নূরুজ্জামান: স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে তার বন্ধুর সঙ্গে লিভ টুগেদার করেছে ইমা। বিয়ে না করেও একই ছাদের নিচে রাত কাটিয়েছে। পার করেছে একে একে পাঁচটি বছর। গোপনে গড়ে তুলেছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের
শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে প্রতারক রেজওয়ানা খালেদ ইমা। দু’দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আরও একটি মামলায় রিমান্ড আবেদন করে আদালতে তাকে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে আদালত আগামী বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করে ইমাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত সূত্র জানায়, ইমার প্রথম প্রেমিক গ্রামীণ ফোনের এক কর্মকর্তা। তার সঙ্গে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় দু’জনেই উল্টো পথে হাঁটে। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইমা’র দাবি- তার প্রথম স্বামী গ্রামীণফোনের ওই কর্মকর্তা পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। তাকে ঘরে রেখে সে বিভিন্ন নারী সহকর্মীদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। রাত কাটাতো বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে। এক রাতে তার স্বামীর এক পুরুষ সহকর্মী তার ফ্ল্যাটে আসে। তার নাম উত্তম। একথা-সেকথা বলার একপর্যায়ে ফাঁস করে দেয় স্বামীর গোপন সম্পর্কের সব তথ্য। শুধু তাই নয়, উত্তমকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় হাতে-নাতে ধরে ফেলে। এ ঘটনার পর ওই স্বামীকে ছেড়ে দেয় ইমা। বন্ধুত্ব গড়ে তোলে উত্তমের সঙ্গে। কয়েকদিনের মধ্যেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ওঠে তার ফ্ল্যাটে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বছরের পর বছর বাস করে। ইমা আরও দাবি করে, উত্তমকে বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করলেও কখনই বিয়েতে রাজি হয়নি। সে বরং একাধিক নারীর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে তাকেও ত্যাগ করে চলে যায় সে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অর্থের লোভেই ইমা তার স্বামীকে ছেড়ে তার বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। বিয়ে না করেও দিনের পর দিন একই ফ্ল্যাটে বাস করে। তার পরিচয়ের সূত্র ধরেই অভিজাত এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের কাছাকাছি চলে যায়। তার রূপের ঝলকে দুর্বল হওয়া ব্যবসায়ীদের সহজেই কাবু করে ফেলে। তার ফাঁদে পড়া অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। তাবে মান-সম্মানের ভয়ে তাদের কেউ-ই মুখ খুলছেন না। সূত্রমতে, ইমা’র ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত একাধিক রাজনীতিবিদ, সরকারি আমলা ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন। যাদের পরিচয়ে ইমা কাউকে পরোয়া করতো না। নির্বিঘ্নে মানুষের টাকা মেরে পার পেয়ে যেতো। প্রভাবশালী ওই কর্তাদের স্থায়ী মনোরঞ্জনের জন্য ইমা গুলশান ১ ও ২ নম্বরের মাঝামাঝি অগোরা’র পেছনে একটি বিউটি পার্লার গড়ে তোলে। এ পার্লারের আড়ালেই শুরু করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। রাত চুক্তিতে ভাড়া করে উঠতি বয়সী চিত্রশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও র্যাম্প মডেলদের। তাদের নিয়ে ভুয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যানারে গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকার অভিজাত ফ্ল্যাট বাড়িতে আয়োজন করে হট, ডিসকো ড্যান্স ও ডিজে পার্টির। সেখানে হাজির করে টার্গেট করা ক্লায়েন্টদের। রাতভর চলে নৃত্য ও প্রদর্শনী। সঙ্গে সুরা পান। বাহারি নেশায় ক্লায়েন্ট যখন বেসামাল তখনই গোপনে ছবি তুলে রাখে ইমা। কখনও ভিডিও ধারণ করে। এরপর শুরু করে ব্ল্যাকমেইলের পালা। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া, তার পিতা আলমগীর খালেদ ও ভাই তানভীর খালেদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে। অভিযোগকারীদের তথ্যমতে, প্রতারক ইমা কখনও ফ্যাশন ডিজাইনার, কখনও ব্যবসায়ী, কখনও মডেল ও নায়িকার ছদ্মবেশ ধারণ করে। আবার চিত্রনির্মাতা, আদম ব্যাপারী, মৎস্য খামারি, ভিওআইপি ও গাড়ি ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচয় দেয়। গত শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। দু’টি মামলায় দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
বিশেষ খবর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়