Friday, April 17

ইয়াহইয়া (আ.) এর আগমন

উমাইয়া মসজিদ ও ইয়াহইয়া (আ.) এর কবর: সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ঐতিহাসিক উমাইয়া জামে মসজিদ। আরব ঐতিহাসিকদের মতে, উমাইয়া শাসকরা মসজিদ নির্মাণকালে একটি গর্ত আবিষ্কৃত হয়। সেখানে পাওয়া একটি বাঙ্ েঅক্ষত শির ও চুল পাওয়া যায়। যার ওপর লেখা ছিল 'এটি ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া (আ.) এর মাথা'। খলিফা ওয়ালিদের নির্দেশে সেটি হুবহু সেখানে দাফন করা হয় এবং সেটিকে ঘিরে সমাধি নির্মাণ করা হয়। ছবিতে মসজিদের মিম্বর ও তৎসংলগ্ন মনোরম নামাজের কাতারের পাশাপাশি বাঁয়ে সবুজ গম্বুজবিশিষ্ট কবর - See more at: http://www.alokitobangladesh.com/prophet-life/2015/04/16/133172#sthash.vTzt9uxL.dpuf
মুফতি শামসুর রহমান পোরশা: আল্লাহপাক যুগে যুগে নবী-রাসুলের মাধ্যমে অসংখ্য অলৌকিক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এতে তিনি তাঁদের রেসালাতকে শক্তিশালী করেছেন। নবী-রাসুলের এসব অলৌকিক ঘটনাগুলো সুস্পষ্ট প্রমাণ করে, দুনিয়াতে এমন কিছু নেই, যার বাস্তবায়ন ঘটানো আল্লাহর পক্ষে অসম্ভব। বরং একথা সুস্পষ্ট- সবকিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন। হজরত জাকারিয়া (আ.) এমন বার্ধক্যে উপনীত সাধারণত যে সময় সন্তান হয় না। এ বয়সে আল্লাহপাক হজরত জাকারিয়া (আ.) কে সন্তান দান করেছেন। হজরত মরিয়ম (আ.) হজরত জাকারিয়া (আ.) এর তত্ত্বাবধানে থাকাকালে হজরত জাকারিয়া (আ.) তার জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসের কাছে একটি কামরা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন, যা মেহরাবের কাছে অবস্থিত ছিল। এ ঘরে অবস্থান করে হজরত মরিয়ম (আ.) দিনভর বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। হজরত জাকারিয়া (আ.) যখন তার রুমে প্রবেশ করতেন, তখন মরিয়ম (আ.) এর কাছে অমৌসুমি ফলসহ সুস্বাদু আহার্য প্রত্যক্ষ করতেন, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে হজরত মরিয়মের রুমে আসার কোনো মাধ্যম ছিল না। এতে তিনি বিস্ময়াবিভূত হয়ে মরিয়মকে বলতেন, হে মরিয়ম! এগুলো কোথায় পেয়েছ? যে ঘটনাটি কোরআনে এভাবে বিধৃত হয়েছে, ‘হে মরিয়ম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো। তিনি বলতেন, এসব আল্লাহর কাছ থেকে আসে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩৭)। সঙ্গে সঙ্গে হজরত জাকারিয়া (আ.) এর হৃদয়ে সুপ্ত বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল এবং তিনি ধারণা করলেন যে, আল্লাহপাক মৌসুম ছাড়াই ফল দিতে পারেন, তিনি বৃদ্ধ দম্পতিকেও সন্তান দান করতে পারেন। কতিপয় মোফাসসিরে কেরামের মতানুসারে এ সময় হজরত জাকারিয়া (আ.) এর বয়স ১২০ এবং তার স্ত্রীর বয়স ৯৮ বছর ছিল। এমনকি তার স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। তারপরও তিনি মরিয়মের ওপর অফুরন্ত রহমতের বিস্ময়কর লীলা দেখে, আল্লাহর সমীপে হাত তুলে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পূত-সন্তান দান করুন। যেমনিভাবে আপনি মরিয়মের ওপর অঝোরে রহমত বর্ষণ করেছেন এবং আপনার কুদরতের কারিশমা প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেখানেই জাকারিয়া তার পালনকর্তার সমীপে প্রার্থনা করলেন। আপনার কাছ থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩৮)। আল্লাহপাক তার দোয়া কবুল করলেন এবং প্রার্থনা গ্রহণের সুসংবাদ তিনি হজরত জাকারিয়া (আ.) কে ফেরেশতার মাধ্যমে পৌঁছে দিলেন। এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে, ‘ফেরেশতারা তাকে ডেকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩৯)। আল্লাহপাক ফেরেশতাদের মাধ্যমে শুধু হজরত ইয়াহইয়া (আ.) এর দুনিয়াতে আগমনের সুসংবাদ দেননি; বরং দুনিয়ায় গিয়ে তার মধ্যে বিশেষ পাঁচটি গুণ বিদ্যমান থাকার ভবিষ্যদ্বাণীও দিয়েছেন। সে গুণগুলো হচ্ছে- প্রথম গুণ : দুনিয়াতে আগমনের পর হজরত ইয়াহইয়া (আ.) হবেন ‘কালেমাতুল্লাহ’ অর্থাৎ হজরত ঈসা (আ.) এর রেসালাতের সর্বপ্রথম সত্যায়নকারী। দ্বিতীয় গুণ : তিনি কওমের নেতা হবেন। স্বজাতির মধ্যে এলম, ধৈর্য, মাহাত্ম্য, সংযমশীলতা, ধার্মিকতা, ইবাদত এবং সব উত্তম অভ্যাসের ক্ষেত্রে সবার ঊর্ধ্বে অবস্থান করবেন। তৃতীয় গুণ : তিনি দুনিয়াতে নারীদের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকবেন। অর্থাৎ বৈধ আস্বাদনও পরিহার করবেন। চতুর্থ গুণ : তাকে নবী হিসেবে পাঠানো হবে। পঞ্চম গুণ : তিনি ঊষালগ্ন থেকে শেষ অবধি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন এবং সব ধরনের গোনাহে ছগিরা ও কবিরা থেকে নিষ্পাপ হবেন। তার সম্পর্কে উল্লিখিত গুণাবলির আলোচনা কোরআনে এরশাদ হয়েছে এভাবে, ‘তিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, তিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩৯)। সন্তান আগমনের সুসংবাদ শুনে হজরত জাকারিয়া (আ.) অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন এবং আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার সন্তান হবে? অথচ আমি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি। এছাড়া আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। এর প্রতি উত্তরে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ এমনিভাবে যা ইচ্ছে তাই করে থাকেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৪০)। লেখক : শিক্ষক, দারুল উলুম কওমি মাদরাসা, নওগাঁ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়