হজ হাজীদের জন্য দোয়া-মোনাজাত করা ও জীবনের যত চাওয়া-পাওয়া আছে_ সবকিছু আল্লাহর কাছে তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ। রাসূল (সা.) ও তার সাহাবিরা যখন, যেখানে এবং যেভাবে দোয়া করেছেন সেভাবেই এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সম্পাদন করা হবে। হজে দোয়া কবুলের অবারিত সুযোগ রয়েছে। আমরা এ ধরনের কয়েকটি স্থান ও কাল এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এক. আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ দেখে দোয়া করা বায়তুল্লাহ দেখামাত্র দোয়া করা। বর্ণিত আছে বায়তুল্লাহ শরিফ প্রথম নজরে আসার পরে যে দোয়া করা হবে তা কবুল হবে। দুই. মুলতাজামকে অাঁকড়ে ধরে দোয়া করা এটি দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবা শরিফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাজাম বলে। সাহাবিরা মক্কায় এসে মুলতাজামে গিয়ে দু'হাতের তালু, দু'হাত, চেহারা ও বক্ষ তার ওপর রেখে দোয়া ও কান্নাকাটি করতেন। তিন. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠে দোয়া করা সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দুই পাহাড়ের মাঝে সাঈ করা হাজীদের জন্য ওয়াজিব। উভয় পাহাড়ই দোয়া করা ও দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম স্থান। সাফা পাহাড়ে উঠে একটু নিরিবিলি স্থান বাছাই করে কাবা সামনে নিয়ে দু'হাত তুলে দীর্ঘ সময় নিয়ে দোয়া করবেন। আরবিতে দোয়া করা জরুরি নয়। আপনি আপনার ভাষায় যত চাওয়া-পাওয়া আছে সব আল্লাহর কাছে তুলে ধরবেন, চোখের পানি ফেলবেন_ এ সুযোগ আপনার জীবনে আর নাও আসতে পারে। চার. আরাফার মাঠে দোয়া করা আরাফার মাঠে আরাফার দিবসের মূল অবস্থান ও আমলই দোয়া। এ দিন দোয়া-মোনাজাতের গুরুত্ব অপরিসীম। জোহর ও আসরের সালাতকে জোহরের প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে একত্রে আদায় করে নেবে। কোনো সুন্নত বা নফল সালাত আদায় না করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দোয়া-মোনাজাত ও কান্না-কাটিতে ব্যস্ত থাকবে। দু'হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। হাদিসে এসেছে, উত্তম দোয়া, আরাফার দিবসের দোয়া এবং উত্তম কথা, যা আমি এবং আমার আগের নবীরা বলেছেন। 'আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তার, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।' (তিরমিজি : ৩৫৮৫)। পাঁচ. মুজদালিফায় মাশআরুল হারামে অবস্থান করে দোয়া করা মুজদালিফায় অবস্থানকালে দোয়া করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমরা যখন আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করবে, মাশআরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে।' (বাকারা : ১৯৮)। রাসূল (সা.) মুজদালিফায় ফজরের সালাত আদায়ের পর 'কুজা' পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং সেখানে তিনি উকুফ করতেন। এ স্থানটি বর্তমানে মাশআরুল হারাম মসজিদের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত। একেবারে আকাশ পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকতে হয়। মূলত এটিই হলো মুজদালিফার মৌলিক আমল। ছয়. কঙ্কর নিক্ষেপের পর দোয়া করা দোয়া কবুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করা। সাত. বিদায়ী তাওয়াফ শেষে দোয়া করা হজের সব কর্ম পালন শেষ করে দেশে ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। তাওয়াফ শেষে আপনি মুলতাজামের কাছে চলে যাবেন। মুলতাজামে চেহারা, বুক, দুই বাহু ও দুই হাত রেখে দোয়া করবেন। এটিই আপনার শেষ সুযোগ। একে কাজে লাগান। আল্লাহর কাছে যা খুশি আপনি চাইতে পারেন। আট. জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করা তাওয়াফ শেষ করার পর, আপনি তাওয়াফের সালাত আদায় করবেন। সালাত আদায় করার পর এখানে কোনো দোয়া-মোনাজাত নেই। এখন আপনি জমজমের কাছে চলে যাবেন। জমজমের পানি পানি করবেন। জমজমের পানি পান করার সময় আপনার যা খুশি আল্লাহর কাছে চাইবেন। এখানে আপনি যা দোয়া করবেন, আল্লাহ তায়ালা তাই কবুল করবেন। দোয়ার সময় বেশি বেশি কান্নাকাটি করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়ে দোয়া করতে হবে। কারণ, অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না। দোয়ায় কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে দোয়া করা খুবই জরুরি। দোয়ার সময় এ বিশ্বাস মনে পোষণ করবেন, আল্লাহ অবশ্যই আমার কথা শুনছেন এবং আমার দোয়া কবুল করছেন।
লেখক : খতিব, ইমামগঞ্জ শাহী জামে মসজিদ, ঢাকা
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়