Tuesday, November 5

১৫৪ জনের ফাঁসি

ঢাকা: পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলার রায় হয়। এরই মধ্যে পিন্টুসহ ১৬০জনের সবোর্চ্চ যাবজ্জীবন,  এ পর্যন্ত ১৫৪ জনের ফাঁসি এবং ২৭০  জন খালাস এবং বাকিদের রায় দেয়া হয়।

আজ মঙ্গলবার ১১টার দিকে বিচারকরা আদালতের এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। আসামিদেরকেও আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে হাজির করা হয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের শিকার সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরাও আদালত প্রাঙ্গনে এসেছে। বেলা ১২টা ৩০ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক। রায় ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত প্রাঙ্গণ জুড়ে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলায় গড়ে তোলা হয়েছে।


পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য আদালত এলাকা ঘিরে রেখেছেন। বকশিবাজার ও উর্দু রোড দিয়ে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া ডগ স্কায়ার্ডও আনা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সোয়া ১০টা পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৮২৬ জন আসামিদেরকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্ররুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটেছিল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার বিচার শুরু হয়। চার বছর আট মাসে মামলাটি ২৩২ কার্যদিবস অতিক্রম করে। আজ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ মামলার সব কার্যক্রম।

গত ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়ের এই তারিখ ঘোষণা করেন। এর আগে গত ২০ অক্টোবর এই মামলার সর্বশেষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৩০ অক্টোবর রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। রায় লেখা সম্পন্ন না হওয়ায় পূর্বনির্ধারিত ওই তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়। বিডিআর বিদ্রোহের (বর্তমান বিজিবি) ঘটনার চার বছর আট মাস পর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।

পিলখানা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন পিন্টু ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ আসামির সংখ্যা ৮৫০। তাদের মধ্যে ২০ জন পলাতক। চার জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। জামিনে আছেন ১৩ জন। আসামিদের মধ্যে ছয় জন ডিএডি আছেন। ৮২৬ আসামির উপস্থিতিতে বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা হয়।

২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। পিলখানা হত্যা মামলার ২৩৩তম কার্যদিবসে ৬৫৪ জন সাক্ষী আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এতে সব আসামির অপরাধ উঠে আসে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। মামলায় সাক্ষীর সংখ্যাও কমানো হয়েছে। হত্যা মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ২৮৫ জন। ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ২২ আগস্ট অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ উভয়ই ন্যায় বিচারের আশা করছেন। রায় ঘিরে লালবাগ এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। নিহতের স্বজনরাও এই দিনটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলার বিচার কার্যক্রম ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এসব মামলায় সারাদেশে পাঁচ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ১১৫ জন। বিডিআর আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা ছিল সাত বছর কারাদ-। বর্তমানে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-। বিডিআর আইনে পাঁচ ডিএডিকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি।

হত্যা মামলার আসামিদের তৌহিদসহ ছয় জন ডিএডি রয়েছেন। এক ডিএডিসহ চার আসামি মারা গেছেন। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে সুবেদার ৪৪ জন, হাবিলদার ৮০ জন, নায়েক ৬০ জন, ল্যান্স নায়েক ৬৮ জন, সিপাহী ৫০৪ জন, পাচক ১৪ জন, ওবিএম এক জন। পিয়ন এক জন, রাখাল দুই জন, সুইপার ১৮ জন, ওয়ার্ডবয় এক জন, কার্পেন্টার দুই জন, সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন পিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ২৩ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। হত্যা মামলায় সিআইডি দুই হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার এক বছর সাড়ে চার মাস পর এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। মূল চার্জশিট ছিল ১৩২ পৃষ্ঠার। মামলার কেস ডকেটসহ তদন্ত প্রতিবেদনের ওজন ছিল প্রায় আধা মণ।

মামলায় সাক্ষী করা হয় মন্ত্রী, এমপি, তিন বাহিনীর প্রধান, সাংবাদিকসহ এক হাজার ২৮৫ জনকে। যার মধ্যে ঘটনার শিকার পরিবারের ৬৮, বিডিআর সদস্য ১৮২, সাংবাদিক ১৫, সাধারণ নাগরিক ১১০, অস্ত্র ও মোবাইল ফোনসেট বিশেষজ্ঞ ৫, পুলিশ সদস্য ২০২, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১০, রেডক্রিসেন্টের সদস্য তিন, র্যাবের সদস্য ৫৭, মাল জব্দ তালিকা প্রস্তুতকারী ২৩০, টিআই প্যারেডের ম্যাজিস্ট্রেট এক, ১৬৪ ধারায় অভিযুক্তদের জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেট ৩২, লাশ শনাক্তকারী ও সুরতহাল প্রস্তুতকারী ১০২, চিকিৎসক ৩৭, স্কেচ ম্যাপ তৈরিকারী তিন জন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আইজিপি, সাবেক সেনাপ্রধানসহ অন্যান্য সাক্ষী ১৪ জন, বাদী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুই, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফটোগ্রাফার ৩৬ এবং সেনা কর্মকর্তা ১০৬ জন। এদের অনেকেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ মামলার সাক্ষী থাকলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি।----ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়