Sunday, October 27

যশোরে হরতালে বোমা হামলা : যুবলীগ নেতা খুন


যশোর: ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, বোমা হামলা, গুলি বর্ষর্ণের মধ্যে যশোরে হরতাল পালিত হয়েছে। বোমা হামলায় নওয়াপাড়া পৌরযুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে।  পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতা, বিএনপি নেতা, সাধারণ জনতা ও সাংবাদিকের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়েছে। সেই সময় কয়েকটি মটর সাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সারাদিন কমপক্ষে ৩৫-৪০টি বোমা হামলা, ২০-২৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ, ৫ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০জন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ ১৮ পিকেটারকে আটক করেছে। তবে পুলিশ বাদি হয়ে ৫ টি মামলা দায়ের করবে বলে কোতয়ালি থানার ওসি জানিয়েছেন। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে যশোর-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়ায় হরতাল সমর্থকরা অবস্থান নেয়। এ সময় তারা দুটি ট্রাক ভাংচুর ও একটি মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠন। এতে ত্রিমুখি সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে হরতাল বিরোধীরা হরতাল সমর্থকদের উপর বোমা নিক্ষেপ করে। পরে হরতাল সমর্থকরা স্থানীয় হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। এ ত্রিমুখি হামলায় শিমুল নিহত হন। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে এনামুলের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। এসময় শিমুলের বেশিরভাগ সহযোগী ভৈরব নদীতে লাফিয়ে পালিয়ে যান।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আবদুস সালেক শিমুল হত্যাকা-ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিমুলের ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর হামলার শিকার হয়ে শিমুল ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল থেকেই যুবলীগ নেতা শিমুল তার লোকজন নিয়ে নওয়াপাড়ায় হরতাল বিরোধী মহড়া দেয়। সকাল ১০টার দিকে এ মহড়ার অংশ হিসেবে তারা নওয়াপাড়া ফেরিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় অবস্থান করছিল। পরে সেখানে পুলিশ, হরতাল বিরোধী ও সমর্থকদের সাথে ত্রিমুখি সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে শিমুল  মারা যান।  
যুবলীগ নেতা হলেও শিমুলের বিরুদ্ধে অভয়নগরে একাধিক হত্যাসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কয়েকমাস আগে শিমুল জেল থেকে ছাড়া পায়। এর আগে তার বিরুদ্ধে হরতালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ শেখ আব্দুল ওহাবের ছত্রছায়ায় থাকায় সব অপকর্ম থেকে পার পেয়ে যায়। 
এদিকে, রূপদিয়ায় এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারপিট করে তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে হরতালসমর্থকরা। বেলা ১১টার দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়কের রূপদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার লাবুয়াল হক রিপন যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমাজের কথা’র স্টাফ রিপোর্টার। 
হামলার শিকার রিপন জানান, তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বসুন্দিয়া থেকে যশোর শহরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে যশোর-খুলনা মহাসড়কের রূপদিয়া এলাকায় পৌঁছালে মুনসেফপুর মোড়ে হরতাল সমর্থকরা তার গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে তার ওপর হামলা চালানো হয়। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরও তাকে বেধড়ক মারপিটের পর তার ল্যাটপটটি কেড়ে নেয়। তাকে রাস্তায় ফেলে উপর্যুপরি মারপিটের পর মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে সরিয়ে নরেন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সাংবাদিক লাবুয়াল হক রিপনের উপর হামরায় ঘটনায় যশোরের সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রিপনের ওপর হামলাকারীদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানিয়েছেন, লিপনকে উদ্ধার করে তিনি নিজে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। 
সকাল ১০টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের হৈবৎপুর এলাকায় আওয়ামীলীগ-জামায়াতের  মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক জামায়াত কর্মীর পা কেটে দিয়েছে আওয়ামীলীগের আশ্রিত সন্ত্রাসীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোর শহরের দড়াটানা এলাকায় আওয়ামীলীগ-বিএনপি মিছিল বের করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় বেশ কয়েকটি বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হাসপাতালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হলে রোগী ও সাধারণ মানুষ দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। হরতাল সমর্থকরা শহরের বিভিন্ন স্থানে খ- খ- মিছিল বের করে। আবার হরতাল বিরোধীরা হরতালের বিরুদ্ধে মিছিল করে। সদর আসনের সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটোর সমর্থকরা একটি মিছিল সারা শহর প্রদক্ষিণণ করে। দুপুর ২টার দিকে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ১৫/২০টি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২০রাউন্ড গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। সারাদিন সারা শহরে টান টান উত্তেজনা দেখা দেয়। শহরের অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। হরতালে এদিন শহর ছিল অনেকটা লোকশুন্য। শহরে কোন রিকসা-ভ্যান চলাচল করেনি। ছেড়ে যায়নি কোন দুরপাল্লার যান বাহন। অফিস আদালত খোলা থাকলেও হয়নি কোন কাজ কজকর্ম। 
বোমা হামলার ঘটনাকে আওয়ামীলীগকে দায়ী করেছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ কমসূচির উপর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালায়। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি মিছিল এসে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি অবিলম্বে এই হামলার সাথে জড়িতদের খুজে বের করে শাস্তির দাবি জানান। 
হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনার ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার তার ওপর হরতালকারীরা বোমা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।  
কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানান, শহরে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুরে দড়াটানায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে শহরে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
যশোর সদর উপজেলার কুয়াদা বাজারে হরতালে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল চলাকালে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাদে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে ত্রি-মুখি সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সংঘর্ষে পুলিশের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, কোতয়ালি মডেল থানার এসআই ওহিদুজ্জামান, এএসআই মোস্তফা(নং-এবি-৩০৯),এএসআই ইর্সরাফিল, কন: আব্দুস সাত্তার (৮১০), কন: আতিয়ার(৮০১), কন: জয়নাল(৫৫২),কন: আশরাফ, কন: রবিউল, কন: সাইদুর হোসেন, কন: শামীম, কন: আলী হোসেন প্রমূখ। এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত ও আ.লীগের কর্মীরাও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, রোববার পিকেটিং করার অভিযোগে ১৮জনকে  যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ আটক করেছে। আটককৃতরা হলো,  যশোর শহরের চাঁচড়ার জাহিদুল, সিটি কলেজ পাড়ার লিটন, বকচর এলাকার সোনা, আরজান হোসেন সোহাগ, ইকরামুল হক তুহিন,সাতক্ষীরার বাবু গাজী, তাপসীডাঙ্গার সুরুজ আলী, মুড়লী মোড়ের মশিউর রহমান, শংকরপুর এলাকার মাহামুদুল হাসান, আমির হোসেন মিন্টু, বকচর এলাকার হাফিজুর রহমান, আসিফ,  সিটি কলেজ পাড়ার জাকির, টিটু, কামরুল, ইমদাদুল, মুক্তার, তাপস রায়। এছাড়া রোব বার সন্ধ্যায় পুলেরহাট এলাকা থেকে বোমাসহ যুবলীগ নেতা সিরাজ কে আটক করে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়