Sunday, June 30

হাড়িভাঙ্গা আম এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে

রংপুর: বাংলাদেশে আমের নগরী বলে রাজশাহী ও এর আশপাশের জেলা পরিচিত হলেও এবার তাতে ভাগ বসিয়েছে রংপুর। এ অঞ্চলের হাড়িভাঙ্গা আমের সুখ্যাতি এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এ আম চাষ হচ্ছে। হাড়িভাঙ্গা আম চাষ করে অনেকই এখন স্বাবলম্বি হয়ে উঠেছেন। এতোদিন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলী, ল্যাংড়া, হিমসাগর এবং মিশ্রি ভোগ আমের কদর ছিলো আমাদের দেশে। কিন্তু এখন এসব আমের সুখ্যাতিকে ছাপিয়ে হাড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
মাত্র ৫ বছর আগে প্রথম রংপুরের বদরগঞ্জের পদাগঞ্জে আঁশমুক্ত, রসালো এবং সুস্বাদু এ আমের ফলন শুরু হয়। আস্তে আস্তে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে রংপুরের অন্যান্য এলাকায়।
এরপর থেকেই জেলার প্রায় ৫০০ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ শুরু হয়। পায়রাবন্দ, লতিফপুর, শাল্টি গোপালপুর, দূর্গাপুর, ইমাদপুর, বদরগজ্ঞ উপজেলার পদাগজ্ঞ এবং শ্যামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে হাজার হাজার বাগানে এ আম চাষ হচ্ছে। এসব এলাকার মাটি লাল হওয়ায় ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসলের ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা আবাদী জমিতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে হাড়িভাঙ্গা আমের চারা রোপন করে।
হাড়িভাঙ্গা আমের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে আমটি অত্যান্ত সুস্বাদু, কোনো আঁশ নেই, বড় ছোট দুই ধরনের এই আম খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু এবং এর ঘ্রানও খুব সুন্দর। আমের মুকুল ধরার সঙ্গে সঙ্গে আগাম আমের পুরো বাগান বিক্রি হয়ে যায়। বড় বড় ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে আমের বাগান কিনে নিয়ে নিজেরাই পরিচর্যা করে বড় করে তারপর বাজারে বিক্রি করে।
চলতি মৌসুমেও আমের ভাল ফলন হয়েছে। ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মন দরে বাগানে এ আম বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিনই কমপক্ষে ১০০ ট্রাক আম কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা। আর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাড়িভাঙ্গা আম চাষ করে রংপুরের অনেকেই এখন স্বাবলম্বি হয়ে উঠেছেন।
আকবার হোসেন নামের এক আম চাষি বলেন, ‘গত ৩ বছর ধরে আমরা হাড়িভাঙ্গা আম চাষ করছি। ধান বাদ দিয়ে আমরা এখন হাড়িভাঙ্গা আমের আবাদ করছি।’
আব্দুস সালাম নামের অপর এক চাষি বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি ৪০০ গাছে আড়াইশ মন আম আছে। যদি ৫০-৬০ কেজি দরে বিক্রি করি তাহলে আমাদের ৫-৬ লাখ টাকা আসে।’
এছাড়া হাড়িভাঙ্গা আম এখন দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
রংপুর কৃষি উদ্যান বিশেষজ্ঞ এমএ ওয়াজেদ সাংবাদিকদের বলেন, হিমাগার ও গবেষণাগার স্থাপন করা হলে এ আম রংপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল হতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের উত্তরাঞ্চলে আম সংরক্ষণে এবং আমের জুস তৈরির কোনো কারখানা নেই। এ অঞ্চলে এ ধরনের কারখানা গড়ে উঠলে এবং এর বাজার আরো ব্যাপক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ আরো বিস্তার লাভ করবে।’(ডিনিউজ)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়