসের পাহাড় ভেঙ্গে যায়। এর ফলে প্রকাশ্যে মাঠে নামে দলটির নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, জাপায় দু’পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। নিজ দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত দেড় যুগেও এমন সংঘর্ষ নগরবাসীর চোখে পড়েনি। কিন্তু এসব ভুলে এখনও হারানো সেই ঐতিহ্য ফিরে আনতে পারবে দলটি। সে ক্ষেত্রে এরশাদকেই মূল ভ’মিকা রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়