কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ।
তাই তাঁর জন্য হৃদয়ের গভীরে মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতির ঈমানী কর্তব্য।
পবিত্র কোরআন মজিদে স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসূলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়।
দরুদে ইব্রাহিমের আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ-
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (বুখারী, মিশকাত)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব: ৫৬)।
আয়াতের তাফসীর:
(এক) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ নবীর (সা.) প্রতি সীমাহীন করুণার অধিকারী। তিনি তাঁর প্রশংসা করেন। তাঁর কাজে বরকত দেন। তাঁর নাম বুলন্দ করেন। তাঁর প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তার প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে একমাত্র মাহমুদ তথা সবোর্চ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন। পূর্বাপর বিষয়বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দিলে এ বর্ণনা পরস্পরায় একথা কেন বলা হয়েছ তা পরিষ্কার অনুভব করা যায়।
তখন এমন একটি সময় ছিল যখন ইসলামের দুশমনরা এ সুস্পষ্ট জীবন ব্যবস্থার বিস্তার ও সম্প্রসারণের ফলে নিজেদের মনের আক্রোশ প্রকাশের জন্য নবী করীমের (সা) বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ দিয়ে চলছিল এবং তারা নিজেরা একথা মনে করছিল যে, এভাবে কাঁদা ছিটিয়ে তারা তার নৈতিক প্রভাব নির্মূল করে দেবে। অথচ এ নৈতিক প্রভাবের ফলে ইসলাম ও মুসলমানরা দিনের পর দিন এগিয়ে চলছিল। এ অবস্থায় আলোচ্য আয়াত নাযিল করে আল্লাহ দুনিয়াকে একথা জানিয়ে দেন যে, কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা আমার নবীর দুর্নাম রটাবার এবং তাকে অপদস্ত করার যতই প্রচেষ্টা চালাক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হবে।
কারণ আমি তাঁর প্রতি মেহেরবান এবং সমগ্র বিশ্ব জাহানের আইন ও শৃংখলা ব্যবস্থা যেসব ফেরেশতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তারা সবাই তার সহায়ক ও প্রশংসাকারী। আমি যেখানে তার নাম বুলন্দ করছি। এবং আমার ফেরেশতারা তার প্রশংসাবলীর আলোচনা করছে সেখানে তার নিন্দাবাদ করে তারা কীলাভ করতে পারে? আমার রহমত ও বরকত তার সহযোগী এবং আমার ফেরেশতারা দিনরাত দোয়া করছে, হে রাব্বুল আলামীন! মুহাম্মাদের (সা.) মর্যাদা আরো বেশি উঁচু করে দাও এবং তার দীনকে আরো বেশি প্রসারিত ও বিকশিত করো। এ অবস্থায় তারা বাজে অস্ত্রের সাহায্যে তাঁর কী ক্ষতি করতে পারে? (তাফসীর ফি যিলালিল কোরআন ও জালাইন)
(দুই) এ আয়াতে মুসলমানদেরকে দুটো জিনিসের হুকুম দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, ‘সাল্লু আলাইহে’ অর্থাৎ তার প্রতি দরুদ পড়। অন্যটি হচ্ছে, ‘ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা’ অর্থাৎ তার প্রতি সালাম ও প্রশান্তি পাঠাও। ‘সালাত’ শব্দটি যখন ‘আলা’ অব্যয় সহকারে বলা হয় তখন এর তিনটি অর্থ হয়: এক, কারো অনুরক্ত হয়ে পড়া! দুই, কারো প্রশংসা করা। তিন, কারো পক্ষে দোয়া করা। এ শব্দটি যখন আল্লাহর জন্য বলা হবে তখন একথা সুম্পষ্ট যে, তৃতীয় অর্থটির জন্য এটি বলা হবে না। কারণ আল্লাহর অন্য কারো কাছে দোয়া করার ব্যাপারটি একেবারেই অকল্পনীয়। তাই সেখানে অবশ্যই তা হবে শুধুমাত্র প্রথম দুটি অর্থের জন্য। কিন্তু যখন এ শব্দ বান্দাদের তথা মানুষ ও ফেরেশতাদের জন্য বলা হবে তখন তা তিনটি অর্থেই বলা হবে। তার মধ্যে ভালোবাসার অর্থও থাকবে, প্রশংসার অর্থও থাকবে এবং দোয়া ও রহমতের অর্থও থাকবে। কাজেই মুমিনদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে ‘সাল্লু আলাইহে’ এর হুকুম দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা তাঁর ভক্ত-অনুরক্ত হয়ে যাও তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দোয়া করো। (মায়ারেফুল কোরআন, মুল মুফতি শফী, বাংলা অনুবাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান)।
