Tuesday, July 5

'ও আমার ছেলে হতে পারে না’

'ও আমার ছেলে হতে পারে না’

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারির কথা। পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ক্লাসে অংশ নেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মীর সামিহ মোবাশ্বির। এরপর কেটে যায় চার মাস। সামির কোনও হদিস পায়নি পরিবার। কী হতে পারে সামির পরিণতি। তা নিয়ে একের পর দৃশ্যকল্প সাজাতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা।

পরিবার ভাবতে থাকে হয়তো সামি কারও প্রেমে পড়েছে আর তাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আবার কখনও তাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, সামিহকে হয়তো অপহরণ করা হয়েছে। তবে এসব আশঙ্কার পাশাপাশি আরও একটি আশঙ্কাও উঁকি দিয়েছিল স্বজনদের মনে। তারা ভাবছিলেন সামিহ ইসলামি চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়নি তো!

শনিবার স্বজনরা জানলেন, সামিহকে নিয়ে তাদের সবচেয়ে বাজে আশঙ্কাটিই সত্যি হয়েছে। শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর শনিবার প্রকাশিত ‘হামলাকারী’দের ছবির মধ্য থেকে সামিকে শনাক্ত করেন স্বজনরা।

সামিহ মোবাশ্বিরের বাবা হায়াত কবীর একটি টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। তিনি জানান, মুসলিম পরিবারের সন্তান সামিহ সবসময় ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। পরিবার কখনও তার ধর্মবিশ্বাসকে নিরুৎসাহিত করতো না। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা ছেলে যেন ইসলামের ব্যাপারে বিকৃত ধারণা না পায় সে ব্যাপারে তার বাবার সচেতনতাও ছিল। তিনি সামিহকে পবিত্র কোরআনের ইংরেজী সংস্করণ দিয়েছিলেন এই বিবেচনায় যে সেখানে বিকৃত ব্যাখ্যা থাকবে না ইসলামের। বাবা চাইতেন, ছেলে অন্য কোনও জায়গার বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে প্রভাবিত না হয়ে যেন সরাসরি ইসলামের মতবাদ নিজেই অনুসন্ধান করে নিতে পারে। নিজের বিশ্বাস নিজেই গড়ে তুলতে পারে।

ছেলে জঙ্গিদের কাতারে নাম লিখিয়ে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডে অংশ নেবে তা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বাবা মীর হায়াত কবীর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার বার তিনি বলছিলেন- ‘ও আমার ছেলে হতে পারে না। আমি যদি জানতাম ও সেখানে যাচ্ছে তবে জীবন দিয়ে হলেও তাকে থামাতাম।’

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে গুলশানে পরিচালিত কমান্ডো অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি করে আইএসপিআর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়। সেখান থেকে আত্মীয় ও পরিচিতজনরা ছবি দেখে সামিহকে শনাক্ত করেন।

হায়াত কবীর জানান, তার ১৮ বছর বয়সী ছেলে সামিহর খুব বেশি বন্ধু ছিল না। পরিবারের বিশ্বাস, এ সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে জঙ্গি নিয়োগকারীরা। হায়াত কবীর বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না ওরা তাকে কী বলেছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তারা ওর আত্মমর্যাদাবোধ এবং বিশ্বাসের ফায়দা নিয়েছে।’

এটা ছেলের সচেতন সিদ্ধান্ত নয় বলে মনে করেন বাবা হায়াত কবীর। তিনি জানান এখনও ছেলের লাশ দেখতে যাননি। বলা চলে এখনও নিজেকে সামলে তুলতে পারছেন না তিনি।

সন্তান হারানো ও ছেলের জঙ্গি হয়ে ওঠার ধাক্কায় বিপর্যস্ত হায়াত কবীর বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই যে ওই লাশগুলোর মধ্যে সামিহ নেই। আমি এখনও ওর অপেক্ষায় থাকতে চাই। আশায় বুক বেঁধে রাখতে চাই।’

সূত্র: সিএনএন

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়