Saturday, September 13

উলিপুরে বেকার ৫ যুবকের বাড়তি আয়ের স্বপ্ন


ভুবন কুমার শীল, কুড়িগ্রাম: চোখ যতদুর যায়, রাস্তার দু’ধারে সবজি বাগান আর বাগান। সবুজের সমারোহ দেখলেই চোখ জুরিয়ে যায়। লক্ষন পত্রিকা বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চালান। তারই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি লিটন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ডিগ্রি ক্লাসে পড়ছেন। হঠাৎ তাদের মাথায় বাড়তি আয়ের চিন্তা আসে। দু’জন মিলে পরামর্শ করেন,বাড়ীর পাশের কাঁচা রাস্তার দুই ধারে সবজি চাষ করবে। কিন্তু পুঁজি অভাবে একই গ্রামের বেকার আরো ৩ যুবককে সাথে নেন। ৫ যুবক মিলে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুই ধারে মাটি উর্বর করে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করেন। এরপর লাউ, কলমি, পুঁই শাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজি বীজ রোপন করেন। অল্পদিনের মধ্যে রাস্তার দুই ধারে রোপিত সবজি গাছ টগবগে হয়ে বেড়ে উঠে। এক পর্যায়ে মাঁচা পেতে লাউ গাছের ডগা তুলে দেন। এরপর সেখানে ৪’শ ৩০ টি পেঁপেঁর চারাও রোপন করেন। প্রতিদিন ৫ জন মিলে পালাক্রমে এসব পরিচর্যা করেন । ২৩ হাজার টাকা ব্যয় করে তারা এখন ৩ লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে তারা ৯ হাজার টাকার শাক বিক্রি করেছেন। গতকাল রোববার সকালে ঐ রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা সুন্দর পরিপাটি এক সবজি ক্ষেত। যেকেউ দেখলে প্রান জুড়াবে। এ উদ্যোগ এলাকার বেকার যুবকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার পূর্ব নাওডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্ধা পত্রিকা বিক্রেতা লক্ষন চন্দ্র রায়, ছাত্র লিটন চন্দ্র, প্রবীন চন্দ্র, সুকান্ত চন্দ্র ও আনন্দ চন্দ্র এই ৫ যুবক তাদের বাড়ীর পাশ দিয়ে যাওয়া সদ্য সংস্কার করা কাঁচা রাস্তার দুই ধারে সবজি চাষ করে বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। সরেজমিন ঐ রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, বিলের উপর নির্মিত ঐ রাস্তা দিয়ে পথচারীরা চলাচল করছে। সকাল ৯ টা। ৫ যুবক মিলে তাদের সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। কথা হয়, পত্রিকা বিক্রেতা লক্ষনের সাথে। সে জানায়, সকাল ১১ টার পর উলিপুরে পত্রিকা আসে। আগে তাড়াতাড়ি গিয়ে আড্ডা দিতাম। তাতে খরচও হতো। এখন সকাল বেলা এই সবজি ক্ষেতে পরিচর্যা করি। ছাত্র লিটন জানায়, সকাল ১০ টা পর্যন্ত পরিচর্যা করি, তারপর কলেজে যাই। অন্য ৩ যুবক পালাক্রমে দিনের বাকি সময় পরিচর্যার কাজ করেন। তবে তাদের অভিযোগ এলাকার কিছু লোক তাদের গরু-ছাগল দিয়ে গাছ নষ্ট করার চেষ্টা করে। বাঁধা দিলে তারা উল্টো, সরকারি রাস্তায় তাদেরও অধিকার আছে বলে শাসায়। বিষয়টি স্থানীয় পৌর মেয়র আব্দুল হামিদ সরকারকে জানানো হয়েছে বলে জানান। তারা জানান, প্রতিটি পেঁপেঁ গাছে ৪০ কেজিও বেশি পেঁপেঁ পাওয়া যাবে। পেঁপেঁর বাজারে বিক্রি করলে দেড় লক্ষাধিক টাকা আসবে। গাছে কয়েক শত লাউ বিক্রি করলে আরো লক্ষাধিক টাকা পাওয়ার আশা করছেন তারা। অবশিষ্ট শবজি বিক্রি করেও ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। আক্ষেপ করে বলেন, নিম্নমানের বীজের কারনে তাদের কিছুটা লোকসান হয়েছে। কৃষি বিভাগের লোকজন শুরু থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দিলে আরো বেশী লাভবান হতে পারতো। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসার অশোক কুমার রায় বলেন, যুবকদের এ প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে অভিভূত হয়েছি। তাদের এ উদ্যোগ ব্যতিক্রমি ও প্রশংসার দাবিদার। আগামীতে তাদের এ উদ্যোগে দেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার যুবকরা উৎসাহিত হবে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যুবকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়