Sunday, October 30

১০০ টাকায় সত্যিই পুলিশে চাকরি কিনা দেখতে গিয়ে পরীক্ষায় প্রথম!

১০০ টাকায় সত্যিই পুলিশে চাকরি কিনা দেখতে গিয়ে পরীক্ষায় প্রথম!
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: পুলিশকর্তারা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি সাধারণ এক নাগরিকের হাতে তারা স্ক্রিনিং হচ্ছেন ‘সততার’ অন্য এক পরীক্ষায়!

সবার শীর্ষে থেকেও চাকরিতে যোগদান করছিলেননা তিনি। সেরা ১০ এর মধ্যে শীর্ষে থাকা ওই চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। বলা হলো, চাকরিতে যোগদান করতে। কিন্তু তিনি চাকরিতে যোগ দিতে নারাজ। উল্টো তার চাকরি না করার কারণ শুনে হতভম্ব খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঘটনা হচ্ছে, ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি! এ শিরোনামে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল গণমাধ্যমে।

তা কতটুকু সত্যি। পরখ করতেই তিনি আবেদন করেছিলেন। ব্যাংক ড্রাফট বাবদ খরচও করেছিলেন মাত্র ১০০ টাকা। লিখিত পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষা। শারীরিক পরীক্ষা। পুলিশ ভেরিভিকেশন। সবকিছুতেই বিনা বাধায় উতরে গেলেন তিনি। চাকরি পেতে কোথাও কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় কিনা তারই উল্টো পরীক্ষা করছিলেন তিনি। মেধা তালিকায় সবার শীর্ষে থাকা চাকরিপ্রার্থীর মুখে এ কথা শুনে হতবাক খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই।

তিনি ওবায়দুর রহমান। ধামরাই চাউনা গ্রামের খোরশেদ আলম ও সালেহা বেগম দম্পতির ছেলে। এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য পা রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ঢাকা জেলায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ দিনে নিয়োগের বিপরীতে ১ হাজার ৩৬৭টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৭৯৬টি আবেদন বাছাই করা হয়। ৭৯৩ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫৯৫ জন উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় ৪৯৪ জন উত্তীর্ণ হন। বেশি নম্বর পাওয়া ১০ জনকে রাখা হয় মেধাতালিকায়। যাদের শীর্ষে ছিলেন ওবায়দুর।

‘এর মাধ্যমে যেমন নাগরিক সচেতনতা বেড়েছে। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওবায়দুর রহমানের মতো সাহসী নাগরিকদের অদৃশ্য মূল্যায়ন বা সততার পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে’- এমনটিই বলছিলেন ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

একটা সময়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে কলঙ্কে ক্ষত-বিক্ষত ছিলো ঢাকা জেলা। অভিনব নানা কৌশল। কোটা আর মোটা অংকের অর্থের লেনদেনেই ছিলো যোগ্যতার মাপকাঠি।

পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই নড়েচড়ে বসতেন দালাল থেকে শুরু করে একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি ও তদবিরবাজরা। চার থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ করলেই মিলতো পুলিশে চাকরি। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও সমস্যা নেই।

কাগজে কলমে প্রমাণের জন্য চুক্তিমাফিক দুই থেকে তিন শতাংশ জমি কেনা হতো পুলিশে নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে। সেখানে ছাপড়া ঘর তুলে প্রমাণ করা হতো স্থায়ী বাসিন্দা। আবার চাকরি পেলে পুলিশ ভেরিভিকেশনের পর যথারীতি প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হতো সেই জমি। এ নিয়মেই বছরের পর বছর চলে আসছিলো নিয়োগ বাণিজ্য।

বাদ যাননি খোদ পুলিশ সদস্যরাও। কে নিয়োগ পেতে পারেন। কার শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক গড়ন পুলিশে চাকরির জন্য কতটা উপযুক্ত, তা দেখে আগেভাগেই অর্থ হাতিয়ে নিতেন কতিপয় পুলিশ সদস্য। আবার চাকরি না হলে টাকাও ফিরিয়ে দিয়ে এক ধরনের আস্থা আর নির্ভরতার জমজমাট পশরা খুলে বসেছিলেন তারা। এসব অপকর্ম করে এখন ধামরাই উপজেলার অনেকেই এলাকা ছাড়া।
বার বার নোটিশ করার পরও কর্মস্থলে যোগদান করেননি অনেক পুলিশ সদস্য। এখন তাদের বিরুদ্ধে চলছে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া।

গত ২০ জুলাই ঢাকার এসপি হিসেবে যোগ দেন ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

২০০১ সালে পুলিশে যোগদান করে দিনাজপুর জেলা, সিএমপি, র‌্যাব, এসবি ও যশোর জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে দু'বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে ‘জাতিসংঘ শান্তি পদক’ প্রাপ্তি।

পুলিশ সুপার হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় সন্ত্রাস ও গডফাদার দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার স্বাক্ষর রাখা শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগে উপপুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে এখন দেশের এক নম্বর জেলা ঢাকার এসপি।

যোগদানের পরপরই পুলিশের নিয়োগ বাণিজ্য চক্রের বিরুদ্ধে নানা হুঁশিয়ারি ও পদক্ষেপের বার্তা পৌঁছে দেন থানা থেকে গ্রামে গ্রামে। চলে মাইকিং। বলা হয়, আর যেন কেউ কোনো অসাধু চক্রের হাতে না পড়েন। কোনো তদবিরে নয়। পুলিশে চাকরি যোগ্যতাই হবে মেধা। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একমাত্র যোগ্যদেরই নেওয়া হবে পুলিশে। সূত্র: বাংলানিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়