Monday, June 24

টিপাইমুখ বাঁধ ও একজন মুশাহিদ বায়মপুরী

এহসানুল হক জসীম::
সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উজানে ভারতের বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য- বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পানি ডাইভার্ট করার মধ্য দিয়ে কৃষির বিকাশ। এই বাঁধ বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। অভিন্ন নদীর উজানে ভারত বাঁধটি নির্মাণ করছে বেআইনিভাবে। এই বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ হয়েছে বাংলাদেশে। তারপরও ভারত বাঁধ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।
আমাদের সরকার যদি আগেই সিলেট অঞ্চলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে কয়েকটা বাঁধ নির্মাণ করতো, তাহলে ভারত এভাবে আমাদেরে বিপদের মুখে ফেলে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিতো না। 


এই বিষয়টি আরো ৬০ বছর আগে বুঝেছিলেন সিলেট অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত আলেম আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী। কৌমী ঘরানার আলেম ছিলেন, কিন্তু চেষ্টা করতেন বৃহত্তর চিন্তা ও গন্ডির মধ্যে থাকতে। ফলে তিনি কোন ইসলামী দল থেকে নির্বাচন না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে এমপি (এমএনএ) নির্বাচিত হয়েছিলেন।
টিপাইমুখ বাঁধ,ছবি:ইন্টারনেট
১৯৬২ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সেই পরিষদে তিনি বেশ কিছু প্রস্তাবনা ও স্কীম তুলে ধরেছিলেন, যা আজো বহু এমপি-মন্ত্রী কল্পনা-ই করতে পারে না। কিন্তু হায়! মুশাহিদ বায়মপুরীর সেই চিন্তা-চেতনা, প্রস্তাবনা ও প্রস্তাবিত স্কীম গ্রহণ করেনি সরকার। সেই আইনসভায় মাওলানা মুশাহিদ বায়মপুরী প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলায় লোভা নদীর মুখে একটি কন্ট্রোল বাঁধ নির্মাণ করার। কল্পনা করুন- কত দুরদর্শী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি হলে পরে এমন প্রস্তাবনা পার্লামেন্টে পেশ করা যায়। তা-ও আজ নয়; আরো প্রায় ছয় দশক আগে। লোভার মুখ সুরমা নদীর উজানে অবস্থিত। অর্থাৎ কানাইঘাটের মুলাগুল এলাকায় লোভা নদী সুরমার সাথে এসে মিলিত হয়েছে।
মুশাহিদ বায়মপুরী সেদিন জাতীয় পরিষদে তথা পার্লামেন্টে এই লোভার মুখে একটি বৃহৎ আকারের বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করেন কুরআন থেকে বিভিন্ন আয়াত পেশ করে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেছিলেন যে, এখানে বাঁধ নির্মিত হলে কৃষিব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। বহু মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

আমরা এখন কানাইঘাটের ১ নং ইউনিয়নে পর্যটন সম্ভাবনার কথা বলছি। সম্ভবত এই সম্ভাবনার দিকে ইংগিত করেই মুশাহিদ বায়মপুরী সেদিন জাতীয় পরিষদে তাঁর প্রস্তাবিত স্কীমে বলেছিলেন যে, লোভার মুখে বাঁধ নির্মিত হলে বিশাল এলাকা মনোরম উদ্যানে পরিণত হবে। লোভার মুখে বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উপর তিনি আরো কয়েকটি এরূপ বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলেন। এ সমস্ত বাঁধের ফলে কৃষির উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বন্যাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। মুশাহিদ বায়মপুরী সিলেট অঞ্চলে নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের চিন্তা করেন এই কারণে যে, উভয় দিকে ছোট ছোট পাহাড় থাকায় সুরমা ও কুশিয়ারায় একাধিক বাঁধ দিয়ে পানি কন্ট্রোলের মাধ্যমে বহুবিদ প্রাকৃতিক সুবিদা নেওয়া যাবে।


ভারত কর্তৃক টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কিন্তু সুরমা, কুশিয়ারা ও লোভা নদীতে বাঁধ হলে আমরা উপকৃত হতাম। অনেক আলেম-উলামা কুরআন-হাদীস থেকে কেবলই মাসলা-মাসায়েল ও ফতোয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু মুশাহিদ বায়মপুরী কুরআনে এমনও বহু আয়াত খোঁজে পেয়েছিলেন যেখানে তিনি সিলেট অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের ইংগিত দেখতে পেয়েছিলেন। আজ ভারত বরাক নদীর উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করছে। অথচ এই বরাক নদীর ভাটিতে এমনই টিপাই বাঁধের স্বপ্ন দেখেছিলেন আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী।

লেখক:পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।










শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়