Wednesday, December 27

অনাহারে অর্ধাহারে নিঃস্ব শিল্পপতির সকরুণ মহাযাত্রা


এহসানুল হক জসীম ::

ঢাকায় থাকি প্রায় ২১ বছর। ভদ্রলোকের সাথে সরাসরি দেখা হয়নি কখনো। কথাও হয়নি। অথচ কোন ধরণের আত্মীয়তা না থাকা সত্ত্বেও কানাইঘাটি বা সিলেটি পরিচয় দিয়ে অনেকে তাঁর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। ঢাকাস্থ কানাইঘাট সমিতির সভাপতি ছিলেন। পদে থাকাকালীন সময়ে এই সমিতির যে কোন অনুষ্ঠানের হল ভাড়া, আপ্যায়ন থেকে শুরু থেকে সকল ব্যয় বহন করতেন। ভদ্রলোক আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ হারানোর পর প্রায় সবারই মনযোগ হারিয়েছেন।. চিকিৎসার অভাবে, আর্থিক দৈন্যতায় এবং অনাদর অযত্নে অসুস্থ অবস্থায় জীবন সায়াহ্নে।  তাঁর জীবনের এই দিনগুলো অন্তত তাঁর নিজ বাসায় বা বাড়িতে কাটুক। নিজ বাড়ি তিনচটি গ্রামে তাঁর তৈরি করা গৃহে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন।”


কাল সকালে লেখার পর তিনচটির কেউ কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেন। বিশেষ করে প্রবাস থেকে। হাজী আব্দুল খালিক বাবুলকে চিকিৎসা করানো এবং অন্যান্য যা লাগে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন তাদের পকেটের টাকা দিয়ে। প্রবাস থেকে ফোনাফোনি চলাকালীন সংবাদ এলো, কানাইঘাট উপজেলার ৯ নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের মির্জারগড় (দিনারবাড়ি) গ্রামে ভগ্নিপতি মৃত আব্দুর রহমান ড্রাইভারের বাড়িতে ২৬/১২/২০২৩ মঙ্গলবার বেলা ২:০০ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ৮ নং ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের তিনচটি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা, হাজী আব্দুল খালিক মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত, শিরিন মটরস-এর স্বত্বাধিকারি, মাত্র কয়েক বছর আগের শিল্পপতি জনাব হাজী আব্দুল খালিক বাবুল। 


জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি অনাহারে অর্ধাহারে থেকেছেন। এক সময়ের কোটিপতির ভাগ্যে উন্নত চিকিৎসা দুরে থাক, একেবারে সাধারণ চিকিৎসাও জুটেনি। একটা প্যারাসিটামল কেনারও সামর্থ ছিল না তার জীবনের এই শেষ সময়ে। নিজ বাড়ি কিংবা পরিবারের প্রথম স্তরের আত্মীয়দের সান্নিধ্য পাননি জীবন সায়াহ্নে। মৃত্যুর পুর্বে কয়েক মাস বোনের বাড়িতে অবস্থান করেন। কয়েক কিলোমিটার উত্তরে নিজ বাড়ি, যে বাড়ির পাকা গৃহ নিজ টাকায় নির্মিত, যেখানে নিজের জন্য নির্মিত আলাদা রুমও আছে; কিন্তু কেউ তাঁকে বাড়িতে নেওয়ার গরজ-ও অনুভব করেনি। দুই ঘরে কয়েকটি সন্তান। প্রথম ঘরের এক ছেলে আমেরিকায় বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত, মেয়েও ঢাকায় বড় পরিবারে সংসার করছে। দ্বিতীয় ঘরের ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সিলেটে। জীবনের অন্তিম মুহুর্ত, জানাযা, দাফন-কাফন ও জীবনের শেষ কয়েক মাসে তিলে তিলে ক্ষয় হওয়ার সময়ে কোন একটি সন্তানও, পরিবারের প্রথম স্তরের একটি সদস্যও কাছে ছিল না। তারা কেহ এক মিনিটের জন্যও দেখতে যায়নি হাজী আব্দুল খালিক বাবুলকে, এক মিনিটও ফোনে কথা বলে খোঁজ নেওয়ার গরজ অনুভব করেনি। অবশ্য, মৃত্যুর প্রায় দশ মাস আগে তাঁর কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। 


