কানিউজ ডেস্ক: মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রতিক্রিয়ায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, প্রয়োজনে আমি ধর্মদ্রোহী হব। তারপরও আমার বক্তব্য থেকে সরে আসব না। ধর্ম নিয়ে এ ধরনের কথা বলেই যাব। আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। তার কাছে মনে হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত দলের জন্য ভালো হবে। সে কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
লতিফ সিদ্দিকী দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার শেষ ফ্লাইটে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন বাংলাদেশ সময় রোববার রাত সোয়া ১১টায়। তিনি এয়ারপোর্ট থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে কাছেই বাইপাস রোডের একটি অভিজাত হোটেলে ওঠেন। এ সময় আমাদের কলকাতা প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় সাবেক এই মন্ত্রীর। তিনি জানান, ঢাকায় ফিরবেন। তবে কখন তা এখনও ঠিক হয়নি।
এদিকে লতিফ সিদ্দিকীর ঢাকায় ফেরার আশংকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুরু হওয়ার আগে শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ফিরলে ইসলামিক দলগুলো দেশ উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। তাই তার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কলকাতা প্রতিনিধি জানান, এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আমি মাথা পেতে নেব। এখন আমি আর বেশি কিছু বলব না। ইতিমধ্যেই সাংবাদিকরা আমার সম্পর্কে অতিরঞ্জিত অনেক কিছুই লিখেছেন। তাই, আমার যা কিছু বলার সব ঢাকায় গিয়েই বলব। তবে কবে কখন ঢাকায় যাব, তা এখনও ঠিক করিনি। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণে কষ্ট পাইনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকব। এমপিত্ব খুব মহার্ঘ্য জিনিস নয়। এর জন্য লালায়িত নই। শোকজ দিলে জবাব দেব।
জানা গেছে, প্রতিদিনই ঢাকার সব জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামসহ বিস্তারিত পড়ে শোনাতে হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। তাকে নিয়ে যেসব প্রতিবেদন সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে সে সম্পর্কেই এমন আগ্রহ সাবেক এই মন্ত্রীর। আর এই কাজটি করেন ঢাকায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি।
সাবেক মন্ত্রীর ওই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি যুগান্তরকে বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী তার বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত নন। তবে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। কারণ দোষটা তার (লতিফ সিদ্দিকীর)। রোববার দুপুরে দিল্লি পৌঁছানোর পর সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় ফোন করে তার ওই ঘনিষ্ঠজনকে এসব কথা বলেন। এ সময় ঢাকায় ওই ঘনিষ্ঠজনের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে একটি ভিওআইপি (টেলিটক) নম্বর ওঠে।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেন, দুপুর ১২টার দিকে তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে দিল্লি পৌঁছান। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী তাকে বলেন, নিউইয়র্কে দেয়া বক্তব্যের জন্য আমি অনুতপ্ত নই। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নেব। কারণ তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্যাপাবল মানুষ।
ঘনিষ্ঠ সূত্রটি দাবি করেছে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রতিদিন একাধিকবার ফোন করে তার কাছ থেকে বিভিন্ন খবর জানতে চান। এমনকি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো তাকে নিয়ে কী কী প্রতিবেদন করছে এবং ওই সব প্রতিবেদনের শিরোনাম কী তা বিস্তারিত পড়ে শোনাতে হয়। দেশের প্রথম শ্রেণীর তিনটি বাংলা দৈনিকের নাম ধরে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক এই মন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রোববারের বৈঠক সম্পর্কে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ চলে গেলেও একজন কর্মী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগ করে যেতে চান। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগে আছি, থাকব। কারণ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা আমার আলোকবর্তিকা।
সাবেক এই মন্ত্রী জানান, আগামীতে পড়াশোনা ও লেখালেখি করে তিনি অবসর সময় কাটাবেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছি। কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেইনি। আমার বক্তব্য আংশিকভাবে প্রচার হয়েছে।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়