Tuesday, November 14

বিজিবি'র বাঁধা ! কানাইঘাটে লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর ইজারার গুরুত্বপূর্ণ অংশ সার্ভে করতে পারেনি ভূমি কর্মকর্তারা


নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৭ নভেম্বর কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী সংলগ্ন সুলটুনি মহালের বাংলা টিলার লোভা নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে সুড়ং তৈরী করে পাথর উত্তোলন কালে মাটি চাপায় ৪ শিশু শিক্ষার্থীসহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কোয়ারী এলাকায় অনাকাংখিত দূর্ঘটনা রোধে পাথর কোয়ারীর ইজারার অংশ চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরুতেই স্থানীয় বিজিবি কর্তৃক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাথর কোয়ারীর ইজারাকৃত স্থানের পাথরের মূল উৎসস্থল সাউদগ্রাম, বড়গ্রাম অংশ বিজিবি’র বাঁধার কারনে সার্ভে করতে পারেনি ভূমি কর্মকর্তারা। বাংলা টিলায় মাটি চাপা পড়ে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কোয়ারীর ইজারা অংশ চিহ্নিত করে বাহির এলাকা থেকে সব ধরণের পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং ইজারার শর্ত মেনে পাথর উত্তোলন করার জন্য গত ৮ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ জরুরী আইন শৃংখলা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিলেট ৫ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিনের উপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সচেতন মহলের দাবীর প্রেক্ষিতে কোয়ারী এলাকায় সব ধরণের অনাকাংখিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইজারার অংশ চিহ্নিত করে সার্ভে করার মতামত জানালে সেলিম উদ্দিন এমপি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা ও কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনকে কোয়ারী এলাকা চিহ্নিত করে সার্ভে করার নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া গত ৯ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় সেলিম উদ্দিন এমপির উপস্থিতিতে আবারো জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কোয়ারীর ইজারাদার চেয়ারম্যান মস্তাক আহমদ পলাশ কোয়ারীর ইজারার অংশ সার্ভে করার দাবী জানান। এরই প্রেক্ষিতে আজ সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার সার্ভেয়ার মোঃ আব্দুল কাইয়ুম মুন্সী, এসএ শাখার সার্ভেয়ার মোঃ মাহবুবুর রহমান, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সদর ইউপি ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা শরিফ আহমদ কোয়ারীর ইজারার নো-মেন্স ল্যান্ড এলাকার বাহিরে অবস্থিত সীমানা নির্ধারণ করার জন্য সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করলে বিজিবি সেই চিঠিটি গ্রহণ না করে সিলেটের উর্ধ্বতন বিজিবি কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি প্রেরণের জন্য বলেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের সাথে ফোনে কথা বলেন, কিন্তু তারপরও ভূমি কর্মকর্তারা কোয়ারীর নো-মেন্স ল্যান্ড এলাকা চিহ্নিত করার জন্য সেখানে গেলে স্থানীয় লোভাছড়া বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ফোন করে উর্ধ্বতন বিজিবি কর্মকর্তাদের অনুমতি ব্যতিরেকে সেখানে সার্ভে না করার জন্য বললে ভূমি কর্মকর্তারা সেখান থেকে চলে আসেন। যার কারণে কোয়ারীর ইজারাকৃত সীমানার পূর্ণাঙ্গ অংশ সার্ভে করতে পারেননি ভূমি কর্মকর্তারা। কোয়ারীর ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশ জানিয়েছেন, তিনি দেড় পূর্বে কোয়ারী লীজ নেওয়ার পর থেকে সীমানা নির্ধারণ করার জন্য বহু আবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে করেছেন। কিন্তু ইজারার অংশ সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় নি। আজ সেখানে কোয়ারীর এলাকা চিহ্নিত করার জন্য ভূমি কর্মকর্তারা সার্ভে করতে গেলে বিজিবি সার্ভে করতে অনুমতি না দেওয়ায় কোয়ারীর গুরুত্বপূর্ণ অংশের সীমানা চিহ্নিত করতে পারেন নি ভূমি কর্মকর্তারা। ইজারাদারের দাবী যার কারণে, তিনি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কোয়ারী ইজারার একটি অংশ থেকে অবৈধভাবে কিছু ব্যবসায়ী পাথর উত্তোলন করে আসছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলাতানা জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারীর মূল ইজারার অংশ চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে, এটি চলবে। কোয়ারীর একটি অংশের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিজিবি'র আপত্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এ ব্যাপারে বিজিবি'র ৪১ ব্যাটালিয়ানের সিও বরাবরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু উনারা জেলা প্রশাসক মহোদয় স্যারের মাধ্যমে চিঠি পাঠানোর জন্য বলেছেন। স্যারের চিঠির জবাব পায়ার পর বিজিবি'র সহযোগিতা নিয়ে কোয়ারীর ইজারা অংশ সীমানা নির্ধারণ করা হবে। বিজিবি'র কোয়ারী এলাকায় সব ধরনের অনাকাংখিত দুর্ঘটনা রোধে এবং যাতে করে কেউ সেই এলাকার পাহাড়, টিলা বসত বাড়ী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে না পারে এজন্য কোয়ারী এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মানুষকে সচেতন করার জন্য তিনদিনের জন্য মাইকিং শুরু হয়েছে। কোয়ারীর আশপাশ এলাকা ও হাট বাজারে সচেতনতা মূলক ব্যানার, ফেস্টুন টানানো হয়েছে। কেউ ইজারার অংশের বাহিরে পাথর উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়