স্যামসন এইচ চৌধুরী (১৯২৫–২০১২)
এবিএম ফজলুর রহমান
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪৫
সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃঙ্খলা একজন মানুষকে কত ওপরে নিতে পারে তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। প্রচণ্ড আস্থা ও মনোবলকে পুঁজি করে তিনি শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছিলেন। আজ তাঁর ১০০তম জন্মদিন। দেশবরেণ্য এই শিল্পপতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
৬৬ বছর আগে স্যামসন এইচ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার বন্ধু মিলে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া এলাকায় যে ছোট্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন, সেটি আজ মহিরুহ। তার নাম ছিল স্কয়ার ফার্মা। পুঁজি ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা। ১৯৬৪ সালে স্কয়ার ফার্মার নাম পরিবর্তন করে করা হয় স্কয়ার ফর্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ছিমছাম ছিল কারখানাটি। এখনও স্কয়ারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে এটি লক্ষ্য করা যায়।
কিন্তু স্কয়ার নামের মহত্ত্ব আরও গভীরে। সেদিন চার বন্ধু মিলে আট হাতে গড়ে তুলেছিলেন এক বর্গাকার চতুর্ভুজ। স্কয়ার মানে হচ্ছে সেই বর্গাকার চতুর্ভুজ। কিন্তু পারফেক্ট না হলে যেমন চতুর্ভুজ বর্গাকার হয় না, তেমনি নৈতিক বিশুদ্ধতা না থাকলে জীবনে সাফল্য লাভ করা যায় না। সেই পারফেকশনের চিন্তা থেকেই তাদের গ্রুপের নামকরণ করা হয় স্কয়ার। এ প্রসঙ্গে স্যামসন এইচ চৌধুরী সে সময় বলেছিলেন, ‘স্কয়ার মানেই পারফেকশন। এ জন্যই আমরা নাম রাখলাম স্কয়ার।’
১৯৮৮ সাল থেকে ওষুধের পাশাপাশি স্কয়ার গ্রুপও নতুন শিল্প স্থাপন শুরু করে। তাদের জগৎ বিস্তৃত ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, টয়লেট্রিজ, টেক্সটাইল থেকে প্রিন্টিং ও মিডিয়া পর্যন্ত। আর্থিক খাতের সব বিভাগেই স্কয়ারের বিনিয়োগ আছে। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মায় ৩০ হাজারসহ স্কয়ার গ্রুপের ৬০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত।
স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কাশিয়ানী থানার আড়ুয়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী, একটি ফার্মেসির মেডিকেল অফিসার। স্যামসন চৌধুরী ভারতে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৫২ সালে পাবনা জেলার আতাইকুলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে চার বন্ধু মিলে আতাইকুলায় গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মা। স্যামসন এইচ চৌধুরীর সহধর্মিণী অনিতা চৌধুরী ২০২২ সালের ১১ নভেম্বর পরলোকগমন করেন, যিনি স্কয়ারমাতা হিসেবে ৬০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগলে রেখেছিলেন।
স্যামসন এইচ চৌধুরী ঢাকার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এমসিসিআইর সভাপতি ছিলেন। সারাজীবন দেশি-বিদেশি অসংখ্য সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৯৮ সালে আমেরিকান চেম্বার কর্তৃক বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ার হন। পরবর্তী সময়ে বহু দেশি-বিদেশি পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করেন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে সিআইপি মনোনীত হন।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁকে পাবনা শহরের কাশীপুরের বাসভবন এস্ট্রাসে সমাহিত করা হয়।
ব্যবসায়ীকুলের শিরোমণি হলেও তিনি ভুলে যাননি তাঁর অতীত। তিনি পাবনাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি পাবনার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি আধুনিকায়ন করেন। বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র, পাবনা প্রেস ক্লাবসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তিনি সহায়তা করেন। পাবনা প্রেস ক্লাবের সম্মানিত জীবন সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া পাবনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাঁর অবদান।
দেশবরেণ্য এই শিল্পপতির ১০০তম জন্মদিনে তাঁর পরিবার পাবনার এস্ট্রাস খামারবাড়িতে প্রার্থনা সভা এবং বিভিন্ন সংগঠন স্মরণসভার আয়োজন করেছে।
এবিএম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়