দরুদের বিষয়: নবী করীমের (সা.) ভদ্রতা ও মহানুভবতার ফলে তিনি কেবল নিজেকেই এ দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে নেননি। বরং নিজের সঙ্গে তিনি নিজের পরিজন স্ত্রী ও পরিবারকেও শামিল করে নিয়েছেন। স্ত্রী ও পরিবার অর্থ সুস্পষ্ট আর পরিজন শব্দটি নিছক নবী করীমের (সা.) পরিবারের লোকদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং এর মধ্যে এমনসব লোকও এসে যায় যারা তার অনুসারী এবং তাঁর পথে চলেন। পরিজন অর্থে মূলে ‘আল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবি ভাষার দৃষ্টিতে ‘আল’ ও ‘আহল’ এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, কোনো ব্যক্তির ‘আল’ হচ্ছে এমন সব লোক যারা হয় তার সাথি, সাহায্যকারী ও অনুসারী, তারা তার আত্মীয় বা অনাত্মীয় হোক বা না হোক অবশ্যই তার আত্মীয়। কোরআন মজীদের ১৪টি স্থানে ‘আলে’ ফেরাউন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো জায়গাও আহল মানে ফেরাউনের পরিবারের লোকেরা নয়। বরং এমন সমস্ত লোক যারা হজরত মূসার মোকাবিলায় ফেরাউনের সমর্থক ও সহযোগী ছিল। (দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন সূরা বাকারার ৪৯-৫০, আলে ইমরানের ১১, আল আরাফের ১৩০ ও আল মু’মিনূনের ৪৬ আয়াত সমুহ)
কাজেই এমন সমস্ত লোকই আলে মুহাম্মাদ (সা.) এর বহির্ভূত হয়ে যায় যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের অনুসারী নয়। চাই, তারা নবীর পরিবারের লোকই হোক না কেন। পক্ষান্তরে এমন সমস্ত লোক ও এর অন্তরভুক্ত হয়ে যায় যারা নবী করীমের (সা.) পদাংক অনুসরণ করে চলে, চাই তারা নবী করীমের (সা.) এর কোনো দূরবর্তী রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় নাই হোক। তবে নবী পরিবারের এমন প্রত্যেতটি লোক সর্বতোভাবেই আলে মুহাম্মাদের (সা.) অন্তরভুক্ত হবে যারা তাঁর সঙ্গে রক্ত সম্পর্ক ও রাখে আবার তার অনুসারীও। (মায়ারেফুল কোরআন, মুল মুফতি শফী, বাংলা অনুবাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান)।
ইমামদের মতামত: নবী করীমের (সা.) প্রতি দরুদ পড়া ইসলামের সুন্নাত। তার নাম উচ্চারিত হলে তার প্রতি দরুদ পাঠ করা মুস্তাহাব। বিশেষ করে নামাজে দরুদ পড়া সুন্নাত। এ বিষয়ে সমগ্র আলেম সমাজ একমত। সমগ্র জীবনে নবী (সা.) এর প্রতি একবার দরুদ পড়া ফরজ, এ ব্যাপারে ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারণ আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর হুকুম দিয়েছেন। কিন্তু এরপর দরুদের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে বিভিন্ন মত দেখা দিয়েছে।
ইমাম শাফেঈ (রা.) বলেন, নামাজে একজন মুসল্লী যখন শেষবার তাশাহহুদ পড়ে তখন সেখানে সালাতুন আলান নবী পড়া ফরজ। কোনো ব্যক্তি এভাবে না পড়লে তার নামাজ হবে না। সাহাবীগণের মধ্য থেকে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ও হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.),তাবেঈদের মধ্য থেকে শা’বী, ইমাম মুহাম্মদ বাকের, মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব কুরযী ও মুকাতিল ইবনে হাউয়ান এবং ফকীহগণের মধ্য থেকে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহও এ মতের প্রবক্তা ছিলেন। শেষের দিকে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলও মত অবলম্বন করেন।
ইমাম আবু হানীফা (রা.), ইমাম মালেক (রা.) ও অধিকাংশ উলামা এ মত পোষণ করেন যে, দরুদ সারা জীবনে শুধুমাত্র একবার পড়া ফরজ। এটি কালেমায়ে শাহাদাতের মতো। যে ব্যক্তি একবার আল্লাহকে ইলাহ বলে মেনে নিয়েছে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতের স্বীকৃতি দিয়েছে সে ফরজ আদায় করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে যে একবার দরুদ পড়ে নিয়েছে সে নবীর ওপর সালাত পাঠ করার ফরজ আদায়ের দায়িত্ব মুক্ত হয়ে গেছে। এরপর তার ওপর আর কালেমা পড়া ফরজ নয় এবং দরুদ পড়াও ফরজ নয়।
