Thursday, December 27

সিলেট-৫ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে শেষ মুহুর্তে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এ আসনে নির্বাচনে মোট ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক দুবারের সাংসদ আলহাজ্ব হাফিজ আহমদ মজুমদার, ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী মাওঃ উবায়দুল্লাহ ফারুক ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিনের মধ্যে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে নানা শ্রেণি পেশার ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে। প্রচারণার দিক থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার ও লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী সেলিম উদ্দিন এগিয়ে থাকলেও ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী উবায়দুল্লাহ ফারুক প্রচারণার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। ধানের শীষের সমর্থকদের ব্যাপক ধরপাকড় ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়ি হাট-বাজারে পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে ধানের শীষের প্রচারণা থমকে গেছে। ধানের শীষের অনেক নির্বাচনী অফিস পর্যন্তও বন্ধ রয়েছে। এতে ভোটের লড়াইয়ে সুবিধা জনক অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার। অপর দিকে নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক প্রচারণা করে যাচ্ছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন এমপি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নির্বাচনী সমঝোতার মাধ্যমে তিনি সিলেট-৫ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনের পর থেকে কানাইঘাট-জকিগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্থবায়ন ও সবসময় নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকার কারণে বিয়ানীবাজারের বাসিন্দা হলেও সেলিম উদ্দিন ভোটারদের মন জয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের মত শক্তিশালী না হলেও লাঙ্গল প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে আসনটি ধরে রাখার জন্য প্রতিদিন জেলা জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী মাঠে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড করার কারণে সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচনী মূল প্রতিদ্বন্ধিতায় উঠে এসেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক দুবারের এ আসনের সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার একজন স্বজ্জন ব্যক্তি হিসাবে ভোটারদের কাছে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। নির্বাচনের শুরুতে নানা কারণে তিনি ভোটের লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তার ভোট বাড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে বিজয়ী করার জন্য শতশত নেতাকর্মীরা সরকারের উন্নয়ন মূলক কমর্কান্ড তুলে ধরে কানাইঘাট-জকিগঞ্জকে সব দিক থেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন মজুমদারকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের সমর্থন আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ধর্ম ভিত্তিক দল আল-ইসলাহ তাকে সমর্থন দেওয়ায় এবং জামায়াতের ঘোর বিরুধী কওমী পন্থি একাংশের ভোট মজুমদার পাবেন এমন ধারণা ভোটের মাঠে রয়েছে। সিলেট-৫ আসনে অতীতের সকল সংসদ নির্বাচনে আলেম উলামা অধ্যুষিত এ আসনে ধর্মপ্রাণ ভোটাররা জয়পরাজয় নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুক একবার ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমিয়তের দলীয় প্রতীক খেজুর গাছ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে উল্লেখযোগ্য ভোট পান তিনি। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সাংসদ মাওঃ ফরিদ চৌধুরীকে এবার মনোনয়ন না দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে মাওঃ উবায়দুল্লাহ ফারুককে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়। কওমী পন্থী আলেম উবায়দুল্লাহ ফারুক ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মী শুরু থেকে ফারুকের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে স্বক্রীয় রয়েছেন। জামায়াত ফারুকে প্রথমে মেনে না নিলেও নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে জামায়াত ধানের শীষের এ প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন দিয়ে মাঠে নামায় ভোটের লড়াইয়ে উবায়দুল্লাহ ফারুক বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তার পর ফারুকের নিজ সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাংগঠনিক শক্তি নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় রয়েছে। জোটের শরীক দল খেলাফত মজলিস নির্বাচনী মাঠে ফারুকের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।

 এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,২৪,৩১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৬৩,১৯১ জন আর মহিলা ভোটার ১,৬১,১২১ জন। এবারের নির্বাচনে এ আসন থেকে অন্যান্য দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন, ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত এম.এ মতিন চৌধুরী মিনার, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত নুরুল আমিন হাতপাখা, গণফোরাম মনোনীত বাহার উদ্দিন আল রাজী উদীয়মান সূর্য, মুসলিম লীগ-বি.এম.এল মনোনীত শহীদ আহমদ চৌধুরী হারিকেন ও একমাত্র সতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল মুনির চৌধুরী সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ আসনের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে হাফিজ আহমেদ মজুমদার নৌকা প্রতীক নিয়ে ১,০৯,৬৯০ ভোটে বিজয়ী হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী মাওঃ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িপাল্লা নিয়ে ৭৮,০৬১ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী মাওঃ ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ৭৭,৭৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোণীত প্রার্থী হাফিজ আহমেদ মজুমদার পেয়েছিলেন ৫২,৮৮৫ ভোট। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত হাফিজ আহমেদ মজুমদার নৌকা প্রতীক নিয়ে ২৯,৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জামাতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ২৮,১২০ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল হক মিনার প্রতীক নিয়ে ২৬,২৬৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। আর এবারের একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় পার্টি আসনটি পুণরায় ধরে রাখা ও এ আসনে বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচন ছাড়া কখনও ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। যার কারণে এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে শেষ মুহুর্তে এ আসনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকের মধ্যে তুমুল লড়াই হবে বলে অধিকাংশ ভোটাররা মনে করেন।

কানাইঘাট নিউজ ডটকম/নিউ/এম আর/ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ইং

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়