Thursday, July 30

কানাইঘাটে তরুণীকে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির নারাইনপুর গ্রামে দরিদ্র পরিবারের (১৭) বছরের এক তরুণীকে ভিট বাড়ী থেকে অপহরণ করে আটকিয়ে রেখে উপর্যুপরি গণধর্ষণ করে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ টয়লেটে ভ্যান্টিলেটারে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর নিহত তরুণী ফরিদা বেগমের কথিত প্রেমিক একই ইউপির পানিছড়া বড়খেওড় গ্রামের মন্তাজ আলী মন্তাইর পুত্র আজির উদ্দিন (২৭) তার বাবা মা ও পরিবারের সদস্যরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত শুক্রবার গভীর রাতে নারাইনপুর গ্রামের মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মোঃ রিয়াজ আলীর মেয়ে ফরিদা বেগম (১৭) কে বসত ঘর থেকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা নিয়ে যায়। ঘটনার দিন রাতে ফরিদা বেগমের পিতা রিয়াজ আলী ও মা রেনু বেগম বাড়ীতে ছিলেন না। ফরিদা বেগম নিখোঁজের পর তার আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করে তার কোন সন্ধান পান নি। নিখোঁজের দুই দিন পর গত রবিবার ফরিদা বেগমের রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত অর্ধ ঝুলন্ত লাশ পার্শ্ববর্তী বাড়ীর আনিছুল হক চৌধুরীর পরিত্যক্ত টয়লেটে পাওয়া যায়। ফরিদা বেগমের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ ফয়াজ আহমদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য মস্তাক আহমদ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ হাজারো মানুষ জড়ো হন। কানাইঘাট থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হলে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর সিলেট ওমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। গত সোমবার নিহতের লাশ জানাজা শেষে গ্রামের গুরুস্তানে দাফন করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা গণধর্ষণের শিকার নিহত ফরিদা বেগমের বাড়ীতে গেলে সেখানে এলাকার নারী ও পুরুষ জড়ো হয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ফরিদা বেগমকে অপহরণ করে গণধর্ষণের পর চোখ গলিত, গোপন স্থান ক্ষত বিক্ষত করে এবং শরীরের অসংখ্য জায়গায় কুঁছিয়ে, কামড়িয়ে অত্যন্ত নির্মম ভাবে পৈচাশিক কায়দায় হত্যাকান্ড সংঘটিত করে লাশ কোনমতে টয়লেটে ঝুলিয়ে রাখে ধর্ষণকারী খুনী চক্র। কিন্তু পুলিশ এ হত্যাকান্ডের কোন গুরুত্ব না দিয়ে পোস্ট মডেম পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থার সিন্ধাত নেওয়ায় ফরিদা বেগমের সন্দেভাজন খুনী কথিত প্রেমিক আজির উদ্দিন তার পিতা মন্তাজ আলী মন্তাই ও দোলাভাই শরিফ উদ্দিন সহ পরিবারের লোকজন বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এ পৈশাচিক হত্যাকান্ডের সাথে এলাকার আরো অনেকে জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ ফয়াজ আহমদ, ইউপি সদস্য মস্তাক আহমদ সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও নিহত ফরিদা বেগমের স্বজনরা জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান ফয়াজ আহমদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, যেভাবে দরিদ্র ঘরের মেয়ে তরুণী ফরিদা বেগমকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার খুনীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি গত বুধবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন। আদরের সন্তান ফরিদা বেগমকে হারিয়ে মা রেনু বেগম, পিতা রিয়াজ আলী ও ছোট ছোট ভাইবোনেরা সহ আত্মীয় স্বজনরা বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবী করেন। মৃতের গোসল সম্পন্নকারী মহিলা আমিনা বেগম, হাজিরা বেগম, আলছু বেগম জানিয়েছেন, নরপশুরা ফরিদা বেগমকে ধর্ষণ করে যেভাবে হত্যা করেছে তা অত্যন্ত লোমহর্ষক ও বিভৎস। তার গোপন স্থান ও শরীরের অসংখ্য জায়গায় পৈশাচিকতার ক্ষত বিক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তাদের একটাই দাবী এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের যেন পুলিশ গ্রেফতার করে। এলাকাবাসী সিলেটের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের দাবী জানিয়েছেন। এই ব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফরিদা বেগমের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে সিলেট ওমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু নিহতের পরিবারের কেউ অদ্যবধি পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের করতে আসেনি। ফরিদা বেগমকে ধর্ষণ করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। পোস্ট মডাম রিপোর্ট পাওয়ার পর এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তদন্ত চলছে। পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হলে খুনীদের গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি জানান। নিহতের পিতা রিয়াজ আলী জানিয়েছেন তিনি আজকের মধ্যে থানায় মামলা দায়ের করবেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়