Monday, November 24

লাল শাপলার বাগদা বিলে



শাহীন আহমেদ: আরিফ রহমান ছবি পাঠালেন। মাত হয়ে গেলাম দেখে । ফোনে কথা বলে পথের হদিস নিলাম। রাতের হানিফ বাসে রওনা হলাম। ভোরবেলা জেগে দেখি গৌরনদী ঘন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আছে। ভাবলাম, একটা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি আর সূর্যের অপেক্ষা করি। মসজিদে তখন কয়েকজন মুসল্লি ছিলেন। নামাজের পর গৌরনদীর দই আর রসগোল্লা নিয়ে আলাপসালাপ করলাম। ততক্ষণে চায়ের দোকান খুলে গেছে। পাউরুটির সঙ্গে চিনি ও ছানা মিশিয়ে নাশতা সারছিলেন কয়েকজন। কথাও বলছিলেন বেশুমার। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। বরিশালের ভাষার আমি ভক্ত। কুয়াশা কমলে টেম্পোস্ট্যান্ডে যাই। বাগদা বিলতক টেম্পো যায় না, মোটরসাইকেল নিতে হবে। সাইকেলস্ট্যান্ডে গিয়ে ড্রাইভার ফিরোজের সঙ্গে চিন-পরিচয় হয়। কিন্তু সে যা টাকা চাইল তাতে তবদা মেরে গেলাম। শীত যেন বেশি বেশি লাগল! মনে মনে ভাজতে থাকলাম- দিন হতে দিন আসে যে কঠিন (শাহীন), দিনহীন কোন পথে যাইতাম। তখনই টুপি পরা দাড়িওয়ালা এক ড্রাইভার শুধালেন, আপনি কয় টাকা দেবেন? আমি খুব বিনয়ের সঙ্গে শখানেক টাকার উল্লেখ করলে তারা উল্টে তবদা খেয়ে গেলেন। এরপর ধাতস্থ হয়ে মুলামুলি শুরু করলেন। দুজনের সঙ্গে আমি পেরে উঠলাম না। যা হোক, ড্রাইভার ফিরোজের বাহনে চড়ে বসলাম। লাল শাপলার বাগদা বিলে কুয়াশা তখনো কাটেনি। শীত বড় শক্ত। তবে রাস্তা মসৃণ। কিছুক্ষণ পর গাড়ি চলল ছোট্ট একটা খালের পাশ দিয়ে। রাস্তা খারাপ হতে থাকল। তবু যেতেই হবে, শাপলারা যে পথ চেয়ে আছে! মাটির রাস্তায় গাড়ি উঠতেই থির থাকতে পারলাম না। গৌরনদী পেরিয়ে ঢুকে পড়েছি উজিরপুর। রাস্তা আরো কঠিন হয়ে উঠল। ফিরোজকে বলতে বাধ্য হলাম, থামলে ভালো লাগে। খালপাড়ে গাড়ি থামে। খালে মাছের আবাদ। দলবেঁধে রোদ পোহাচ্ছে মাছগুলো। আমি একা একা হাঁটি, হাত
নাড়ি, পা বাঁকাই, কোমর দোলাই। শরীর সোজা করে নিয়ে আবার সাইকেলে উঠি। এবার ডান পাশে পয়সারহাট নদী। নদীর গায়ে বল নেই, ঝিমুচ্ছে। ওই পারে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া। চলতে চলতে খানাখন্দে ভরা নির্মম রাস্তার এক বাঁকে গাড়ি থামাল ফিরোজ। চোখে আমার পৃথিবীর সব বিস্ময় জড়ো হয়। বাগদা বিলে লালের ঢেউ। যেদিকে চোখ দিই, শাপলা আর শাপলা। রাস্তা থেকে নেমে নিচে যাই। বিলের ফরসা জলে মুখ ভিজাই। হাত লম্বা করে শাপলা ধরতে যাই, নাগাল পাই না। দুই বালক সোহেল আর আমিন ছিল ওইধারে। ডেকে কাছে আনি। ভাব জমিয়ে বন্ধু করে ফেলি। তারা অর্ধেক ডোবা একটি নৌকা টেনে ওপরে তোলে। পানি সেচে নৌকা ভাসায়। আমি নৌকায় চড়ে নায়িকাদের মতো টেনে টেনে শাপলা তুলি। ছিঁড়ে কানে গুঁজি। অপার মুগ্ধতায় ছেয়ে যায় মন। সোহেল ফুলের মালা গেঁথে গলায় পরিয়ে দেয়। বিলে এখন শীত নেই। শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ। শাপলার সঙ্গে অনেক সময় চলে যায়। সূর্য তেতে ওঠে। আমার বাড়ির কথা মনে পড়ে। ছবি : লেখক।
কিভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী থেকে হানিফ, শাকুরাসহ আরো কিছু পরিবহনের বাসে গৌরনদী যাওয়া যায়। ভাড়া ৫০০ টাকা। সেখান থেকে বাগদা বিল মোটরসাইকেলে ৫০০ টাকা (যাওয়া-আসা, ২ জন)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়