কানাইঘাটে ৪র্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে জোর পূর্বক বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এলাকা জুড়ে তোলপাড় চলছে। নাজিয়া আক্তার নামে ৯ বছরের এ বালিকার মা পারভীন বেগম ও ঘটকসহ বাল্যবিয়ের ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারী ফৌদ গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে পারভীন বেগম (৩০)-এর সাথে বীরদল আগফৌদ গ্রামের সৌদি প্রবাসী জয়নাল আবেদীনের কয়েক বছর পূর্বে বিয়ে হয়। প্রায় ৫বছর পূর্বে জয়নাল আবেদীন প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার বড়ভাই সৌদি প্রবাসী আব্দুল মুমিন (৫৫)-এর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন পারভীন বেগম। এক পর্যায়ে পারভীন বেগমকে নিয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে যান মুমিন। খবর পেয়ে জয়নাল আবেদীন দেশে এসে স্ত্রী পারভীন বেগমকে ডিভোর্স দেন। অপরদিকে আব্দুল মুমিন মাঝে মধ্যে দেশে এসে সিলেট ও কানাইঘাটে বাসা নিয়ে বসবাস করে গোপনে আবার সৌদি আরবে চলে যেতেন। পারভীন বেগম তাঁর প্রথম স্বামীর মেয়ে নাজিয়া আক্তারকে বীরদল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে টিসি নিয়ে কানাইঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এনে বিগত ৩ ফ্রেবুয়ারী ৪র্থ শ্রেণীতে ভর্তি করেন। স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাজিয়া আক্তারের বয়স ৯ বছর ৭ মাস বলে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাস খানেক পূর্ব থেকে নাজিয়া আক্তার স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় তিনি তার বাসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার মা তাকে গোপনে বিয়ে দেওয়ার আলোচনা করছেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি মেয়ের মায়ের সাথে দেখা করে বাল্য বিয়ের কুফল ও এ সংক্রান্ত আইনকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে বলেন। এছাড়া তিনি কানাইঘাট পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের কাজীকেও এ ব্যাপারে অবগত করে রাখেন। কিন্তু পারভীন বেগম মেয়ের পিতা জয়নাল আবেদীনকে এব্যাপারে কোন কিছু না জানিয়ে দ্বিতীয় স্বামী আব্দুল মুমিন এবং বাবা আব্দুর রশিদ ও বিয়ের ঘটকদের যোগ সাজশে গত শুক্রবার নাজিয়াকে জোরপূর্বকভাবে একই উপজেলার ৩নং দিঘীর পাড় ইউনিয়নের লন্তির মাটি গ্রামের আব্দুল মতিনের পুত্র কিশোর শমসের আলম ১৮ এর সাথে গোপনে বিয়ে দেন। ঐদিনই নাজিয়াকে তার স্বামীর বাড়ীতেও পাঠানো হয়। পুরো বিষয়টি এলাকার লোকজন জানতে পেরে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেন। বিষয়টি অনুসন্ধান করে জানা যায়, পারভীন বেগম দ্বিতীয় স্বামীর সংসার নির্বিঘ্নে করার জন্য নাজিয়া আক্তারকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পিতা আব্দুর রশিদ ও অন্যান্য ঘটকদের সহযোগিতায় বয়স গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধনের সনদ পত্র সংগ্রহ করে মেয়েকে ১৮বছরের কিশোরের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নাজিয়ার বিয়ে ৬নং সদর ইউনিয়নের কাজী অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অসুস্থ কাজীর দায়িত্বে থাকা তাঁর ছেলে আব্দুল কাদিরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকাজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কানাইঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামানসহ অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং এলাকার সচেতন মহল কিশোরী নাজিয়া বেগমকে স্বামীর বাড়ী থেকে উদ্ধার করে তাঁর লেখা পড়া নিশ্চিত করন ও বাল্য বিবাহের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে নাজিয়া আক্তারের মা পারভীন বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার মেয়েকে যখন ইচ্ছা তখন বিয়ে দেব। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা এলাকাবাসীর কি আসে যায়!
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়