একটি দল নামাজে দরুদ পড়াকে সকল অবস্থায় ওয়াজিব গণ্য করেন। কিন্তু তারা তাশাহহুদের সঙ্গে তাকে শৃংখলিত করেন না। অন্য একটি দলের মতে প্রত্যেক দোয়ায় দরুদ পড়া ওয়াজিব। আরো কিছু লোক নবী করীমের (সা.) নাম এলে দরুদ পড়া ওয়াজিব বলে অভিমত পোষণ করেন। অন্য একটি দলের মতে এক মজলিসে নবী করীমের (সা.) নাম যতবারই আসুক না কেন দরুদ পড়া কেবলমাত্র একবারই ওয়াজিব। কেবলমাত্র ওয়াজিব হবার ব্যাপারে এ মতবিরোধ। তবে দরুদের ফজিলত, তা পাঠ করলে প্রতিদান ও সওয়াব পাওয়া এবং তার একটি অনেক বড় সৎকাজ হবার ব্যাপারে তো সমস্ত মুসলিম উম্মাত একমত। (তাফহীমূল কোরআন, মুল- সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী)।
দরূদ পাঠর ফজিলত: (১) রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল- আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। (সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিযী ১/১০১)
অন্য হাদীসে আছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। (সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৩)
অন্য বর্ণনায়, আবু বুরদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৫১৩)
(২) ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন- হজরত আমের ইবনে রবীআহ (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, ‘আমার উপর দরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দরূদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৯০৭)
(৩) দরুদ পাঠকারীর জন্য শাফাআত অবধারিত- রুওয়াইফি ইবনে ছাবিত আলআনসারী (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে।’ (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ৫/৪৪৮১; মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২৫৪)
(৪) কিয়ামতের দিন নবীজীর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে- আবদুললাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে।’ (জামে তিরমিযী ১/১১০)
(৫) দোজাহানের সকল মকসূদ হাসিল হবে– হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিকরুল্লাহর খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়া পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসূদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (জামে তিরমিযী ২/৭২; মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৫)
(৬) যে চায় তাকে কোঁচর ভরে দেয়া হোক- হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে চায় আমাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর দরূদ পাঠের সময় তাকে পাত্র ভরে দেয়া হোক, সে যেন এভাবে দরুদ পড়ে।’ (সুনানে আবু দাউদ ১/১৪১)
(৭) গরীব পাবে সদকার সওয়াব- হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দুআয় বলে, এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে।’ (সহীহ ইবনে হিববান ৩/১৮৫)
(৮) উম্মতের সালাম নবীজীর নিকট পৌঁছানো হয়– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার যমীনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ ১/৪৪১; ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৪; সুনানে নাসায়ী ১/১৪৩)।
(৯) দরুদ বিহীন দোয়া আসমান-যমীনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে- হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-যমীনের মাঝে থেমে থাকবে। (জামে তিরমিযী ১/১১০)।
আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার আখেরী রাসূল। তিনি গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালার সর্বশেষ দূত। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতে বিশ্বাস ও আল্লাহর আনুগত্যের দাবি অর্থহীন।
সংগ্রহে: আব্দুল রাফি আব্দুল্লাহ
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়