Saturday, February 4

প্রেমিকাকে ঘরে পুঁতে তার উপর পুজোর বেদি

প্রেমিকাকে ঘরে পুঁতে তার উপর পুজোর বেদি

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: ফেসবুকে আলাপ। তারপর প্রেম। তার পর লিভ ইন। তার পর গলা টিপে খুন। তারপর?

তারপর প্রেমিকার দেহ ট্রাঙ্কে ভরে ফেলে যুবক। ১৪ বস্তা সিমেন্ট গুলে বাড়ির একটি ঘরেই বানিয়ে ফেলে বেদি। সেই বেদিতে ঠাকুর-দেবতার ছবি বসিয়ে শুরু হয় পুজো-আচ্চা। শুক্রবার ভারতের ভোপালের সাকেতনগর আরসি কলোনির ঐ বাড়ির বেদি খুঁড়ে তরুণীর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ফ্রাঙ্ক ডেরাবন্ট পরিচালিত হাড়হিম করা রহস্য-রোমাঞ্চ আমেরিকান ধারাবাহিক ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’ দেখেই প্রেমিকাকে খুনের ‘ব্লু-প্রিন্ট ’ তৈরি করেছিল প্রেমিক। পুলিশের জেরায় তেমনই জানিয়েছে সে।

বাঁকুড়ার বাসিন্দা আকাঙ্ক্ষা শর্মা সাত মাস নিখোঁজ। গত জুন মাসে আমেরিয়ার চাকরি করতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরোয় আকাঙ্খা। তার পর থেকে কোনও খোঁজ নেই তাঁর। তবে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল সে। কিন্তু কিছুদিন পর সেই যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। গত ৫ জানুয়ারি বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আকাঙ্ক্ষার বাবা। তাদের আসল বাড়ি পাটনায়। বাবা শিবেন্দ্রকুমার শর্মা বাঁকুড়ার ইউবিআই ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার। সূত্রের খবর, উদয়ন বেশ কয়েক বার ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে বাঁকুড়াতেও এসেছিল।

আকাঙ্খার নিখোঁজ তদন্ত নয়া মোড় নেয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ভোপালের সাকেতনগর আরসি কলোনির বাসিন্দা উদয়ন দাস নামে এক যুবকের বাড়ির একটি ঘরের কবর খুড়ে উদ্ধার হয় নিখোঁজ আকাঙ্খার দেহ।

গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সাকেতনগর থানার এসএইচও দীনেশ চৌহান বলেন, ‘উদয়নকে জেরা করে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে আকাঙ্খার যোগাযোগ রাখার বিষয়টি পছন্দ ছিল না তার। মাঝেমধ্যেই প্রাক্তন প্রেমিক আকাঙ্খাকে মেসেজ পাঠাত। বারবার বারণ সত্ত্বেও সেটা বন্ধ হয়নি। এর পরই প্রেমিকা আকাঙ্খাকে খুন করবে বলে ঠিক করে উদয়ন।’ কীভাবে আকাঙ্খাকে খুন করে দেহ লোপাট করা হবে, সেই ছক কষতে শুরু করে সে। দীনেশ জানান, ইংরেজি চ্যানেলে দেখানো ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’ ধারাবাহিকের একটি এপিসোড দেখে খুনের ছক কষে উদয়ন। পুলিশের দাবি, জেরায় তেমনই জানিয়েছে উদয়ন।

ভোপাল পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের কয়েকদিন আগের থেকে উদয়ন বাড়িতে মজুত করতে থাকে বস্তা-বস্তা সিমেন্ট। অভিজাত এলাকায় দোতলা ওই বিলাসবহুল বাড়ির উপরতলায় একাই থাকত সে। আকাঙ্খা বাঁকুড়ার বাড়ি ছেড়ে আসার পর উদয়নের সঙ্গে ওই বাড়িতে লিভ-ইন করত। নীচের ঘরগুলি ভাড়া দেওয়া ছিল। ভাড়াটিয়াদের উদয়ন জানিয়েছিল, ঘরে ঠাকুরের একটি আসন তৈরি করা হচ্ছে। সেই জন্যই সিমেন্ট আনা হয়েছে। কিনে আনে একটি পাঁচ ফুট মাপের টিনের ট্রাঙ্ক। সব প্রস্ত্ততি শেষ হওয়ার পর ১৫ জুলাই আসরে নামে উদয়ন। ওইদিন ভোর সাড়ে ৪টে থেকে ৫টা নাগাদ বেডরুমে ঘুমোচ্ছিলেন আকাঙ্খা। ঘুমন্ত অবস্থায় তার পেটের উপর বসে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করে উদয়ন। এর পরই একটি বস্তায় দেহটি ভরে সেটিকে ট্রাঙ্কের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় সে। দুপুর আড়াইটা নাগাদ স্থানীয় এক নির্মাণকর্মীকে ডেকে এনে সিমেন্ট গুলে দিতে বলে উদয়ন। তার নির্দেশে বাড়ির নীচের একটি অংশে কয়েক বস্তা সিমেন্টের গোলা তৈরি করে দেয় ওই শ্রমিক। সেই সিমেন্টের গোলা দিয়ে দেহসমেত ট্রাঙ্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’দিন এ ভাবেই বেডরুমের পাশে একটি ঘরে ট্রাঙ্কটিকে লুকিয়ে রেখে দেয় সে।

