Sunday, November 16

কোরআন ও হাদিসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রমাণ


মুফতি মাহবুবুর রহমান নোমানি ঈমানের পরই সবচেয়ে বড় আমল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। ইসলামের পঞ্চভিত্তির দ্বিতীয়তে এর অবস্থান। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ভাষায় 'যে নামাজ ত্যাগ করল সে দ্বীনকে ভেঙে দিল।' মৃত্যুর সময়ও তিনি নামাজের তাগিদ করে গেছেন উম্মতের প্রতি। পূর্ববর্তী সব পয়গম্বরের শরিয়তেও নামাজের বিধান ছিল; কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুধু উম্মতে মুহাম্মদির বৈশিষ্ট্য। নামাজের অত্যধিক গুরুত্বের কারণে পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশি সালাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। নামাজ আদায়ের নির্দেশ, আদায়কারীর পুরস্কার ও বর্জনকারীর কঠিন শাস্তি, নামাজ মোমিনের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিভিন্ন আঙ্গিকে কোরআনের প্রায় ৮২ স্থানে নামাজের কথা আলোচিত হয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে নামাজ না পড়া গুরুতর অপরাধ। উপরন্তু বিভিন্ন ছুতোয় পার পাওয়ার চেষ্টা করা তার চেয়েও বড় অপরাধ। কেউ কেউ অজ্ঞতা বা নামাজ না পড়ার অজুহাত হিসেবে প্রশ্ন তোলেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা কোরআনের কোথাও নেই। কথাটি সঠিক নয়। কোরআনের একাধিক স্থানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা- শব্দগুলো সরাসরি না থাকায় এমন প্রশ্নের অবকাশ নেই। কোরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম রাজি (রহ.) কোরআনের পাঁচটি আয়াত দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সাব্যস্ত করেছেন। যথা- এক. 'তোমরা সব নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হও বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে।' (সূরা বাকারা : ২৩৮)। আয়াতে 'সালাহ' শব্দটি বহুবচন উল্লেখ হয়েছে যার সর্বনিম্ন সংখ্যা তিন। আর মধ্যবর্তী নামাজ বলে স্বতন্ত্র নামাজ উদ্দেশ্য। কিন্তু মধ্যবর্তী নামাজের জন্য তার আগে দুই ওয়াক্ত ও পরে দুই ওয়াক্ত নামাজ থাকা আবশ্যক। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রমাণিত। দুই. 'সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করুন এবং ফজরে কোরআন পাঠ করুন। নিশ্চয়ই ফজরের কোরআন পাঠে ফেরেশতারা উপস্থিত হন।' (সূরা বনি ইসরাঈল : ৭৮)। অধিকাংশ তাফসিরবিদের মতে, আয়াতটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশ। এখানে তিনটি শব্দ বর্ণিত হয়েছে। যথা_ দুলুক, গাসাক ও ফজর। দুলুক মানে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া। এ সময়ে দুই ওয়াক্ত নামাজ_ জোহর ও আসর। গাসাক অর্থ রাতের অন্ধকার সম্পূর্ণ হওয়া। এ সময়ে দুই ওয়াক্ত নামাজ_ মাগরিব ও এশা। আর ফজরের কোরআন বলে ওই সময়ের নামাজ উদ্দেশ্য। তিন. 'তোমরা আল্লাহর তসবিহ পাঠ করো সন্ধ্যায় ও সকালে এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে।' (সূরা রুম : ১৭-১৮)। জগতের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আয়াতটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিবরণ রয়েছে। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আলুসি (রহ.) বলেন, আলোচ্য আয়াতের ভাষায় যদিও তসবিহের কথা, নামাজের উল্লেখ নেই; কিন্তু জিকিরের মধ্যে নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই আয়াতের মধ্যে নামাজ উত্তমরূপেই আছে বলা যায়। (তাফসিরে রুহুল মায়ানি)। চার. আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'দিনের দুই প্রান্তে নামাজ কায়েম করো এবং রাতের কিছু অংশে।' (সূরা হুদ : ১১৪)। দিনের দুই প্রান্ত বলে ফজর ও আসর উদ্দেশ্য। এবং রাতের কিছু অংশ দ্বারা মাগরিব ও এশা উদ্দেশ্য। পাঁচ. 'আপনার পালনকর্তার সপবিত্র পবিত্রতা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে, সূর্যাস্তের আগে এবং রাতের কিছু ও দিবাভাগে।' (সূরা ত্ব-হা : ১৩০)। কোরআনের যেখানে জিকির, তসবিহ বা প্রশংসার কথা উল্লেখ আছে তাফসিরবিদরা তা দ্বারা নামাজ অর্থ নিয়েছেন। কেননা নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। তাই এ আয়াতেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা প্রমাণিত হয়। (সূত্র : তাফসিরে কাবির ও অন্যান্য তাফসিরগ্রন্থ)। হাদিসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নামাজের বিধানটি প্রিয় নবী (সা.) মেরাজের রজনীতে সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছেন। মেরাজের দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, 'আমাকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ দেয়া হয়। অতঃপর আমি বারবার আল্লাহপাকের দরবার থেকে নামাজের পরিমাণ কমাতে ছিলাম। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত দেয়া হলো। আরও কমিয়ে আনার জন্য যেতে আমার লজ্জা লাগছিল।' (সহিহ ইবনে হিব্বন : ৫০)। নামাজের বিধান শুধু মৌখিকভাবে দেয়া হয়নি বরং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ও পদ্ধতি জিবরাইল (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। ওলামায়ে কেরামের কাছে যা জিবরাঈলের ইমামতির হাদিস নামে খ্যাত। তিনি ঘোষণা করেছেন, 'আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার জন্য দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।' (সহিহ বোখারি : ২৬৭৮)। অনেক নওমুসলিম সাহাবি ইসলাম গ্রহণের পর জানতে চেয়েছেন, আমার করণীয় কী? তিনি বলেছেন, 'দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, এছাড়া আরও নামাজ পড়তে হবে কী? তিনি বলেন, নফল পড়তে পার।' (সহিহ বোখারি)। অসংখ্য হাদিসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা এসেছে। তাই কোনো ধরনের বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আখেরাতে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়