অনাহারে, অর্ধাহারে, অনাদর অযত্ন আর অবহেলায় এবং বিনা চিকিৎসায় বোনের বাড়িতে এক বোন ছাড়া সকল স্বজনবিহীন অবস্থায় এক সময়ের এক শিল্পপতি এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত এবং শত শত মানুষকে সহায়তকারী লোকটি অভিমান করে চিরতরে দুরে চলে গেলেন। মারা যাওয়ার পর তাঁর লাশ শেষ বারের মতো নিজ জন্মভিটায় আনা হয়, আনা হয় নিজ গ্রামে। কবর দেওয়া হয় নিজ গ্রামে প্রথম স্তরের কোন স্বজনের উপস্থিতি ছাড়া। মৃত্যুর পর ’ফাহমিদাকে বিয়ে করে কোটিপতি থেকে নিঃস্ব হয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে লেখাটি লিখেছিলাম। অনেকে অনুরোধ করেন, লেখাটি যাতে পাবলিক করি। গেলো রাতের লেখাটি হুবহু এখন নিম্নে তুলে ধরছি। 


“ডাঃ ফাহমিদা সুলতানা। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক, সেখানকার সহকারি অধ্যাপক। ইউটিবেও এই গাইনি ডাক্তারকে ইদানিং দেখা যায়। উনি উনার ছাত্রজীবনে নিজের বয়স অনেকটা কম থাকাবস্থায় তার চাইতে ৩০ বছরের বয়সে বড় তিন সন্তানের এক জনকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বা ওই শিল্পপতি (হাজী আব্দুল খালিক বাবুল) লোকের দ্বিতীয় স্ত্রী হোন। গোপনে ওই লোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 


উনার বয়স্ক স্বামী রাজধানীতে একজন শিল্পপতি ছিলেন। প্রচুর বিত্ত-বৈভবের মালিক ছিলেন। ডা. ফাহমিদা সুলতানা ওই লোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর পর শিল্পপতির ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুতে ধ্বস নামা শুরু হয় আর কম বয়সী স্ত্রী ফাহমিদা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে থাকেন। গরীব ঘরে জন্ম নিয়েও বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে হওয়ায় স্বামীর খরচে একটি ব্যয়বহুল মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। স্বামীর কাছ থেকে ঢাকা শহরে বাড়ি, ফ্লাট, প্লট, গাড়ি ও নগদ অনেক টাকা নিয়ে নেন বিভিন্নভাবে কয়েক বছরের সংসার জীবনে। এর মধ্যে সন্তানের মা হন। সন্তানগুলো একটু বড় হওয়ার পর এবং নিজের সাভার এনাম মেডিকেলে চাকুরী হওয়ার কিছুদিন পর স্বামীকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন। সোজা কথায়, গরীব ঘরের মেয়েটির সন্তানগুলো একটু বড় হওয়ার পর, নিজের চাকুরীতে যোগদানের কিছুদিন হওয়ার পর এবং ওই স্বামীর কাছ থেকে অনেক কিছু নিয়ে নেওয়ার পর স্বামী নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর উনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। 


আজ ২৬ ডিসেম্বর এই নারীর সাবেক স্বামী মারা গেছেন। এক বছরেরও বেশি সময় অসুস্থতায় ভোগে তথা শয্যাশায়ী হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থেকে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় দিন যাপন করে অত্যন্ত কষ্ট করে ধুকে ধুকে মারা যান। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় কয়েক মাসের ভাড়া বকেয়া হয়ে যায়, এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি বিল কয়েক মাসের বকেয়া পড়ায় বাসার এসব ইউলিটি সার্ভিসের লাইন কেটে দেওয়া হয়। অনেক টাকা বকেয়া রেখে বাসা ছাড়তে হয় তাঁকে। এক সময়ের শিল্পপতি, ঢাকা শহরে গাড়ি বাড়ির মালিক, হোটেল-মোটেলের এই মালিক ফাহমিদা সুলতানাকে বিয়ে করার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন। 


বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ। অর্থ সংকটের পাশাপাশি তাঁকে দেখারও কেউ ছিল না। ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, অন্য কোথায়ও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, দুমুটো ভাত খাবেন সেই টাকাও নেই, চিকিৎসা নেবেন সেই অর্থ-ও নেই-- এই অবস্থায় শিল্পপতি থেকে নিঃস্ব হওয়া হতভাগা লোকটির আশ্রয় মেলে তাঁর এক বিধবা বোনের বাড়িতে অজোপাড়াগায়ে। ওই বোনের বাড়িতে প্রায় দশ মাস মোবাইল বিহীন, যোগাযোগ বিহীন অনেকটা গৃহবন্দি অবস্থায় থেকে বিনা চিকিৎসায় আজ মারা যান মাত্র কয়েক বছর আগের কোটিপতি শিল্পপতি এবং আজকের নিঃস্ব লোকটি।”