দীনেশ চৌহান জানান, পচা গন্ধ বেরোতে শুরু করায় আরও একটি বড় ট্রাঙ্ক নিয়ে আসে উদয়ন। ওই ট্রাঙ্কের ভিতরে দেহসমেত আগের ট্রাঙ্কটিকে রেখে আরও সিমেন্ট গোলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোট ১৪ বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয় এই কাজে। এর পর ওইদিনই ওই ঘরের ভিতরের গর্ত খুঁড়ে ঢালাই করে একটি বেদি বানায় সে। বেদির উপরে বসানো হয় মার্বেল। এই বেদিটি তৈরির সময়ও কোন মিস্ত্রিকে বাড়িতে ঘেঁষতে দেয়নি উদয়ন।

পুলিশ জানতে পেরেছে, মিস্ত্রিকে দিয়ে সিমেন্ট মশলা বানিয়ে নিয়ে এসে নিজেই বেদিটি ঢালাই করে উদয়ন। মার্বেল দিয়ে ফিনিশিং টাচ দেওয়ার সময় মিস্ত্রিকে ডাকে সে। এর পর ঠাকুর-দেবতার মূর্তি বসিয়ে বেদিটিকে উপাসনাস্থল বানিয়ে ফেলে। তবে ওই শ্রমিকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে আকাঙ্খার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার (বাঁকুড়া) সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘উদয়নের বাড়ি থেকে আকাঙ্খার ব্যাগ, জামাকাপড় ও পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি দেখে আমাদের মনে হয়েছে মৃতদেহটি আকাঙ্খারই। আকাঙ্খার দাদা আয়ুষ জিনিসগুলি চিহ্নিত করেছে। দেহটিও চিহ্নিত করেছে তাঁর দাদা। নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে।’ বেদিটির সামনেই কালো রঙের একটি দঁড়ি ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদয়ন নিজে আত্মহত্যার চেষ্টার করছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এ দিনই ভোপালের আদালতে তোলা হয় তাকে। উদয়নকে ট্রানজিট রিমান্ডে বাঁকুড়ায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য পেতে চাইছে জেলা পুলিশ।

কলকাতার ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটের বাড়ি অন্দরমহলের সঙ্গে আরশি কলোনির ‘ইন্দ্রাণী’ নামে এই বাড়িটি মিল অনেকটাই। বাড়ির চারিদিকে নোংরা, আবর্জনার স্ত্তূপ। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে খাবার। দেখে মনে হয় দীর্ঘদিন কোনও লোকজনের আনাগোনা নেই। দরজা, জানালা সবই বন্ধ। এমনকী অনেক জায়গায় ফাঁকফোকর বন্ধ করা হয়েছে সেলোটেপ দিয়ে। পড়ে রয়েছে হাজার হাজার সিগেরেটের টুকরো। তদন্তকারীদের মতে, রবিনসন স্ট্রিটকেও হার মানাচ্ছে আরসি কলোনির এই বাড়ির মালিকের কীর্তি। দিদির প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে গোপনে তাঁর দেহ আগলে রেখেছিল ভাই পার্থ দে। কিন্ত্ত এক্ষেত্রে নিজের অপরাধ ঢাকতে ঘরের মধ্যে প্রেমিকাকে খুন করে পুঁতে দিয়ে সেখানেই থাকছিল উদয়ন।

ভোপাল পুলিশ সূত্রের খবর, দিল্লির একটি আইটিআই কলেজ থেকে পাশ করলেও সেভাবে কোনও কাজকর্ম করত না উদয়ন। বাবা বি দাস রেলের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। কয়েক বছর আগে মৃত্যু হয়েছে তার বাবার। উদয়নের মা ইন্দ্রাণীদেবীও ভোপালের সংস্কৃত দপ্তরে উচ্চপদস্থ কর্মী ছিলেন। একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাবা-মায়ের গচ্ছিত টাকা ও ভাড়ার টাকা দিয়েই চলত খরচ চলত তার। ব্যবহার করত দামি গাড়ি। তবে তার মায়ের অনুপস্থিতিও সন্দেহ বাড়িয়েছে তদন্তকারীদের।

পুলিশের কাছে জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, অবসরের পর তার মা আমেরিকায় চলে গিয়েছেন। তবে আমেরিকার কোথায় তিনি থাকেন সে সম্পর্কে অবশ্য পুলিশকে কোনও তথ্য দিতে পারেনি সে। তার দাবি, গত কয়েকমাস মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। জেরায় সে জানিয়েছে, আগে তার বিয়ে হয়েছিল। জার্মানিতে একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার স্ত্রীর। অভিযুক্তের মানসিক অবস্থাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, লোকের সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করত না ওই যুবক। এমনকী, তার কীর্তি যাতে ফাঁস না হয়, তাই কাজের লোককেও ছাড়িয়ে দিয়েছিল সে। নিজেই খাবার কিনে এনে খাওয়া-দাওয়া করত।

সূত্র: এই সময়

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়