Tuesday, November 5

রংপুর-২ আসনে কোন দলে কে পাচ্ছেন টিকিট?

রংপুর: আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে চলছে দ্বন্দ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান। সেই অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই নির্বাচনকে সাজানো উল্লেখ করে নিরদলীয় নিরপক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার দাবী করে আসছেন। তাছাড়া তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন না। সেই দাবী আদায়ের লক্ষে তিনি ১৮দলকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে রাজপথে নেমেছেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সারাদেশে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হওয়া। এর ব্যতিক্রম ঘটেনি রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসন। যখন সারাদেশের মানুষেরমত এ আসনের মানুষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া না হওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বদ্ধের মধ্যে দিন কাটছেন, ঠিক তখনেই এ আসনের আওয়ামীলীগ, জাতীয়পার্টি ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দিন কাটছে তাদের মনোনিত প্রার্থীরা দলীয় টিকিট পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। কারন এ আসনে তিন দলের দুইয়ের অধিক প্রার্থী রয়েছে। সবাই নিজ নিজ দলের টিকিট সংগ্রহ করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। কাদের ভাগ্যে জুটবে দলীয় মনোনয়ন? এমন প্রশ্ন নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এখন সাধারণ মানুষের মুখেও।
জানা গেছে, এ আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টির প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মন্ডল বিপুল ভোটের ব্যবধানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী (বর্তমান তিনি যুদ্ধপরাধী মামলায় জেলে আটক) এটিএম আজহারুল ইসলামকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলী নেতাকর্মীদের মূল্যয়ন করেননি। একারনে অনেকে দলত্যাগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে টি.আর, কাবিখা, কাবিটার ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আতœীয়-করণ করার অভিযোগ রয়েছে। টিআর, কাবিখা, কাবিটা নিয়ন্ত্রন করেন তাঁর সহধর্মীনি শান্তা ইসলাম মনি ও আতœীয় পরিচয়দানকারী শওকত হোসেন নামে এক ব্যক্তি।  এনিয়ে এই সাংসদের বিরুদ্ধে ইতি মধ্যে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সূত্র জানায়, একারনে জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর ওপর অনেকটাই ক্ষুব্ধ। ফলে এবার তাঁকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভবনাই বেশী  বলে সূত্রটি জানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক নেতা বলেন, এমপি আনিছুল ইসলাম মন্ডল পাঁচ বছরে ঠিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যয়ন করেননি। একারনে অনেকে দলত্যাগ করেছেন। গত নির্বাচনে যেসব প্রতিশ্র“তি দিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। একারনে পার্টির চেয়ারম্যান তাঁকে মনোনয়ন দিতে নারাজ। তিনি আরো বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ এ আসনে একবারের বেশী কাউকে মনোনয়ন দেন না, এমন নজির এখানে নেই।  
একটি সূত্রে জানিয়েছে, এ আসনে জাতীয়পার্টির টিকিট নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু। ইতোমধ্যে তিনি পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের সাথে দেখাও করেছেন। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ রংপুর জেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি সাবেক সাংসদ মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অথবা তাঁর আপন ভাই জিএম কাদেরকেও এ আসনের প্রার্থী করতে পারেন। তবে এআসনের মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ আসন জাতীয়পার্টির ঘাটি। এরশাদ যাকে মনোনয়ন দেন তিনিই এমপি নির্বাচিত হন। এবার একটু ভিন্ন, এরশাদ শক্তপ্রার্থী না দিলে এবার এআসনটি তিনি ধরে রাখতে পারবেন বলে জানা গেছে। 
এ দিকে ১৯৯৬সালে উপনির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী আনিছুল হক চৌধুরী। তিনি ১৯৯৮ সাথে যোগাযাগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয়পার্টির প্রার্থীর মোহাম্মদ আলী সরকারের কাছে পরাজিত হন।  এর পর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-জাতীয়পার্টি জোট গঠন করলে আওয়ামীলীগ এ আসনটি জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেয়। সেই নির্বাচনে এরশাদ মোহাম্মদ আলী সরকারকে বাদ দিয়ে আমেরিকা প্রবাসী আনিছুল ইসলাম মন্ডলকে মনোনয়ন দেন। আনিছুল ইসলাম মন্ডল মহাজোটের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। কিন্তু এবার জাতীয়পার্টির সাথে জোট থাকলেও এ আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামলীগের নেতাকর্মীরা। কারণ জোটের এমপি হয়ে আনিছুল ইসলাম মন্ডল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের কোন মুল্যয়ন করেননি। এ আসনে এবার আওয়ামীলীগের অবস্থা অনেকটাই ভালো। আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী দিলে এআসনে জয়লাভ করার সম্ভবনা বেশী রয়েছে। তবে আসনে আওয়ামীলীগ থেকে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মরহুম আনিছুল হক চৌধুরীর আপন ভাতিজা বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের হাইব্রিড নেতা ও বদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটু, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. শাহ নেওয়াজ আলির। তারা তিনজনের বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবি দিয়ে পোষ্টার ফেস্টুন বের করে এলাকায় প্রচার করেছেন। তারা তিনজনের এ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিতে ঢাকায় দৌড়ঝাপ শুরু করছেন। যোগাযোগ রাখচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে। 
জানা গেছে, এই তিনজনের মধ্যে সাংগঠনিক অবস্থা ভালো রয়েছে আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের। তিনি যে কোন কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করছেন উপজেলার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে। 
অপর দিকে ৯১ এর পর এ আসনে কখন বিএনপি জয়লাভ করতে পারেনি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ আসনের ১৮দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এটিএম আজহারুল ইসলাম। তিনি ২০০১সালের নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন। বর্তমান তিনি যুদ্ধাপরাধী মামলায় কারাগারে আটক রয়েছে। ফলে ্আসনে এবার বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভবনা অনেকটা বিষাদগারে পরিনিত হয়েছে তাঁর। কারণ ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুরে বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছেন জাপা’র সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার। ফলে তিনি বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে এ আসনে নির্বাচন করতে চান। আর দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত করছেন। আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হলে এ আসনটি বিএনপির হাতে চলে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।
এসব কারনে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনের মানুষের মুখে মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, কে পাচ্ছেন জাতীয়পার্টি, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র টিকিট? তবে সব প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সবাই দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।----ডিনিউজ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়