ডেস্ক নিউজ:
শ্রীলংকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর
সেখানকার মুসলিমরা নিজেরাই একটি মসজিদ ভেঙে ফেলেন। সম্প্রতি স্থানীয়রা
মিলেমিশে মাদাতুগামার একটি মসজিদ ভেঙে ফেলেন। তারা বলছেন, মসজিদটি
উগ্রবাদীরা ব্যবহার করত। তাই উগ্রবাদীদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য
শ্রীলংকার মুসলিমদের ছোট একটি গ্রুপ মসজিদটি ভেঙে ফেলেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে
মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত বা
এনটিজে সদস্যরা বেশি যাতায়াত করত বলে মনে করা হয়। পরে এনটিজে পরিচালিত ওই
মসজিদটি সিলগালা করে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ভয়াবহ ওই বোমা হামলার ঘটনার পর মুসলিম
নারীদের মুখ ঢেকে রাখায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে শ্রীলংকার সরকার। দেশটিতে এখনও
জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে, যার অবসান হবে আগামী ২২ জুন।
কিন্তু দেশটির মুসলিমরা সবদিক থেকেই
বেশ চাপের মধ্যে আছে। ওই ঘটনার পর বহু জায়গায় মুসলিমদের বাড়িঘর ও
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছে। মুসলিমরা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার
হয়েছেন।
এ ছাড়া রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু সরকার থেকে মুসলিম মন্ত্রীদের সরিয়ে নেয়ার দাবিতে অনশনের ডাক দিয়েছে।
মাদাতুগামার প্রধান মসজিদের একজন
ট্রাস্টি এমএইচএম আকবর খান বলেছেন, ইস্টার হামলার পর অমুসলিমরা আমাদের
সবাইকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। কেন সেখানকার মুসলিমরা মসজিদটি
ভেঙে ফেলল তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ইস্টার হামলার পর পুলিশ কয়েক দফা
তল্লাশি করেছে মসজিদটিকে। এতে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। মুসলিমদের সঙ্গে
অন্য সম্প্রদায়গুলোর অবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
আকবার খান আরও বলেন, আমাদের শহরে অন্য যে
মসজিদ আছে, সেটি মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য যথেষ্ট। কয়েক বছর আগে অন্য একটি
গোষ্ঠী প্রশ্নবিদ্ধ মসজিদটি নির্মাণ করে।
পরে মে মাসে পুরনো মসজিদের সদস্যরা একটি
সভায় মিলিত হয়ে সর্বসম্মত হয়ে বিতর্কিত মসজিদটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত
নেয়। পরে স্থানীয়রা সেটি ধ্বংস করে বলে জানান তিনি।
মিনার ও নামাজ কক্ষ ভেঙে ফেলে ভবনটি পুরনো মালিকের হাতে দিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান আকবর খান।
এদিকে মসজিদ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত সবাই
ভালোভাবে নেননি। শ্রীলংকায় মুসলিমদের সর্বোচ্চ তাত্ত্বিক কর্তৃপক্ষ অল
সিলন জামিয়াতুল উলামা বলছে, প্রার্থনার জায়গার ক্ষতি করা উচিত নয়।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘মসজিদ আল্লাহর ঘর। এর ভেঙে ফেলা বা ক্ষতি করা ইসলামী চেতনার পরিপন্থী।’
শ্রীলংকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আ রামিজ বলেন, মসজিদ ভাঙার পন্থা বেছে নিলে এমন শত শত মসজিদ ভাঙতে করতে হবে।
তার ধারণা, ১০-১৫ শতাংশ মসজিদ উগ্রবাদী
গোষ্ঠীগুলো চালায়। কারণ গত দুদশকে বেশ কিছু গোষ্ঠী ওয়াহাবি মতাদর্শ
দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই শ্রীলংকার মুসলিমরা উগ্রবাদীদের সহ্য করে আসছিল। কিন্তু তারা চুপ থাকায় উগ্রবাদীরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
‘মসজিদটি ভেঙে ফেলার পর আমাদের কম ক্ষোভের
শিকার হতে হচ্ছে। সিংহলিজ ও তামিলরা আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে সম্পৃক্ত
করছে, ফলে উত্তেজনাও কমছে,’ যোগ করেন এ শিক্ষক।
প্রসঙ্গত শ্রীলংকায় ৭০ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ
ধর্মাবলম্বী। আর মুসলিম আছে ১০ শতাংশের মতো। দেশটিতে প্রায় ২ হাজার ৫৯৬
রেজিস্টার্ড মসজিদ আছে।
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়