নরসিংদী: গত শুক্রবার নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সংঘটিত ভয়াবহ গুপ্তহত্যার আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। একটি পর্ণো ছবি দেখিয়ে জিম্মি করে অবৈধ যৌন সম্ভোগের হাত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী রিফা আক্তারকে রক্ষার জন্যই মাসুদ রানাকে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার মাসুদ রানার হত্যাকারী রায়হান আহমেদ রাজীব নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এ তথ্য জানিয়েছে।
রাজীব আদালতকে জানিয়েছে, সে ব্রাহ্মন্দী কেকেএম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর এসএসসি পাশ করেছে। সে স্কুলে পড়া-শোনাকালীন রিফা আক্তার নরসিংদী কাদির মোল্লা সিটি কলেজে পড়াশোনা করতো। সে সময় ইংরেজী বিষয়ে রাজিব দুর্বল থাকায় তার খালাতো ভাই মামুনের মাধ্যমে রিফার সাথে তার পরিচয় ঘটে। মামুন রিফাকে রাজীবের প্রাইভেট টিউটর হিসেবে নিযুক্ত করে দেয়। সেই থেকে রিফা আক্তার রাজীবের ব্রাহ্মন্দীস্থ বাসায় গিয়ে তাকে প্রাইভেট পড়াতো। আর সে সূত্রেই রাজীব রিফার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। রিফাও কোন এক দুর্বল মুহুর্তে রাজীবের কাছে মাসুদ রানার কুকীর্তির কাহিনী জানায়। রিফা আক্তার রাজীবকে জানায় যে, মোবাইল ফোন কানেকশনের মাধ্যমে মাসুদ রানার সাথে রিফা আক্তারের পরিচয় ও প্রেম ঘটে। সেই থেকে মাসুদ রানা নরসিংদী আসতো এবং কোন কোন সময় রিফা আক্তারও ঢাকায় যেতো। এই সুযোগেই মাসুদ রানা রিফা আক্তারকে বিয়ে করার কথা বলে তার সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং এক পর্যায়ে মাসুদ রানা গোপনে ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে রিফা ও তার যৌনক্রিয়ার অশ্লীল ছবি ধারণ করে রাখে। পরে রিফাকে এই ছবি দেখিয়ে জিম্মী করে দিনের পর দিন তাকে ভোগ করতে থাকে। রিফা তাকে বিয়ে করার জন্য মাসুদ রানাকে বার বার অনুরোধ করলেও সে নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকে। এ অবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে রিফা আক্তার তাকে মাসুদ রানার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাজীবকে অনুরোধ করে। এতে রাজীব মাসুদ রানার উপর ক্ষিপ্ত হয়। গত শুক্রবার (৩১মে) রাজীব তার বন্ধু মোহনসহ ৬ জন বন্ধু মাসুদ রানাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ঢাকা থেকে কৌশলে নরসিংদী নিয়ে আসে। তাকে দুপুরে আপ্যায়ন করে নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায় এবং রিফা আক্তারের সাথে দেখা করাবে বলে অপেক্ষমান রাখে। সন্ধ্যার পর তারা মাসুদ রানাকে হত্যার জন্য ব্রাহ্মন্দী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে গিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় এলোপাতারি ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যা করে। মাসুদ রানার পিঠে ৭টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রতিটি ছুরিকাঘাতই ফুসফুস এবং লিভার ছিদ্র হয়ে গেছে। তার মাথা, ঘাড় ও গলায় কমবেশী ৪০টি কোপের আঘাত ছিল। যার ফলে তার পিছনের অংশের মাংস ছোট ছোট টুকরো হয়ে রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
এদিকে সোমবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসংদী মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম, রাজীব, মোহন ও রিফা আক্তারকে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করেন। মোহনের ৫ দিনের রিমান্ড দাবী করে। বিজ্ঞ আদালত মোহনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং রাজীবের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন। পরে রিফা আক্তারকে নরসিংদী জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।
অপরদিকে নিহত মাসুদ রানার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা জানায়, মাসুদ রানার সাথে রিফার বিয়ের কথা চলছিল। এ ঘটনা তার বাবা-মাকেও জানানো হলে তারাও বিয়েতে রাজি হয়েছিল। মাসুদ রানাকে রিফার সাথে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে সুকৌশলে তাকে নরসিংদী নিয়ে রাজীব ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নির্মমভাবে খুন করে। এ ব্যাপারে নিহত মাসুদ রানার পিতা মুকুল হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।(ডিনিউজ)
খবর বিভাগঃ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়