পুনশ্চ: ডা. ফাহমিদা-ই কি কেবলই দায়ী? ডা. ফাহমিদা সুলতানাকে বিয়ে না করলে বাবুল সাহেবের এমন করুণ পরিণতি হতো না-- এটা মোটাদাগে সত্য। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে তিনি যে তিলে তিলে ক্ষয় হয়েছেন, অনাহারে অর্ধাহারে থেকেছেন, সেজন্য কি আর কারো দায় নেই? ফাহমিদার সাথে না হয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ছিল। ফাহমিদার ঘরে তো হাজী আব্দুল খালিক বাবুলের কয়েকটা সন্তান। বাবার সাথে তো আর সন্তানদের ডিভোর্স হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটি-সহ দ্বিতীয় ঘরের সন্তানগুলো একটি বারের জন্যও বাবার খোঁজ নেয়নি। অন্তিম মুহুর্তেও কাছে যায়নি। ফাহমিদার বাবার বাড়ি পাশ্ববর্তী বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ফাহমিদার বাবা বাবুল সাহেবের কাছে তার মেয়ে বিয়ে দেওয়ার আগেও বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। ইয়েস, বিয়ানীবাজার নিবাসী ওই মৌলভী সাহেবের সম্পর্ক ছিলো হাজী আব্দুল খালেকের বাবুলের সাথে। সুযোগ-সুবিধা নিতেন। সুবিধা নেওয়ার এক পর্যায়ে মৌলভী সাহেব মেয়েকে বাবুল সাহেবের কাছে বিয়ে দেন। বাবুল সাহেবের দ্বিতীয় ঘরের সন্তানদের মামার বাড়ি বিয়ানীবাজার থেকে কেউ কি এসেছিল দাফন-কাফনে? 


হাজী আব্দুল খালিক বাবুল প্রথম বিয়ে করেছেন বাণীগ্রামে মরহুম ডা. শামসুল হক সাহেবের মেয়ে ফাতেমা শিরিনকে। তিনি আমাদেরই এক বোন। আমার প্রতিবেশিও বটে। নিজ স্ত্রীর নামেই বাবুল সাহেব সেই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘শিরিন মটরস’ নামকরণ করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও প্রথম স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়নি। শিরিন আপা এখন আমেরিকায় আছেন ছেলের কাছে, যে ছেলে সেখানে সেনাবাহিনীতে আছে, সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রথম ঘরের কেউ-ও খোঁজ নেয়নি বাবুল সাহেবের। প্রথম পক্ষে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এই সন্তানগুলো একটি বারের জন্যও বাবার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। প্রথম পক্ষে ছেলে ইচ্ছে করলে সে একাই বাবার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবই করতে পারতো, তার একার সেই সামর্থ আছে। মেয়েও ইচ্ছে করলে পারতো, বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েটিরও সেই সামর্থ আছে। প্রথম পক্ষের এই ভাই-বোন তাদের বাবাকে ঢাকা শহরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারতো, কেয়ারটেকার রেখে বাবার সেবা-যত্ন করাতে পারতো, তাদের সেই সামর্থ ছিলো। নিজেরা বাবার কোন খোঁজ নেয়নি অভিমান থেকে, বাবার দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে। প্রথম স্ত্রী ও এই ঘরের সন্তানেরা অভিমান থেকে দুরে চলে যায়, আর দ্বিতীয় স্ত্রী সব আদায় করে বাবুল সাহেবকে ফেলে চলে যায়। হাজী আব্দুল খালিক বাবুল একূল ওকূল উভয় কূল হারিয়ে নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে জীবনে চরম পরাজয়ের শিকার হন, তিলে তিলে ক্ষয়িত হন। 


দায় আছে পরিবারের অন্য স্বজনদেরও; ভাই, ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগনা ও ভাগনীদেরও। হাজী আব্দুল খালিক বাবুল সাহেব তাঁর অনেক স্বজনকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিয়মিত সহযোগিতা করেছেন। বিভিন্নভাবে দাঁড় করিয়েছেন তাঁর পরিবারের লোকজনকে। এমনও স্বজনের পরিবার আছে, যাদেরকে পথে বসতে দেননি জীবনের করুণ মুহুর্তে, পাশে দাঁড়িয়ে নিয়মিত আর্থিক ও মানসিক সাপোর্ট দিয়ে টিকিয়ে রেখেছেন, করুণ পরিণতি বরণ করতে দেননি। নিজেদের ভাইদেরকে ঢাকায় এনে কর্মসংস্থান দিয়েছেন। 


নিজ গোষ্ঠী, গ্রামবাসী ও এলাকাবাসীও দায় এড়াতে পারেন না। এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারে তিলে তিলে ক্ষয় হওয়া হাজী আব্দুল খালিক বাবুলের অবদান প্রাতস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাবুল সাহেবের শেষ সম্বল কিছু জমি-জমা ও ভিটেমাটি ছিল। এসব থেকে কিছু বিক্রি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে পারতেন গোষ্ঠী ও প্রতিবেশিরা। তারা সেটা হয়তো করেননি, না হয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এলাকাবাসী হিসেবে আমি-সহ আমাদের আরো অনেকেরও দায় আছে। আমরা অনেকে উনার দ্বারা উপকারভোগী। জীবন সায়াহ্নে উনার খোঁজও রাখিনি কেউ, অসুস্থ অবস্থায় আমরা কেউই তাঁকে একবারও দেখতে যাইনি। 


