কানাইঘাটে রোডপারমিটবিহীন অটোরিক্সা (সিএনজি) গাড়ীর ব্যবসার নামে একটি চক্র অনেকের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে অটোরিক্সা গাড়ীর মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের। কিস্তির মাধ্যমে রোড পারমিট বিহীন সিএনজি গাড়ী দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটচক্র অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর গাড়ীর বৈধ কাগজপত্র ও পাওনা টাকা না পেয়ে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি ১০টির মতো সিএনজি গাড়ী ড্রাইভারদের পথরোধ ও মারধর করে গাড়ী নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। কানাইঘাট দক্ষিণ বাজার সিএনজি স্ট্যান্ডের ৭০৭ রেজিঃ শাখার অন্তর্ভুক্ত বিুব্ধ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এক সময় উক্ত স্ট্যান্ডের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন পৌরসভার দলইমাটি গ্রামের হানিফ আলীরপুত্র মাসুম আহমদ। প্রায় ৩ বছর পূর্ব থেকে তিনি এবং আরো কয়েকজন মিলে সিএনজি গাড়ী ব্যবসায় নামেন। সিলেটের বিভিন্ন শোরুম থেকে রোড পারমিট বিহীন সিএনজি গাড়ী ক্রয় করে কানাইঘাটে এনে নগদ দুই/আড়াই লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়ে কিস্তির মাধ্যমে একেকটি সিএনজি ৫-৬ লক্ষ টাকা ধার্যকরে বায়নাপত্রের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেন। তাদের দেখাদেখী আরো অনেকে এ লাভজনক ব্যবসায় নেমে পড়েন। কয়েকমাস পূর্বে সিএনজি ব্যবসার কোটি টাকার লভ্যাংশের ভাগবাটোয়ারা ও ৬৩টি সিএনজি গাড়ীর মালিকানা নিয়ে মাসুম আহমদের সাথে একই গ্রামের কানাইঘাট বাজারের রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ী বেলাল আহমদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মারামারি, এমনকি থানায় ও আদালতে বেশ কয়েকটি পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের ও সিএনজি গাড়ী রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে মাসুম আহমদ কিস্তির মাধ্যমে সিএনজি গাড়ী দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কিস্তির টাকা পরিশোধ করার পরও অনেকে গাড়ীর বৈধ কাগজপত্রও পাননি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একজনকে দেওয়া হয়েছে গাড়ী অন্য জনকে কাগজপত্রের মাধ্যমে গাড়ী মালিকানা দেওয়া হয়েছে। আবার, নগদ টাকা গ্রহণ করে কিস্তির মাধ্যমে গাড়ী দিতে না পেরে একাধিক জনকে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্ল্যাংক চেকও দেওয়া হয়েছে। মাসুম আহমদ ও বেলাল আহমদের মধ্যে ব্যবসায়িক বিরোধের সূত্র ধরে টাকা দেওয়ার পরও গাড়ীর মালিকানা বৈধ কাগজপত্র না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে পাওনাদাররা কানাইঘাট দক্ষিণ বাজার ৭০৭ রেজিঃ শাখার অন্তর্ভুক্ত অন্তত ১০টি সিএনজি গাড়ী শাহবাগ, গাছবাড়ী, চতুল ও দরবস্ত এলাকা থেকে ড্রাইভারদের মারধর করে গাড়ি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। যাদের গাড়ী জোরপূর্বক ভাবে নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন-মানিকপাড়া গ্রামের সুজন বিশ্বাস, শিবনগর গ্রামের শাহেদ আহমদ, নন্দিরাই গ্রামের ময়না মিয়া, বীরদল চট্টিগ্রামের আব্দুল আহাদ, জন্তিপুর গ্রামের শাহাব উদ্দিন, শ্রীপুর গ্রামের রাসেল, বড়দেশ মাছুখাল গ্রামের আব্দুল্লাহ'র গাড়ী। অদ্যবধি পর্যন্ত রাস্তা থেকে জোরপূর্বকভাবে ছিনিয়ে নেওয়া সিএনজি গাড়ীগুলো উদ্ধার করতে পারেননি মালিক ও শ্রমিক পক্ষ। রাস্তা থেকে গাড়ী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গত দুদিন ধরে ৭০৭ শাখার অন্তর্ভুক্ত সিএনজি গাড়ীগুলো কানাইঘাট-শাহবাগ, কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত ও কানাইঘাট-গাছবাড়ী রোড দিয়ে যাতায়াত একেবারে কমে গেছে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ড্রাইভাররা ভয়ে গাড়ী নিয়ে বের হচ্ছেন উক্ত রোড দিয়ে। ক্ষুদ্ধ পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন প্রকাশ্যে দিবালোকে গাড়ীগুলো রাস্তা থেকে জোরপূর্বকভাবে নিয়ে যাওয়ার পরও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রমিক নেতারা রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন। গাড়ী উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছেন না। থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল চৌধুরী কানাইঘাট নিউজকে জানান, অটোরিক্সা আটকের ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে মাসুম আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিএনজি গাড়ী ব্যবসার নামে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে কারো কাছ থেকে কোন টাকা গ্রহণ করেননি। সবকিছু বৈধভাবে করেছেন। বেলাল আহমদের সাথে ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে তিনি নানা ভাবে নির্যাতন ও ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কয়টি গাড়ী আটক করা হয়েছে তার কাগজপত্র বেলাল আহমদের কাছে। তিনি গাড়ীর মালিকদের কাগজপত্র না দেওয়ায় গাড়ী আটকের ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে তিনি নির্দোষ। অপরদিকে বেলাল আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মাসুম আহমদকে প্রতারক আখ্যায়িত করে বলেন, সে আমার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। অনেক সিএনজি গাড়ীর জাল কাগজপত্র তৈরি করে আমাকে দিয়েছে। আমার কাছে কেউ টাকা পাবে না। মাসুম সিএনজি গাড়ী ব্যবসার নামে বিভিন্নজনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট

0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়