নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির দুর্গম পাহাড়ী বড়খেওড় গ্রামে গাছ কাটার চেষ্টাকালে বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সকাল অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর কানাইঘাট থানা পুলিশ ও ভিট কর্মকর্তা শহিদুল হকের উপস্থিতিতে হামলা করা হলে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে ২ জনসহ অন্তত ৭ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে।
এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে ফিরে আসে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়- লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির মৃত মন্তহীর আলীর পুত্র আব্দুল আহাদ (৪৫) তার বসতবাড়ি থেকে কয়েকটি গাছ কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে দরখাস্ত দাখিল করেন।
দরখাস্তের প্রেক্ষিতে উপজেলা ভিট কর্মকর্তা শহিদুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কানাইঘাট থানার এস.আই জাহাঙ্গীর আলমসহ পুলিশের আরো দু’জন সদস্যকে নিয়ে আব্দুল আহাদের বাড়িতে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপস্থিত হন।
এসময় কোনকিছু বোঝার আগেই আব্দুল আহাদের প্রতিপক্ষ একই গ্রামের প্রভাবশালী মৃত নুরুল হকের পুত্র লুৎফুর রহমানসহ তার ৭ ভাই, আত্মীয়স্বজন এবং বাড়ির মহিলারা ধারালো দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ ও ভিট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আব্দুল আহাদ গংদের উপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। লুৎফুর রহমান গংরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বৃদ্ধ আব্দুল আহাদ ও তার পুত্র আব্দুল মালিক (৩০) মাতাব উদ্দিনকে (২৬) রক্তাক্ত জখম করলে পুলিশ মারামারি থামাতে গেলে লুৎফুর রহমান গংরা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর আলম, ভিট কর্মকর্তা শহিদুল হকের উপর চড়াও হয়।
একপর্যায়ে লুৎফুর রহমানের পক্ষের লোকজন পুলিশের হাতকড়া ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ১২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সেখান থেকে নিরাপদে ভিট কর্মকর্তাসহ চলে আসেন।
এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান- “ভিট কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আমিসহ দুইজন পুলিশের সদস্য বড় খেওড় গ্রামের আব্দুল আহাদের বাড়িতে পৌঁছামাত্র লুৎফুর রহমান গংরা আব্দুল আহাদ ও তাদের স্বজনদের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। আমরা হামলা থামাতে গেলে তারা আমাদের উপর চড়াও হলে আত্মরক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ১২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে লুৎফুর রহমানের পুত্র ছাব্বির আহমদ (১৮) ও তার ভাই মুহিবুর রহমান রুমান আহমদ (১৭) আহত হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় গুরুতর আহত হন আব্দুল আহাদ ও তার পুত্র আব্দুল মালিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঐ পক্ষের মাতাব উদ্দিনসহ আরো দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ভিট কর্মকর্তা শহিদুল হক জানান- “নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে বড় খেওড় গ্রামের আব্দুল আহাদ তার বাড়ি থেকে গাছ কাটার জন্য আবেদন করলে আমি সেই আবেদনটি তদন্তপূর্বক বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ নিয়ে সরেজমিনে গেলে লুৎফুর রহমান গংরা আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।”
এ ব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন- “এ ঘটনার সময় আমি প্রশাসনিক কাজে সিলেটে ছিলাম। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে আইনশৃঙ্খলা ও আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ১২ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। বিষয়টি আমি পুলিশ সুপার মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন- বসতবাড়ির জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল আহাদ ও লুৎফুর রহমান গংদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে গতকালকের ঘটনাটি ঘটেছে।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়