Thursday, July 25

ওরসের নামে এসব কি হচ্ছে!

মাহবুবুর রশিদ :: ‘ওরস’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ওলীমা বা বিবাহের খানা, জিয়ারত করা, বিবাহের দাওয়াত, ইত্যাদি। পারিভাষিক ও রূপক অর্থে ‘কোন আউলিয়ায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের ইন্তেকালের দিন ফাতিহা পাঠ উপলক্ষ্যে ওয়াজ-মাহ্ফিল, মীলাদ-ক্বিয়াম ইত্যাদির ব্যবস্থা করা’।

প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে পীর,মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দ্বীনের মাজারে নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী দু,একদিন ব্যাপী পালিত হয় ওরস শরীফ। দেশের আধ্যাতিœক নগরী হিসেবে খ্যাত সিলেটেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি।

উপমহাদেশের অন্যতম ইসলাম প্রচারক ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল ইয়ামনী (রহঃ)মাজারেও প্রতিবছর নির্দিষ্ট দিনে ওরস শরীফ পালিত হয়, এবং এ-ওরস শরীফ দেশের সবচেয়ে বড় ওরস শরীফ বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। বিশেষ করে মাজার ভক্ত লোকদের কাছে ওরস শরীফের আবেগটাই অন্যরকম।

হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওরস শরীফে আগত ভক্তদের কাছে “বাবার মাজার” নামে পরিচিতি। ওরস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেন,বাস ও ট্রাক যোগে লাকড়ী নিয়ে দরগাহ প্রাঙ্গণে হাজির হন ভক্ত, আসেকানরা।

উরুস শরীফের প্রস্ততি উপলক্ষে কয়েকদিন পূর্বে লাল কাপড় পরিধান করে ঢোল,তবলা বাজিয়ে শুরু হয় লাকড়ী তোলা উৎসব। বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো দরগাহ প্রাঙ্গণ। রঙ-বেরঙের পোষ্টারে ছেয়ে যায় পুরো নগরী।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় একজন অলীর মাজারে ওরুসের নামে নাচ-গান,নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ,বেপর্দা-বেহায়াপনা,গান-বাজনা,বিধর্মী কার্যকলাপ ও বিজাতীয়দের অনুকরণে শিরনীর গরুকে সাজিয়ে শোভাযাত্রা করা,মাজারকে সিজদা করা,ইত্যাদি অনৈসলামিক ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপ.ইসলামী বিধি-বিধান ও শরীয়ত পরিপন্থী।

অলি-আউলিয়া,পীর-বূযুর্গ, মাশায়েখদের মাজার জিয়ারত করা দোষের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজ। কিন্তু মাজার জিয়ারতের নামে বিশেষ করে ওরসের নামে সিলেটে ইদানীং যা ঘটছে তা কোন অবস্থাতেই একজন মুমিন ব্যাক্তি সমর্থন করতে পারেনা। যারা ঠিকমত এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে যতœশীল নয়, অথচ বিপদে-আপদে মাজারে শিরনী মানত করা ,মাজারে গিয়ে মাজার সিজদা করা,মাজারে বাতি জ্বালানো,কবরে চুমা দেওয়াকে জরুরী মনে করে। মনে হয় যেন এটা না করলে তাদের বিশেষ ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ধরনের ধ্যান-ধারণা পোষনকারী ব্যাক্তিদের সচেতন হওয়া উচিত। আবার অনেকে কবরকে পূজি বানিয়ে তার উদ্দ্যেশ্য হাসিলের চেষ্টা করে, এসব নিছক ভন্ডামী,শিরক ছাড়া আর কিছু নয়।

হযরত শাহজালাল (রহ.) সহ ৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটে যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডীন হয়েছে, তাদের পদ ধূলিতে ধন্য এ সিলেটে অনৈসলামিক কার্যকলাপ একেবারেই শোভা পায়না।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যেসব আলেম-ওলামা এসব শিরিক-বেদআত এর বিরুদ্বে কঠোর অবস্থানে ছিলেন আজ তাদের মাজারেই ওরসের নামে চলছে এসব বেহায়াপনা।

মাজারের নামে মান্নত, মাজারে সিজদা করা, দান-দক্ষিণাসহ পশু জবাই, মাজারওয়ালাকে উদ্দ্যেশ্য করে কান্নাকাটি, বুক চাপড়ানো এবং ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, রোগমুক্তি-কারামুক্তি, সুস্থতা ও সচ্ছলতা বাবার কাছে প্রার্থনা করা এসব নিছক ভন্ডামী।

অথচ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি আমার সম্পর্কে কোনো মুসিবতের ইচ্ছা করেন, তাহলে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ডাক তারা কি সে মুসিবত দূর করতে পারবে? কিংবা তিনি যদি আমার প্রতি মেহেরবানির ইচ্ছা করেন তাহলে তারা কি সে মেহেরবানি রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ভরসাকারীগণ তাঁরই ওপর ভরসা করে। (সূরা যুমার-৩৮)।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ) নিজেও সাহাবীদের কবর জিয়ারত করেছেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন,তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিওনা(অর্থাৎ কবরের মতো ইবাদত-বন্দেগী শূন্য করোনা)। এবং আমার কবরকে উৎসবের স্থান বানিয়োনা। বরং আমার প্রতি দুরুদ পড়। কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দুরুদ আমার নিকট পৌঁছবে(আবু দাউদ)।

পরিশেষে ঈমানদার মুমিন মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি আরজ, আমরা মাজার জিয়ারত করব পূণ্যের আশায়,কখনো বাবার কাছে নয় বরং মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের কাছে আমরা আমাদের সকল অভাব,অভিযোগের জন্য প্রার্থনা করব। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন। আমীন।

লেখক: সম্পাদক,কানাইঘাট নিউজ ডটকম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়