Wednesday, December 28

কানাইঘাট দারুল উলূম দারুল হাদীস মাদ্রাসা,দাওয়াতে তাবলীগ ও আমার কিছু কথা


মাও. ক্বারী হারুনুর রশীদ চতুলী:
ভূমিকাঃ মহান রাব্বুল আলামীন মানব দানবের সৃষ্টি লগ্ন থেকে তাদের হেদায়তের জন্য যুগেযুগে অসংখ্য অগণিত নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারই পরিপেক্ষিতে দাওয়াত ও তাবলীগের ধারা হযরত আদম (আ:) থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত অব্যাহত গতিতে চলে আসে। হযরত ঈসা (আ:) কে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন সে ধারা বন্ধ ছিল। দাওয়াত মানুষের জীবনে এত জরুরী যেমন মাছের জন্য পানি জরুরী। কিছুদিন দাওয়াতের কাজ বন্ধ থাকার কারনে মানুষ পশুর সমতুল্য হয়ে গিয়েছিল। তারা মৃত প্রাণী ভক্ষণ করতো, মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবরস্থ করতো। সে যুগ জাহিলিয়্যাতের যুগ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছিল। বিশ্ব  নবী সা. পৃথিবীতে আগমনের পর সেই অন্ধকার যুগ স্বর্ণযুগে রূপান্তরিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ তায়ালা হযরত সাহাবায়ে কেরামগণকে লক্ষ্য করে ঘোষণা করলেন “তোমরা সর্বোত্তম উম্মত। লোকদের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে এবং নবী করীম (সা.) এর অমর বাণী” আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও যদিও একটি বাক্য হয়।

তাবলীগের উপকারিতা : দাওয়াতে তাবলীগের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভাল আখলাক ধৈর্য্য সমবেদনা, আত্মশুদ্ধি এক কথায় সকল উত্তম গুণাবলীর আবির্ভাব হয়েছে এবং সকল প্রকার মন্দ কাজ থেকে মানুষ দূরে থাকছে। ইতিহাস তালাশ করলে জানা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে দাওয়াতে তাবলীগের মেহনতের ফলে কৃষ্ণাঙ্গ ও শেতাঙ্গের ভেদাভেদ দূর হয়েছে। হাজার হাজার অমুসলিম ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে দাওয়াতে তাবলীগের কাজটি বিশ্ব  মানবের জন্য এক মাইলফলক অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

কানাইঘাট মাদ্রাসায় দাওয়াতে তাবলীগের তৎপরতাঃ আলহামদুলিল্লাহ- শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রহ. এর পুণ্য স্মৃতি বিজড়িত জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম দারুল হাদিস কানাইঘাট মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস শায়খে লক্ষীপুরী এবং জামেয়ার নাইবে মুহতামিম ও শিক্ষা সচিব আল্লামা আলিমুদ্দীন শায়খে দুর্লভপুরীর তত্বাবধানে মাদ্রাসার উস্তাদ ও তালাবাবৃন্দ প্রতিনিয়ত দাওয়াতে তাবলীগের কাজে নিয়োজিত আছেন। তাবলীগ জমাতের দেশী বিদেশী জামাত প্রায়ই মাদ্রাসায় এসে উস্তাদ তালাবাদের কাছে দোয়া নেন। এতে করে তালাবাদের মাঝে তাবলীগ জামাতের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত কানাইঘাট উপজেলা তাবলীগ জামায়াতে মুরব্বিগণ মাদ্রাসার জিম্মাদারগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। বিধায় দাওয়াতে তাবলীগের পাঁচ কাজের প্রতি তালাবাগণ জোর দিচ্ছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার মাদ্রাসায় পরামর্শ করে এলাকার বিভিন্ন মসজিদে জামাত নিয়ে যাচ্ছেন, কোন কোন জামায়াতের সাথে মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা আলিমুদ্দীন শায়খে দুর্লভপুরীও সময় দিচ্ছেন। এতে করে আম জনসাধারণের সাথে জামেয়ার সম্পৃক্ততা আরোও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর মাদরাসার শিক্ষক মাও. হা. নুমান আহমদ সরুফৌদী সাহেব টঙ্গীর পাঁচ দিনের জুড়ে শরীক হয়েছেন। প্রতিদিন বাদ আসর মাদ্রাসার মসজিদে তালীম করা হয়। প্রতি সোমবার অনিয়মিত ভাবে সাপ্তাহিক গাশত করা হয়। এবছর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার একাংশ সিলেট জেলা ইজতেমার মাঠে স্বেচ্ছায় দুই পর্বে প্রায় ১৫০ জন তালাবা প্যানডেলের কাজে সময় দিয়েছেন। ইজতেমায় স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস শায়খে লক্ষীপুরীর নির্দেশে এবং মাদ্রাসার নাইবে মুহতামিম, শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব আল্লামা আলিমুদ্দীন শায়খে দুর্লভপুরীকে প্রধান জিম্মাদার করে মাদ্রাসার প্রায় ৪ শত তালাবাবৃন্দ জামায়াত বন্দি হয়ে সিলেট জেলা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মতে মাদ্রাসার সকল উস্তাদ তালাবাবৃন্দ অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং জামেয়ার তাবলীগ জমাতের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা দিন দিন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এ মহতি কাজে শরীক হওয়ার ও সার্বিক সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন।(আমিন)
 লেখক: সহকারী শিক্ষক কানাইঘাট মাদ্রাসা

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়