হাজী আব্দুল খালিক বাবুল ঢাকাস্থ কানাইঘাট সমিতির সাবেক সভাপতি এবং কয়েক মাস আগে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম ও সচিব এহসানে এলাহী খোকনের নেতৃত্বে এই সমিতির যে কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য। ঢাকাস্থ কানাইঘাট সমিতি সংগঠনের এই সিনিয়র সদস্য ও কার্যনির্বাহী সদস্যের জন্য কোন ভূমিকা রেখেছে কি? শহর নগরে আঞ্চলিক সমিতি গড়ে ওঠে একে অপরকে সহযোহিতা করা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য। যে সমিতির পেছনে এক সময় হাজী আব্দুল খালিক বাবুল প্রচুর টাকা খরচ করেছেন, সেই সমিতির পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে উনার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কেবলই অতীতের অবদানের জন্য নয়, হাজী আব্দুল খালিক বাবুল কানাইঘাট সমিতি, ঢাকা-এর একজন সিনিয়র সদস্য এবং কার্যনির্বাহী কমিটির রানিং সদস্য। নিজ সংগঠনের এক সদস্য ও কমিটির এক সদস্যের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিলো। কয়েক মাস আগের পোস্টে একজনের করা কমেন্ট মনে পড়ে গেলো, ”সেই বাবুল ভাইয়ের এক সময়কার জৌলুস আজ আর নেই, শারীরিক-মানসিক সক্ষমতাও হয়তো নেই। কিন্তু ঢাকায় বসবাসকারী কানাইঘাটবাসী তাঁর অসামান্য অবদান অস্বীকার করতে পারেননা। অন্তত কানাইঘাট সমিতি তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেনা।“


পরিশেষে বলি, হাজী আব্দুল খালিক বাবুল সৎ মানুষ ছিলেন, পরোপকারী ছিলেন, সমাজসেবক ছিলেন, দানশীল ছিলেন, শিক্ষানুরাগী ছিলেন, দেশপ্রেমিক ছিলেন, ধর্মপ্রাণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছিলেন, সত্যবাদি ছিলেন, উদার ও কোমল হৃদয়ের অধিকারি ছিলেন। জীবনের দু’একটা ভুলের খেসারত চরমভাবে তাঁকে দিতে হয়েছে। কোন মানুষই ভুলের উর্দ্বে নয়। হাজী আব্দুল খালিক বাবুলকে দু’একটা ভুলের জন্য তাহলে এত খেসারত দিতে হলো? না, কেবলই তাঁর ভুলের খেসারত নয়; লোভী ও স্বার্থপর সমাজ এবং নিষ্ঠুর পৃথিবীও তাঁর প্রতি অবিচার করেছে। তিনি  তাঁর নিজের প্রতি কিছুটা অবিচার করেছেন, আর এই সমাজ ও স্বজন তাঁর প্রতি চরম অবিচার করেছেন। বিশ্বাস করি, হাজী আব্দুল খালিক বাবুল তাঁর জীবনের প্রচুর ভালো কাজের জন্য জান্নাতবাসী হবেন। তিনি যে ভুলটুকু করেছিলেন, আল্লাহ হয়তো তাঁর বান্দাহকে মায়া করে দুনিয়ার জীবনে শাস্তিটুকু দিয়ে ফেলেছেন। পরকালে তাঁর প্রতি আল্লাহ নিশ্চয়ই সুবিচার করে তরী পার করিয়ে নেবেন। একটি কথা মনে রাখবেন, হাজী আব্দুল খালিক বাবুল মৃত্যুর পরও সওয়াব কামাচ্ছেন। কারণ, মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে মৃত্যুর পরও সওয়াবের দরজা খোলা রেখেছেন। আল্লাহ যেন তাঁকে মাফ করে সুউচ্চ জান্নাতে আসীন করেন- এই দোয়া করছি।   






শেয়ার করুন

1 comment:

  1. আল্লাহ রাব্বুল 'আলামিন মরহুমকে মাফ করে জান্নাত দান করুন, কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন।

    আমার জানামতে তিনি প্রতি রমজান মাসে সৌদি আরব চলে যেতেন; ওমরাহ, সিয়াম ও ঈদ উদযাপন করে দেশে ফিরতেন।

    এই মর্মান্তিক মৃত্যু-পূর্ববর্তী ঘটনা থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই মর্মন্তুদ বিষয়াবলি বুঝার তৌফিক দান করুন, আমাদেরকে হেদায়েত করুন।

    ReplyDelete

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়