Saturday, July 29

প্রাপ্তির খাতায় গেল ঈদের দশটি নাটক

প্রাপ্তির খাতায় গেল ঈদের দশটি নাটক

বিনোদন ডেস্ক: আমাদের দেশের নাটকের মূল আকর্ষণ থাকে ঈদকে কেন্দ্র করে। তাই ঈদের সময় বিভিন্ন নির্মাতা তাদের নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অভিনয় কলাকুশলীদের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন নানান প্লটের নানান ধরনের নাটক।

গেলো ঈদে আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল আয়নাবাজি সিরিজ ও ছবিয়াল রিইউনিয়নের কাজ। সেই সঙ্গে নাটকের সময় বিজ্ঞাপন প্রচারের পরিমিত ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি বছরজুড়েই নাটকের একটা স্রোত ছিল।

তবে প্রাপ্তির খাতায় বেশ কিছু নাটক সাড়া ফেলেছিল। প্রচারের আগে তো বটেই প্রচারের পরেও আলোচনায় ছিল। অভিনয়, নির্মাণ শৈলীতে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তেমনই দশটি নাটক নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।

মি. জনি:
ঈদের একদম ভিন্নধর্মী কাজ ছিল নির্মাতা রেদওয়ান রনির মি. জনি। সামাজিক-অসামাজিক জীবনের বাইরেও কিছু কিছু গল্প যে অন্য অর্থ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় তা নির্মাতা প্রকাশ করেছেন জনি নামের এক প্রভুভক্ত কুকুরকে দিয়ে। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন মুস্তফা মনোয়ার, আবদুস সামাদ খোকন, জয়িতা এবং কাজী মিয়া। এটি দিয়েই ছবিয়ালের ঈদ রিইউনিয়নের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

বিকাল বেলার পাখি:
সব দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে ছবিয়াল রিইউনিয়ন সিরিজের নাটকটি। বানিয়েছেন আদনান আল রাজীব। মূল চরিত্রে ছিলেন অ্যালেন শুভ্র, গুণী অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু, ইলোরা গহর প্রমুখ। আমাদের পরিচিত মধ্যবিত্তের গল্প বিকাল বেলার পাখি। অ্যালেন শুভ্র সাবলিল অভিনয়ের মাধ্যমে যেমন মধ্যবিত্তের সন্তানদের ফুটিয়ে তুলেছে ঠিক তেমনি ফজলুর রহমান বাবু সংসার জীবনে ব্যর্থ এক বাবাকে তুলে ধরেছেন। নাটকটির শেষ দিকের কথাগুলো আবেগতাড়িত করে দেয়- সন্তানের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃসহ দৃশ্যের নাম পিতার পরাজিত মুখ। এই মুখ তাকে বিধ্বস্ত করে দেয়, ধ্বংস করে দেয়। জীবনের সব আয়োজন, সব ছুটে চলা তুচ্ছ মনে হয়, নগণ্য মনে হয়। সংসার তুচ্ছতার খেলা,ভালোবাসাই তার একমাত্র ভেলা।

দ্বন্দ্ব সমাস:
আয়নাবাজী সিরিজের দ্বন্দ্ব সমাস বানিয়েছেন আলোচিত নির্মাতা আশফাক নিপুণ। দুটি ধর্মের একই চেহারার মানুষ ভিন্ন রূপে ধরা দেয়, তা নিয়ে সাজানো নাটকটি। যা শেষ পর্যন্ত দর্শককে বিমোহিত করে রাখে। অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, লহনা সাহা, আবুল হায়াতসহ আরও অনেকে। নাটকের শেষটুকু একটু অন্যরকমই ছিল। কিন্তু আড়ালে ছিল খুব সুন্দর একটা বার্তা- ধর্ম মানুষকে হিংস্র হতে শেখায় না, মানুষই নিজের প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যবহার করে। এছাড়া, গ্রাম রাজনীতির একটা প্রভাব ছিল নাটকে।

মার্চ মাসের শ্যুটিং:
আয়নাবাজী সিরিজের অন্যতম নাটক মার্চ মাসের শ্যুটিং। গল্পটি যুদ্ধের সময় পাবনার শহীদ হওয়া এক তরুণের, যে হয়তো পুনর্জন্মের মাধ্যমে তার অপেক্ষারত মায়ের কাছে ফিরে এসেছিল অন্য কোনোভাবে। নাটকটি ছেলে যুদ্ধে যাওয়ার সময় এক মায়ের অবস্থা যেমন সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছে ঠিক তেমনি হারানো সন্তান ফিরে পাওয়ার পর মায়ের অবস্থাও তুলে ধরা হয়েছে অনবদ্যভাবে। নাটকটি লিখেছেন গাউসুল আলম শাওন। নির্মাণ করেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। মূল চরিত্রে ছিলেন অপূর্ব,নাবিলা এবং গাজী রাকায়েত।

