কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জারে’ চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ক্রিকেটাঙ্গনে। বাজারেও রয়েছে বইটির তুমুল চাহিদা। তবে এর মূল্যও চোকাতে হতে পারে তাকে।
গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধ, জাভেদ
মিঁয়াদাদ, ওয়াকার ইউনিস কিংবা ২০১০-এ আমিরদের স্পট ফিক্সিং নিয়ে নেতিবাচক
তথ্য দেয়ায় নয়; আফ্রিদি বিপাকে পড়তে পারেন নিজের বয়স সংক্রান্ত জটিলতা
সৃষ্টি করায়। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে
সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড রয়েছে তার দখলে। সেটিও বাতিল হতে পারে।
১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে
মাত্র ৩৭ বলে ঝড়ো সেঞ্চুরি করেন আফ্রিদি। দীর্ঘদিন সেটি ছিল সবচেয়ে কম বলে
দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা
ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্স তা ভেঙে দিয়েছেন। তবে অদ্যাবধি সবচেয়ে কম বয়সে
সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডটি এখনো তার দখলে। ওই সময় পাকিস্তানের সাবেক
অধিনায়ককের বয়স ছিল ১৬ বছর ২১৭ দিন।
তবে নিজের আত্মজীবনীতে তা সঠিক নয় বলেছেন
আফ্রিদি। ‘গেম চেঞ্জারে’তিনি উল্ল্যেখ করেছেন, ওই সময় আমার বয়স ১৬ নয়, ছিল
১৯। ৫ বছর বয়স কমানো হয়েছিল। আইসিসিকে পিসিবি জানিয়েছিল আমার জন্ম ১৯৮০
সালে। কিন্তু আসলে আমি জন্মগ্রহণ করি ১৯৭৫ সালে।
এ তথ্য জানাজানির পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব
ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। আফ্রিদির বিশ্বরেকর্ডটি বই থেকে সরানোর
চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে খোদ আইসিসির অন্দরমহলেই চলছে
তুমুল আলোচনা।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আত্মজীবনীতে
আফ্রিদি নিজেই বয়স কমানোর কথা ফাঁস করেছেন। তাই রেকর্ড বই থেকে তাকে সরিয়ে
দেয়া কার্যত নিশ্চিত। সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কীভাবে সেটি করা হবে, এখন
শুধু তা নিয়েই চলছে আলোচনা।
জানা গেছে, পরিসংখ্যানবিদের সঙ্গে কথা বলছেন
আইসিসির শীর্ষ কর্তারা। কীভাবে রেকর্ডের পাতায় এ ভুল সংশোধন করা যায় সেটা
খতিয়ে দেখছেন তারা।
আফ্রিদির পরই সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে
ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে আফগানিস্তানের উসমান গনির। ২০১৪ সালে
বুলাওয়াতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪২
দিন। বই থেকে আফ্রিদিকে মুছে ফেলা হলে তিনিই হবেন সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান।
এমনটি হলে আফগানিস্তানকে প্রথম বিশ্বরেকর্ড উপহার দিতে চলেছেন গনি।
অলিম্পিক খেলায় ফলাফল বা পুরস্কার দেয়ার পরও
ডোপ পরীক্ষায় পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ায় খেলোয়াড়দের পদক কেড়ে নেয়ার প্রচুর
নিদর্শন রয়েছে। ১৯৮৮ সোল অলিম্পিকে বেন জনসনের ১০০ মিটারে সোনা জয়ের পর পদক
হারানোর ঘটনা বিখ্যাত হয়ে আছে। ২০০০ সিডনি অলিম্পিকে সোনাজয়ী মারিয়ন
জোন্সের পদক কেড়ে নেয়া হয় ‘বালকো’ডোপ কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়।
ক্যান্সারজয়ী সাইক্লিস্ট লান্স আর্মস্ট্রংয়ের সাতটি ট্যুর দ্য ফ্রান্স পদক
কেড়ে নেয়া হয় ব্লাড ডোপিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়।
আফ্রিদির বিরুদ্ধে অবশ্য ডোপিংয়ের অভিযোগ
ওঠেনি। তবে বয়স নিয়ে নিজের স্বীকারোক্তির পর প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, সর্বকনিষ্ঠ
সেঞ্চুরিয়ান নন তিনি। ক্রিকেটে শেন ওয়ার্নের মতো তারকা ডোপিংয়ের অপরাধে
শাস্তি পেয়েছেন। কিন্তু এভাবে রেকর্ড বই থেকে নাম মুছে ফেলার ঘটনা ক্রিকেটে
নজিরবিহীন।
সমস্যা হচ্ছে, আত্মজীবনীতে স্বীকারোক্তির
পরও আফ্রিদির বয়স নিয়ে বিভ্রান্তি কাটেনি। বরং, তা আরো বেড়েছে। তিনি
বলেছেন, বিশ্বরেকর্ডের সময় তার বয়স পাঁচ বছর কমানো ছিল। আবার বলেছেন, ওই
সময় বয়স ১৬ নয়, ছিল ১৯। গাণিতিক হিসাবে পাঁচ বছর বাড়ালে সেটা হয় ২১।
অর্থ্যাৎ কারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির সময় তার বয়স ছিল ২১ বছর ২১৭ দিন।
স্বাভাবিকভাবেই সাবেক পাক তারকা অলরাউন্ডারের বয়স নিয়ে গরমিল থেকে যাচ্ছে।
এ নিয়ে আফ্রিদি পরে দাবি করেছেন, ছোট্ট ভুল
হয়েছে। পাঁচ নয়, আসলে তিন বছর বাড়ানো হয়েছিল। তাতেও কোনো হিসাব মিলছে না।
তার এ ‘একাধিক’বয়স নিয়ে বিভ্রান্ত ক্রিকেটপ্রেমীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়েছে
হাসির রোল।
তবে আইসিসি অবশ্য হাসিমজা নয়, গুরুত্ব
সহকারে বিষয়টি দেখছে। বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা মনে করছে, নিজেই
স্বীকার করে নেয়ায় আফ্রিদিকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’দেয়ার জায়গা থাকছে না।
খবর বিভাগঃ
খেলাধুলা
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়