Thursday, April 19

কানাইঘাটে ডাকাতের গুলিতে নিহতের ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাট সদর ইউ.পির ছোটদেশ আগফৌদ গ্রামে এক প্রবাসী পরিবারে দুর্ধর্ষ ডাকাতির সময় অস্ত্রধারী ডাকাত দলের গুলিতে ইফজাল উদ্দিন (৪৫) নামে এক যুবক নিহতে ঘটনায় বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় গত বুধবার রাত অনুমান ২টার দিকে ১২/১৫ জনের একটি অস্ত্রধারী ডাকাতদল ছোটদেশ গ্রামের আব্দুল জলিলের নির্জন একতলা পাকা বসত বাড়ীতে হানা দেয়। প্রথমে ঘরের কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে পরে বসত ঘরের একটি কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের নারী-পুরুষসহ সবাইকে অস্ত্রের মাধ্যমে জিম্মি করে ঘরের মালামাল তছনছ শুরু করে ডাকাতরা। এ সময় সৌদি প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা বেগম শোর চিৎকার শুরু করলে তার শ্বশুড় গৃহকর্তা আব্দুল জলিল একটি কক্ষ থেকে বের হলে ডাকাতরা তাকে মারধর করে বেধে ফেলে। তার চিৎকারে বাড়ীর অন্য একটি ঘরে বসবাসরত আব্দুল জলিলের পুত্র ইফজাল উদ্দিন ঘর থেকে বের হয়ে ডাকাতদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এসময় কয়েকজন ডাকাত কে তিনি আঘাত করতে চাইলে ডাকাতরার কাছ থেকে তার পেটে গুলি ছুঁড়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের স্বর্ণালংকার ও নগদ কিছু টাকা ও দামী জিনিসপত্র লুট করে প্রায় আধাঘন্টা বাড়ীতে তান্ডব চালিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায়। ডাকাতরা চলে যাবার পর বাড়ীর লোকজনের শোর চিৎকারে আশপাশ বাড়ীর লোকজন ঘুম জেগে উঠে গুলিবিদ্ধ ইফজালুর রহমানকে উদ্ধার করে সিলেট সিওমেক হাসপাতালে নিয়ে
যাবার পথে পথিমধ্যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য সিলেট মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এদিকে ডাকাতদের গুলিতে একজন নিহতের সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক রাতে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ ডাকাতির স্থান পরিদর্শন করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঘটনাস্থলে যান সিলেট উত্তর সার্কেলের এডিশনাল পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, কানাইঘাট সার্কলের এএসপি আমিনুল ইসলাম সরকার, ওসি আব্দুল আহাদ, কানাইঘাট সদর ইউপির চেয়ারম্যান মামুন রশিদ, বানীগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদ আহমদ। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাড়ীর মালিক আব্দুল জলিল ও ঘরের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেন এবং ডাকাতির আলামত ঘুরে দেখেন। এডিশনাল পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করে বলেন, যে ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে অত্যন্ত জগন্যতম ঘটনা। ডাকাতি করে মালামাল লুট ও হত্যার ঘটনার মতো বড় অপরাধ যারা ঘটিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিয়ে বলেন খুনিরা রেহাই পাবে না। পুলিশ ডাকাতির সাথে জড়িত সন্দেহে এক যুবক কে
আটক করেছে তার নাম গোপন রাখা হয়েছে। নিহত ইফজাল উদ্দিনের ২ ভাই স্পেন ও ৩ ভাই সৌদি আরবে থাকেন। বাড়ীতে তিনিসহ তার বাবা-মা ভাইদের স্ত্রী সন্তানরা বসবাস করেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান। থানার ওসি আব্দুল আহাদ ডাকাতির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ডাকাতদের গুলিতে নিহত ইফজালুর রহমান মারা গেছেন। ডাকাতরা কি পরিমাণ মালামাল নিয়ে গেছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে। এদিকে ডাকাতির ঘটনাস্থল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এলাকার শত শত নারী পুরুষ আব্দুল জলিলের বাড়ীতে ভিড় করছেন। নিহতের স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম ও পরিবারের লোকজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এলাকার সবাই এ ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন, ডাকাতি ও হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। প্রসঙ্গত যে, কানাইঘাট উপজেলার সার্বিক আইন শৃংখলা ভাল থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর পর ডাকাতদের গুলিতে একজন নিহতের ঘটনা ঘটল। সর্বশেষ ডাকাতি ও একজনের প্রাণহানীর ঘটনায় বাড়ীর গৃহকর্তা আব্দুল জলিল থানায় আজ বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামী করে ডাকাতি ও হত্যা মামলা দায়ের করেছেন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ডাকাতির ঘটনা উদঘাটনের জন্য পুলিশের সিআইডি ক্রাইমসিন এর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 

কানাইঘাট নিউজ ডট.কম/১৯ এপ্রিল

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়