সানাউল্লাহ নজির আহমদ
যখন হাজীরা বাড়ি ফেরার ইচ্ছা করেন তখন মনে পড়ে পিতামাতা, স্ত্রী-সন্তান, ভাইবোন ও বন্ধু-বান্ধবদের কথা। তাদের জন্য বিভিন্ন উপহার সংগ্রহ করেন। যার সামর্থ্য রয়েছে, ব্যবসার জন্য অতিরিক্ত জিনিসপত্র খরিদ করেন। এতে কোনো সমস্যা নেই, কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে। সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশআরে হারামের কাছে আল্লাহকে স্মরণ করো এবং তাঁকে স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও তোমরা এর আগে অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।' (সূরা বাকারা : ১৯৮)।
প্রয়োজন অনুযায়ী দুনিয়া গ্রহণ করলে এখলাস ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। হে আল্লাহ ঘরের মেহমান, আপনি যখন ওই পবিত্র নিদর্শনগুলো বিদায় জানিয়ে প্রস্থান করছিলেন তখন পরম বিচ্ছেদের অনুভূতি কেমন হয়েছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন তাওয়াফে বিদা (বিদায়ী তাওয়াফ) ব্যতীত মক্কা প্রস্থান না করে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'লোকেরা (হজ শেষে) নিজ নিজ রাস্তা গ্রহণ করত', অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'কেউ প্রস্থান করবে না, যতক্ষণ না তার শেষ কর্ম হয় তাওয়াফে বিদা।' (মুসলিম)।
এরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সাথীদের যখন তারা পবিত্র কাবা প্রস্থান করার ইচ্ছা করেছিল; যাতে তারা মক্কা থেকে চলে আসার সময়ে সর্বশেষ কর্ম হিসেবে তাওয়াফে বিদা সম্পন্ন করার মাধ্যমে সে ঘরের বড়ত্ব ও মর্যাদা দ্বারা তাদের দৃষ্টি ও অন্তর পূর্ণ হয়। আল্লাহ তার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করুন।
যখন বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে পবিত্র কাবাঘর বিদায় জানাচ্ছিলেন তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল? কোনো সন্দেহ নেই ওই পবিত্র ঘর বিদায় জানানো সত্যিই কঠিন, বিশেষ করে যে অন্তর হজের পুরো সময়ে একমাত্র তার রবের ধ্যানে নিবিষ্ট ছিল, তার কাছে বিদায় ঘণ্টা সত্যিই বেদনাবিধুর!
যখন হাজী পবিত্র কাবাঘরকে শেষবারের মতো সম্মান করছেন, অথচ এর আগে তিনি অবস্থান করছিলেন ইবাদতের দিনগুলোয় ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পুণ্য মৌসুমে। সত্যি হজের সারাক্ষণ ও প্রতি মুহূর্ত খুব ভাগ্যবান! কিন্তু তিনি যখন বাড়ি ফিরবেন ইবাদতের ধারাবাহিকতা কি বন্ধ হয়ে যাবে? না, হাজী স্মরণ করবেন মহান ও পবিত্র ঘর কাবার কাছে আল্লাহর সানি্নধ্যে তার উপস্থিতির কথা, স্মরণ করবেন আরাফার দিন ও তার বড়ত্বের কথা এবং মিনার দিনগুলো ও তার সম্মানের কথা!
এরপর কীভাবে তিনি তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবেন! বরং ইবাদতে আত্মনিয়োগ করুন; জীবনের জন্য নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করুন; যেন মাবরুর হজকারীদের গুণাগুণ আপনি অর্জন করতে সক্ষম হন। হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, 'হজে-মাবরুর হচ্ছে ব্যক্তির (হাজীর) দুনিয়াত্যাগী ও আখিরাতমুখী হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করা।' কেউ কেউ বলেছেন, হজে মাবরুরের নিদর্শন, 'হজ শেষে এর আলামত স্পষ্ট হয়, যদি আগের চেয়ে ভালো অবস্থা নিয়ে বাড়ি ফিরে, বোঝা যাবে তার হজ মাবরুর।'
আরেকটি বিষয়, আপনি যখন পবিত্র কাবাঘর বিদায় জানাচ্ছেন, দোয়া করুন এটাই যেন আপনার শেষ সাক্ষাৎ না হয়। কারণ ইবাদতের পর ইবাদতে মগ্ন থাকা যেমন দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার আলামত, অনুরূপ পাপের পর পাপে লিপ্ত থাকা গোমরা ও পথভ্রষ্টতার নিদর্শন।
ইবাদতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন, মনে রাখবেন কেয়ামতের দিন আপনার সফলতার চাবিকাঠি এটাই। দেখুন আমাদের নবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, 'কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়?' তিনি বললেন, 'ধারাবাহিক আমল, যদিও তা কম হয়।' (মুসলিম শরিফ)।
নেককার হওয়ার আলামত হচ্ছে, নিয়মিত ইবাদত করা, যদিও তার পরিমাণ হয় সামান্য। তাই এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আপনাকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি_ আপনি নেক আমলকে অাঁকড়ে ধরুন, তা থেকে কখনও বিচ্যুত হবেন না। যত ছোট হোক কোনো আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করবেন না, আল্লাহ আপনাকে খাতেমা বিল খায়ের তথা শুভ সমাপ্তি দান করবেন এবং আপনার হজের বরকত আপনার জন্য অক্ষত রাখবেন, ইনশাআল্লাহ।
আপনি কখনও তাদের মতো হবেন না, যারা নির্দিষ্ট মৌসুম ব্যতীত ইবাদতের কথা মনে করে না; এসব মৌসুম শেষ হলে তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। আলকামা (রহ.) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মোমেনিন, 'রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আমল কেমন ছিল? তিনি কি ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন নির্বাচন করতেন?' তিনি বললেন, না, তাঁর আমল ছিল নিয়মিত। তোমাদের কার সে রকম সামর্থ্য রয়েছে, যেরূপ সামর্থ্য ছিল রাসূলুল্লাহ (সা.) এর।' (সহিহ বোখারি)।
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়