Tuesday, November 11

পৌনে পাঁচ বছর পর আদালতের গণনায় ‘হেরে যাওয়া’ মেয়র প্রার্থী এগিয়ে


এহসানুল হক জসীম: 

সিলেট জেলার কানাইঘাট পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে অন্য আরো কয়েকজনের সাথে মোঃ সোহেল আমিনও অংশগ্রহণ করেছিলেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমানকে ১৪৬ ভোট বেশি দেখিয়ে তখন বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  

মেয়র পদের ফলাফলে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিলো তখনই। ফলাফল মেনে নিতে পারেননি সোহেল আমিন। পুণরায় ভোট গণনার আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। দীর্ঘ প্রায় পৌনে পাঁচ বছর পর সিলেটের একটি আদালতে বিচারকের উপস্থিতিতে ভোট গণনায় দেখা যায়, সোহেল আমিন ৬৮৪ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আদালত এখনো রায় বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেননি। 

কথা হয় সোহেল আমিনের সাথে। তিনি বলেন,”সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সেই সময় আমাকে পরাজিত করা হয়। নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রগুলোর পোলিং অফিসারদের দিয়ে বিচারকের উপস্থিতিতে আদালতে ভোট পুণঃগণনায় দেখা যায়, লুৎফুর রহমানের ব্যালটের বান্ডিলে ৫৫৪ টি সাদা ব্যালট ঢুকানো হয়েছিলো। আরো অনিয়ম করা হয়। আশা করি, আদালত এখন আমাকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে রায় দেবেন।”  

আদালতের গণনা অনুযায়ী, ‘জগ’ প্রতীক নিয়ে সোহেল আমিন ৬৮৪ ভোটে এগিয়ে আছেন। অথচ তাঁকে পরাজিত দেখিয়ে নৌকার প্রার্থীকে ১৪৬ ভোট বেশি দেখিয়ে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিলো।  

মেয়র পদে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী লুৎফুর রহমানকে নৌকা প্রতীকে ৩,৮৩২ ভোট দেখিয়ে সেই সময়ের কানাইঘাট পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ফয়সল কাদের বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। পরে সেই অনুযায়ী গেজেট প্রকাশিত হয়। 

সোহেল আমিনকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩,৬৮৬ ভোট দেখানো হয়। মেয়র প্রার্থী ছিলেন ছয় জন। সেই সময়ের ঘোষিত ফলাফলে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিন নারিকেল গাছ প্রতীকে পান তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৩ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী মো. শরিফুল হক ২ হাজার ৫২০ ভোট, মোবাইল ফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাওছার আহমদ ৬১৩ ভোট এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নজির আহমদ হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছিলেন ২১২ ভোট।

তিনটি ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট পুণঃগণনার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেছিলেন সোহেল আমিন। ২০২১ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারী তারিখে হাইকোর্ট এক আদেশে ৮ সপ্তাহের জন্য লুৎফুরকে মেয়র ঘোষণা করে প্রকাশ করা গেজেট ও শপথ স্থগিত করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার জজের কাছে লুৎফুরের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত হয়ে যায়। সেই সুযোগে আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফুর রহমান মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে অপসারিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। 

পরবর্তীতে আপিল বিভাগে শুনানীর পর ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ আদালত সিলেটের নির্বাচনী ট্রাইবুন্যালকে ৬০ দিনের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তির আদেশ দেন। সুপ্রীম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী অবশেষে আদালত ৬০ দিনের স্থলে দুই বছরেরও অধিক সময় নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির দিকে এগুচ্ছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, দু’একদিনের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। 

সোহেল আমিন জানান, গত সোমবার (১০ নভেম্বর ২০২৫) আদালতে  কানাইঘাট পৌরসভাধীন ফাটাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবনগর দারুল কোরআন মাদ্রাসা এবং দুলর্ভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভোট গণনা করা হয়। 

সবচেয়ে বেশি ভোট কারচুপির অভিযোগ ছিলো ফাটাহিজল কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন শাখাওয়াত হোসেন। সেই সময় উচ্চ আদালত তাঁকেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। 

ফাটাহিজল কেন্দ্রে মোট ভোট ছিল ২৭১১। কানাইঘাট পরিসংখ্যান অফিসের সেই সময়ের তথ্যমতে, এখানকার ৫২৯ জন ভোটার প্রবাসী ছিলেন, এই তালিকার অনেকে মৃত্যুবরণও করেন। এই ভোটকেন্দ্রের জীবিত ও দেশে থাকা ভোটারের শতভাগ ভোট কাস্টিং হলেও ২১৮২ ভোট হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু রিটার্নিং অফিসার থেকে প্রদত্ত ভোটার তালিকায় ২৬১১ ভোট কাস্টিং দেখানো হয়, যা অস্বাভাবিক, ভুতুড়ে এবং কারচুপির সীমা অতিক্রম ছিলো। 

সোহেল আমিন বলেন, ফাটাহিজল কেন্দ্রে তাঁর প্রকৃত প্রাপ্ত ভোট ছিলো কিন্তু ৬৬৬, দেখানো হয়েছিলো ২৬৯; দুর্লভপুর কেন্দ্রে ৭১৩ ভোট পেলেও দেখানো হয় ৫১৩ আর শিবনগর মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২৮৯ ভোট পেলেও দেখানো হয় ৮৯ ভোট।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়