Tuesday, January 1

হাসপাতাল যেন পাঁচতারকা হোটেল

প্রকাণ্ড ঘরে চোখ ধাঁধানো ইন্টেরিয়র। হোম থিয়েটার, ওয়াইফাই, ল্যাপটপ, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সোফা থেকে শুরু করে ম্যাসাজ চেয়ার, সার্বোক্ষণিক সহায়তাকারী- কী নেই!
বিশেষ কিছু খেতে ইচ্ছে হলে শুধু ফোন তুলে বলার অপেক্ষা। শেফ নিজে রান্না করে নিয়ে আসবেন। শপিং, শহর ঘোরা বা স্পা-য়ের জন্য যেতে চাইলে চলে আসবে চালকসহ দামি গাড়ি। স্থানীয় ভাষা বুঝতে অসুবিধা হলে অনুবাদকের ব্যবস্থা করা হবে।
এ পরিষেবা পাঁচতারা হোটেলের নয়, হাসপাতালের। আর এমন বিলাসবহুল চিকিৎসা সেবা এখন পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন কর্পোরেট হাসপাতালে। তাদের এই প্যাকেজের কোনোটির নাম ‘মহারাজা সুইট’ আবার কোনোটার নাম ‘প্রেসিডেনশিয়াল সুইট’।
হাসপাতাল ব্যবসার সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত এক প্রবীণ কর্মকর্তা ভাষায়, ‘হাসপাতালে আমরা মধ্যবিত্তদের জন্য যেমন ঘর রাখছি, তেমন অতি-উচ্চবিত্তদের কথাও আলাদা করে ভাবতে হবে। কেউ যদি হাসপাতালে দৈনিক ২০ হাজার টাকার ঘরে থাকতে চান, ব্যবসা করতে এসে তাকে ফেরাব কেন? কলকাতায় এমন ভোক্তা এখন অনেক আছেন।’
চিকিৎসা পরিষেবার কাজের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, ‘মেডিকেল টুরিজ়ম’ চাঙ্গা করতেও এই ‘পাঁচতারকা পরিষেবা’ জরুরি। নয়তো বিদেশিরা আসবেন কেন?
দিল্লির বেশ কিছু নামি-দামি হাসপাতালে দৈনিক ২৫০০০ থেকে ৩৭০০০ টাকার সুইট বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়েছে। গুরুগ্রামের একটি হাসপাতালে জাকুজ়ি, স্পা, ৪০ আসনের প্রাইভেট সিনেমাহল, শপিং মল পর্যন্ত আছে। কলকাতা এতটা এগুতে না পারলেও এখানেও এখন হাসপাতালে দৈনিক ১৬০০০ বা ২৫০০০ টাকার সুইটে জায়গা পেতে লাইন পড়ছে।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ় এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাব-কমিটির চেয়ারম্যান রূপক বরুয়া বলছেন, ‘ঠিক এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গের কর্পোরেট হাসপাতালগুলি চিকিৎসার খরচ বেঁধে দেয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। লিখিতভাবে সে কথা স্বাস্থ্য কমিশনে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু খরচ বেঁধে দিলে এই ‘এক্সক্লিউসিভ’ পরিষেবা দেয়া অসম্ভব। মেডিকেল ট্যুরিজম তাতে ধাক্কা খাবে।’
কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের ‘প্রেসিডেনশিয়াল সুইট’-র দৈনিক ভাড়া ২৫০০০ টাকা। মূলত ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র জগতের মানুষজন কিংবা বিভিন্ন সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এগুলোতে থাকছেন। রোগীর রুমে হোম থিয়েটার, ওয়াইফাই, ল্যাপটপ, প্যানট্রি থেকে শুরু করে ম্যাসাজ চেয়ার, সবই আছে। পাশে আছে পরিজনেদের ঘর। ঘরের বাইরে সব সময়ের সহায়ক দাঁড়িয়ে থাকেন। যেকোনো দরকারে তাকে ডাকা যায়। রোগীকে বিমানবন্দর থেকে আনা-নেয়া, রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা চাইলে বিশেষ এসকর্ট ও গাড়ি দিয়ে তাদের কলকাতা শহর ঘোরানো, শপিংয়ের ব্যবস্থাও করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন শেফ এসে রোগীর কী খেতে ইচ্ছে করছে, তা জেনে রান্না করেন।
আমরি হাসপাতালের মুকুন্দপুর ক্যাম্পাসে রয়েছে দৈনিক ২০০০০ টাকার ‘রয়্যাল সুইট’। এই হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, মাসে ১৮-২০ দিন ‘রয়্যাল সুইট’ ভর্তি থাকে। তারাও রোগীর সঙ্গীদের শহর ঘোরা বা শপিংয়ের ব্যবস্থা করে দেন। এ ছাড়াও হাসপাতালে রয়েছে ‘শোক পালনের ঘর।’ কোনো রোগীর মৃত্যু হলে আত্মীয়েরা সেই ঘরে একান্তে সময় কাটাতে পারেন।
কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের বিশেষ সুইটের দৈনিক ভাড়া ১৬০০০। অন্য সব সুবিধার সঙ্গে এখানে কার্টলারি সেটের ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়া হয়। থাকেন সব সময়ের সহায়ক। ফর্টিসের ‘রয়্যাল সুইট’ এর দৈনিক ভাড়া ১৩৫০০ টাকা। সেখানে রোগীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিশেষ ‘টেরাস গার্ডেন’ রয়েছে। বেলভিউ-এর দৈনিক ১৪০০০ টাকার স্যুইটেও রয়েছে সাচ্ছন্দ্যের যাবতীয় উপকরণ। কর্তৃপক্ষ জানালেন, হাসপাতালের নতুন ভবনে জাকুজ়ি, স্পা-এর ব্যবস্থাও করবেন। কারণ, তার চাহিদা রয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়