Monday, August 26

আজ মাদার তেরেসার ১০৩তম জন্মদিন

ঢাকা: শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী, দুস্থ, দরিদ্র, অসহায়, অবহেলিত মানুষের ত্রাণকর্ত্রী মাদার তেরেসার জন্মদিন ২৬ আগস্ট। ১৯১০ সালের এই দিনে (২৬ আগস্ট) ম্যাসেডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়োতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

মাত্র পাঁচ টাকা মূলধন নিয়ে তিনি যে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন তা আজ সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত হয়েছে শত শাখা-প্রশাখায়। মানবতার সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ শান্তির জন্য মাদার তেরেসাকে ১৯৭৯ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। নোবেল পুরস্কারের ১৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য পুরস্কারের প্রায় এক কোটি টাকা সবই তিনি দান করেন মানবতার সেবায়।

তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। তাদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ায়। তার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে হারান। বাবার মৃত্যুর পর মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস মিশনারিদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বড়োই ভালবাসতেন।

১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন ‘সিস্টার্স অফ লোরেটো’ সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে তার আর কোনোদিন দেখা হয়নি।

অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিখতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে তিনি ভারতে এসে দার্জিলিংয়ে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ নেন।

১৯৩০ সালে কলকাতার সেন্ট মেরি ক্যাথলিক গার্লস স্কুলে পড়ানোর দায়িত্ব নেন আগ্নেস। ১৯৪৬ সালে ট্রেনে করে দার্জিলিং যাওয়ার দীর্ঘ পথে গভীর এক চেতনা জেগে ওঠে তাঁর মনে, যেন ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান তিনি। দরিদ্র থেকেও দরিদ্র মানুষদের সেবা করাই হল তাঁর মিশন। ১৯৪৮ সালে পোপের অনুমোদন নিয়ে কনভেন্ট (সন্ন্যাসিনীদের আশ্রম) ত্যাগ করে ‘অর্ডার অফ সিস্টার্স’ গড়ে তোলেন তিনি। ১৯৫০ সালে আত্মপ্রকাশ করে ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ সংস্থা, স্বীকৃতি পায় ভ্যাটিকানের।

কলকাতার রাস্তাঘাটে অনেক দরিদ্রকে মারা যেতে দেখেছেন তেরেসা। অজ্ঞান এক মহিলাকে দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি। দেহের অর্ধেকটা ইদুর ও পিপড়ায় খেতে শুরু করেছে। মাদার তেরেসা স্থির করলেন কাউকে আর একা মরতে দেয়া হবেনা। তিনি মরণাপন্ন মানুষদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নগর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় হিন্দু মন্দিরের পাশে পরিত্যক্ত এক বাড়িকে ‘হোম ফর দ্য ডাইং’ এ পরিণত করেন। পরে যেটির নাম দেয়া হয় ‘নির্মল হৃদয়’।

এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে কিছুটা শান্তি ও সম্মান পেতেন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষরা। পেতেন চিকিৎসা ও পেটভরে খাবার। আজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তাদের শেষ আশ্রয় পেয়েছেন এই কেন্দ্রে।

এ প্রসঙ্গে মাদার তেরেসা বলেছেন— ‘মৃত্যু হল মানুষের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি। কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে শান্তি নিয়ে মরতে পারে, তা হলে তার পক্ষে জীবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোও সহজ হয়।’

দরিদ্রদের সাহায্য করার কাজটা প্রথম দিকে খুব সহজ ছিলনা মাদার তেরেসার পক্ষে। অর্থের জন্য ধনী ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে তাকে। হতাশাও পেয়ে বসেছে কখনও কখনও। তবে মিশনারিজ অব চ্যারিটি অচিরেই দেশ-বিদেশের দাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়িয়ে দেন অনেকে সাহায্যের হাত। মাদার তেরেসা নিজেকে কখনও সমাজকর্মী হিসাবে দেখেননি। তার মতে ধর্মের, বিশেষ করে যিশু খ্রিষ্টের নির্দেশে তিনি দরিদ্রদের সেবায় ব্রতী হয়েছেন— ‘কাজটা তার জন্য যেন উপাসনা’।

অচিরেই মিশনারিজ অফ চ্যারিটির শাখা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। এমনকি, এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার নানা দেশেও। বিভিন্ন স্থানে খোলা হয় আশ্রয় ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম। মাদার এগিয়ে আসেন কুষ্ঠ রোগীদের সেবায়। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মানবদরদী এই নারী। ছুটে গিয়েছেন ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্থ মানুষদের কাছে। উদ্ধার করেছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে আহত বাচ্চাদের।

মাদার তেরেসার মতে— ‘পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো ভাবে কষ্ট পায়। এই কষ্টকে যিশু খ্রিস্টের প্রতি ভালবাসায় রূপান্তরিত করতে হবে। বিশেষ করে আজ যেখানে পাপে ভরে গেছে চারিদিক।’

১৯৮০ সালে দেয়া হয় তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ উপাধি দেয়া হয়।---ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়