Friday, March 25

কানাইঘাটে মায়ের চোখের সামনে ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করল প্রতিপক্ষ


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের আগতালুক গ্রামে গোষ্ঠীগত দ্বন্ধের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার(২৪ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মায়ের চোখের সামনে ছেলেকে কোপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ।  

৪ জনকে গুরুতর আহত করা হয়েছে। আশংকাজনক অবস্থায় ৪ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

নিহত আগতালুক গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের ছেলে ৪ সন্তানের জনক সাহেদ আহমদ (৩৬) এর লাশ ময়না তদন্তের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। 

এ ঘটনায় আগতালুক গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ নিয়ে যাতে করে আইন শৃংখলার অবনতি না হতে পারে এজন্য আগতালুক গ্রাম সহ আশপাশ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম এলাকায় যান এবং নির্মম ভাবে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে আব্দুল মন্নান নামে ১ জনকে আটক করে পুলিশ।  

শুক্রবার সকালের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেটের এডিশনাল পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আলম, কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি আব্দুল করিম, থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম সহ সিলেট পিবিআই এর একটি টিম। এছাড়া র‌্যাব-৯ এর একদল কমর্কর্তা বৃহস্পতিবার রাতে এলাকায় অবস্থান করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে আদিপত্য বিস্তার নিয়ে আগতালুক গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হারুন রশিদ এবং মাওলানা জসিম উদ্দিন গোষ্টির লোকজনদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। দু’গোষ্টির লোকজনদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে গত বছর বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা সহ মামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি হামলার ভয়ে উভয় গোষ্টির লোকজন গ্রামে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে আসছেন হাট-বাজারেও দলবেধে যেতেন তারা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে হারুন রশিদ গোষ্টির আগতালুক গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের পুত্র সাহেদ আহমদ, তার ভাই মস্তাক আহমদ, সোহেল আহমদ, সুলতান আহমদ ও তাদের চাচা আনছার আলী এক সাথে বাড়ীর অদূরে অবস্থিত স্থানীয় সীমারে বাজারে কেনাকাটা করতে যান। কেনা কাটা করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে একসাথে তারা বাড়ী ফেরার পথে পথিমধ্যে গ্রামের পাঁচপীর জামে মসজিদের পশ্চিম রাস্তার কাছে আসা মাত্রই গ্রামের অপর গোষ্টির মাওলানা জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক লোকজন ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ৪টি গ্রæপে বিভক্ত হয়ে ৪ সহোদর ভাই সহ তাদের চাচার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ছেলেদেরকে নিরাপদে প্রতিদিনের মতো বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের মা হাসনা খাতুন মসজিদের পাশে একটি বাড়ীর রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। বিদ্যুত না থাকার কারনে অন্ধকারে হামলাকারীরা উপর্যপুরী ভাবে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সাহেদ, তার ভাই সোহেল, সুলতান, মস্তাক ও তাদের চাচা আনছার আলীর উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ী ভাবে কোপাতে থাকলে হামলাকারীদের হাত থেকে ছেলেদেরকে রক্ষা করার জন্য তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন তাদের মা। তারপরও তাকেও এলোপাতাড়ী ভাবে পিটিয়ে হামলাকারীরা জখম করে। এ সময় মায়ের চোখের সামনে ছেলে সাহেদ আহমদের মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপিয়ে ঘটনাস্থলেই নির্মম ভাবে হত্যা করে হামলাকারীরা। আশংকাজনক অবস্থায় তার অপর ৩ ভাই সহ চাচাকে স্থানীয় এলাকাবাসী উদ্ধার করে সিওমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে সোহেল আহমদের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান একের পর এক গোষ্টিগত দ্বন্ধের জের ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার পর সর্বশেষ নিরীহ সাহেদ আহমদের মৃত্যুতে গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পরই হামলাকারীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। নিহতের মা হাসনা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে জানিয়েছেন তার চোখের সামনে গ্রামের মৌলভী জসিম উদ্দিন ও কামাল উদ্দিন, আতাব উদ্দিন, হেলাল, আব্দুল মান্নান, নিজাম, আফলাল সহ ৩৫/৪০ জন ধারালো অস্ত্রধারী তার ছেলেকে কোপিয়ে কোপিয়ে হত্যা করেছে। এব্যাপারে থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন গোষ্টিগত দ্বন্ধের জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। জড়িত থাকার দায়ে আব্দুল মান্নান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আটক করতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়