Wednesday, December 14

কানাইঘাট উপজেলা যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা


সারোয়ার কবির:
 ২০১৩ সালের ১৪ই ডিসেম্বর রাতে কানাইঘাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন কানাইঘাট উপজেলা যুবলীগের অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম। ঐদিন রাতে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও তাদের দোসরদের সারাদেশে হামলা-ভাংচুরের প্রতিবাদে কানাইঘাট বাজারে কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিছিল শেষে বাড়ি ফিরছিলেন নজরুল। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার নন্দীরাই নামক স্থানে তাকে মোটর সাইকেল থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যা কানাইঘাটের রাজনীতির ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম ও নৃশংস। কানাইঘাটের শত বছরের রাজনৈতিক সম্প্রীতির ইতিহাসে এমন বর্বরোচিত ও নৃশংসতম ঘটনা এর আগে কেউ দেখেনি। নজরুলের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার হারিয়েছে তাদের উপার্জনক্ষম সন্তানকে, উপজেলা আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন নিষ্ঠাবান কর্মীকে আর কানাইঘাটের সাধারণ মানুষ হারিয়েছে তাদের আস্থা, বিশ্বাস আর রাজনৈতিক সম্প্রীতি-সৌহার্দের ইতিহাসকে। আমাদের শত বছরের সৌহার্দ- সম্প্রীতির ইতিহাসকে যারা কলঙ্কিত করলেন তারা কি এই পবিত্র মাটির সন্তান নন? না কি কানাইঘাটের এই পবিত্র মাটি তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছে? এই নৃশংস ঘটনা যারা ঘটালেন একবারের জন্যও কি মনে আসেনি সৃষ্টির স্রষ্টার নিজ হাতে তৈরী আরেকজন মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছেন? একবারও কি নজরুলের দুটি অবুঝ সন্তানের কথা মনে পড়লো না? একবারও মনে পড়লো না নজরুল কোন এক মায়ের, কোন এক বাবার সন্তান ? মনে কি আসেনি নজরুল কোন এক বোনের স্বামী ? নজরুলকে হত্যা করে কি এমন ফায়দা লুটলেন, যে ফায়দার কান্না আজও কাঁদছে নজরুলের দুটি অবুঝ শিশু। নজরুল ইসলামের বিধবা স্ত্রীর কাছে একবার গিয়ে জেনে আসুন, শুনে আসুন তাঁর স্বামী হারানোর আর্তনাদ । সন্তান হারানোর শোক সইতে না পেরে নজরুল ইসলামের বৃদ্ধ পিতা মোতাহির আলী ডিলার কয়েকমাসের মধ্যেই মারা যান । মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত নজরুলের বৃদ্ধ পিতা আর্তনাদ করেছেন, সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন। সেই আর্তনাদ আপনার প্রভুর কাছে গিয়েছে। যে প্রভুর দোহাই দিয়ে আপনি/ আপনারা রাজনীতি করেন? আমি আর্তনাদ শুনি নজরুল ইসলামের ছোটভাই সালেহ আকরামের। সভ্য পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে কোন ভাই তার আপন ভাইয়ের রক্তাক্ত লাশ নিয়ে পিতার সামনে, রক্তাক্ত ভাইয়ের নিথর দেহ নিয়ে ভাইয়ের অবুঝ সন্তানের সামনে কিভাবে দাঁড়িয়েছিলো তা আকরামই ভালো করে জানে। কানাইঘাটের শত বছরের রাজনীতি মানুষ খুন করতে শেখায়নি, হানাহানি শেখায়নি। তাহলে যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন নিশ্চয়ই তারা এ সভ্য সমাজ থেকে দূরে। তারা রাজনীতির নামে এ কেমন শিক্ষা নিলেন, যা মানুষকে খুন করতে শেখায় ? রাজনীতি যদি মানুষের জন্য হয়, তাহলে কেনো এই নৃশংসতা ? প্রত্যেক মানুষই তাঁর মাকে খুব ভালোবাসে। এই নিকৃষ্ঠতম ঘটনার সাথে যারা জড়িত আপনি/ আপনারাও তো কোন মায়ের সন্তান, নিশ্চয়ই আপনি/ আপনারা আপনাদের মাকে খুব ভালোবাসেন। আপনার মাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন আপনি যে কাজটি করলেন তা-কি আপনার জন্মদাত্রী মা সমর্থণ করেন। নিশ্চয়ই না । তাহলে মানুষের শরীরে আঘাত করে কেনো? মানুষ হত্যা করে এ কেমন রাজনীতি ? রাজনীতি হবে যুক্তি দিয়ে, তর্ক দিয়ে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের কল্যাণ করে। আমরা জন্ম মাটিকে ভালোবাসি, মা কে ভালোবাসি, বাবাকে ভালোবাসি,ভালোবাসার ভালোলাগার জন্মমাটি কানাইঘাটে আর কোন হত্যাযজ্ঞ দেখতে চাইনা। আর কোন হানাহানি দেখতে চাইনা। শান্তির জনপদ শান্তিতে থাকুক। সভ্য সমাজ থেকে দূরে যারা তারা যেনো মুক্তির পথ দেখে। তারা যেনো সভ্য সমাজের সভ্য মানুষ হয়। সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর আলোয় নিজেদের আলোকিত করে। কোন দূষিত বাতাস যেনো আর মোশাহিদ বায়মপুরী (র:), ফরমুজুল্লাহ গাছবাড়ী (র:), ফয়জুল বারী মহেষপুরী (র:) এর পবিত্র মাটিকে কলঙ্কিত না করে। নজরুলরা এই পবিত্র মাটির সন্তান, এদের হত্যা করে শেষ করা যায়না। ওঁরা যুগ যুগ বেঁচে থাকে মানুষের অন্তরে, আদর্শে আর বিপ্লবে। তৃণমূলের যুবলীগ নেতা নজরুল বেঁচে থাকবেন তাঁর সংগঠনের কর্মীদের অন্তরে, আমাদের হৃদয়ে। নজরুল প্রেরণা হয়ে থাকবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কর্মীদের কাছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বার মধ্য দিয়েই নজরুলরা বেঁচে রইবেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার, কানাইঘাট পৌরসভার ছায়া সুনিবিড় দলইমাটি গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত নজরুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়