অ্যাওয়ার্ড নাইট:
উচ্চ লেভেলের সারকাজম সমৃদ্ধ নাটক হয়ত বাংলাদশে এই প্রথম। সারকাজমের আড়ালে মূলত আমাদের দেশের অভিনেতাদের বর্তমান অবস্থা এবং নামকরা কিছু চ্যানেলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিক হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে। নির্মাণে ছিলেন সাফায়েত মনসুর রানা। অভিনয়ে ছিলেন সাফায়েত মনসুর রানা, জন কবির, জয়রাজ, সাইফ চন্দন, হিল্লোল, নওশীন, ইরফান সাজ্জাদসহ আরও অনেকে।

চিকন পিনের চার্জার:
হয়ত হাসির একটা নাম। যেসব মানুষ সাধারণত এসব ফোন ব্যবহার করেন তাদের ব্যাকডেটেড বলা হয়ে থাকে। এখন আধুনিক যুগে এটা মানায় না। ঠিক তেমনি সামাজিক যোগাযোগের সুন্দর যে বার্তাটা নাটকে তুলে ধরা হয়েছে, এটাও ঠিক এমনই ব্যাকডেটেড কাজ যা বুঝার পরও আমরা করে যাচ্ছি। এখানেই নাটকের নামকরণের সার্থকতা। তুমি যতক্ষণ না শিখবে শিক্ষক শেখাবেন- এই ধারণাটাই হাসির মাধ্যমে নাটকে ফুটে উঠেছে।সবাই সবার চার্জার নিজ দায়িত্বে রাখবেন, ট্যাগলাইনটি নাটকটিকে আরও আকর্ষণীয় করেছিল। নাটকটি ছবিয়াল ঈদ রিইউনিয়ন সিরিজের। বানিয়েছেন হুমায়ুন সাধু। মূল চরিত্রে ছিলেন হুমায়ুন সাধু ও শাহতাজ মুনিরা হাশেম।

২৬ দিন মাত্র:
ছবিয়াল রিইউনিয়নের জন্য অসাধারণ রোমান্টিক ড্রামাটি বানিয়েছেন মুস্তফা কামাল রাজ। কাহিনী যেমন ভিন্ন ছিল, তেমনি ছিল গান আর অভিনয়। প্রবীণ অভিনয় শিল্পী আমজাদ হোসেন ও দিলারা জামান নাটকটিতে এতটা সাবলিল ছিলেন যে এক মুহূর্তের জন্য চোখ ফেরানো কঠিন। নাটকের গল্প ডিভোর্স আর বৃদ্ধাশ্রমকে নিয়ে, যাকে জয় করে নেয় ভালবাসা। সেটা সন্তানের ভালবাসা, স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা।

পুতুলের সংসার:
ছবিয়াল ঈদ রিইউনিয়নের এই নাটকটি তৈরি করেছেন নির্মাতা আশুতোষ সুজন। নাটকটিতে জেলে পাড়ার এক গোপন ব্যাধিকে তুলে ধরা হয়েছে, যেটা এখন শুধু জেলে পাড়া নয়, রয়েছে শহরের ইটের দেয়ালের মাঝে আটকে থাকা জীবনে, যেখানে প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে অভিনয় করছেন কেউ কেউ। ব্যাধিটির নাম পরকীয়া। পরকীয়া কীভাবে মানুষকে পুতুল করে দেয়, পুতুল নামের আড়ালে হয়ত তাই নির্মাতা খুঁজেছেন। নাটকটিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন তিশা ও শতাব্দী ওয়াদুদ।

লাল, নীল হলুদ বাতি:
প্রতিদিনের চলার পথে যে ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের রাস্তায় দেখা হয় তিনি হলেন ট্রাফিক পুলিশ। রোদে পুড়ে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে তাদের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কর্তব্য পালনের জন্য। তাদেরও একটা নিজস্ব জীবন আছে, আছে ভালবাসা। সেটাই একটু ভিন্নভাবে তুলে ধরেছে এই নাটকে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরফান নিশো এবং শখ। রচনা করেছেন মেজবাহ উদ্দিন সুমন। পরিচালনায় ছিলেন হিমেল আশরাফ।

ব্যাচ ২৭:
মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ভিন্নধর্মী রোমান্টিক নাটক ব্যাচ ২৭। তুলে ধরা হয়েছে প্রেমে ব্যর্থ হওয়া এক যুবকের ঘটনা, যেখানে বাস্তবতার কাছে হার মানে ভালবাসা, আবার ভালবাসারই জয় হয় শেষে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে মিথিলা, অপূর্ব এবং অপর্ণা ঘোষ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়