Thursday, June 14

কানাইঘাটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা অব্যাহত পাহাড়ী ঢলে কানাইঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। গত বুধবার ভোর রাতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে থেকে আকষ্মিক ভাবে তীব্র বেগে পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে কানাইঘাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বুধবার রাতে পানি অনেকটা কমে গেলেও হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার সেহরীর পর উজান থেকে আবারও ভয়াবহ পাহাড়ী ঢল নেমে আসলে পুরো উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বানের পানিতে তলিয়ে যায়। অনেকেই বলেছেন ৮৮/২০০২ সালের পর কানাইঘাটে এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নী। বানের পানিতে কানাইঘাট-দরবস্ত সড়ক, গাজী বুরহান উদ্দিন সড়ক, জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কের অধিকাংশ জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সাথে কানাইঘাট উপজেলার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার সুরমা নদীর পানি সকালে বিপদ সীমার ২০৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেল ৫টার দিকে বিপদ সীমার ১৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুরমা ও লোভানদী সহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র স্রােতের কারণে নদী ভাঙ্গণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সুরমা নদীর ডান তীরে অন্তত ১০/১৫টি স্থানে সুরমা ডাইক ভেঙ্গে প্রবল স্রােতে পানি বের হয়ে মানুষের বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়েছে। এছাড়া সুরমা ডাইকের একাধিক জায়গায় ভয়াবহ ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। নদী গর্ভে গত দু’দিনে প্রায় শতাধিক বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত লোকজনদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। অনেকের বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বানের পানি গ্রামের পর গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত ৫ শতাধিক কাচা বাড়ি ঘর বিদ্বস্থ হয়েছে। শত শত কাচা ঘর-বাড়ি ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ক্ষয় ক্ষতির পাশাপাশি বানের পানিতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় গ্রামীণ রাস্তা ঘাট ও আউশ ধানের মাঠ, সবজি বাগান ও মৎস্য সেক্টরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার ৯টি ইউপির চেয়ারম্যানরা জানান, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এ ধরনের আকষ্মিক ভয়াবহ বন্যা তারা দেখেননি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, যে ভাবে নদী ভাঙ্গণ ভয়াল রুপ নিয়েছে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মারাত্মক দুর্ভোগ নেমে আসবে। জরুরী ভিত্তিতে পানিবন্ধি মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। সুরমা নদীর প্রবল স্রোতে কানাইঘাট বাজারে কোমর পানি বিরাজ করছে। এতে শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বাজারের সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। বন্যায় প্লাবিত হয়ে উপজেলার মুলাগুল বাজার, কান্দলা নয়া বাজার, মন্তাজগঞ্জ বাজার, ডনা বাজার, সুরমা বাজার, আন্দুর মুখ বাজার, সড়কের বাজার, সুরইঘাট বাজার, বুধবারী বাজার, ভবানীগঞ্জ বাজার, বীরদল বাজার, গাছবাড়ী বাজার, মুকিগঞ্জ বাজার, তালবাড়ী বাজার, রাজাগঞ্জ বাজারের অধিকাংশ দোকার পাট বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ঈদের দু’দিন পুর্বে এধরনের ভয়াবহ বন্যায় মানুষের ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার মালামাল বিক্রয়ের জন্য আনলেও এবং অধিকাংশ বাজারগুলি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং ক্রেতারা না থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন। গত ৩ দিন থেকে অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা তীব্র গতির পাহাড়ী ঢলের কারণে উপজেলা জোড়ে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় জনমনে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দেখার জন্য কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসি কান্ত হাজং গত দু’দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে বন্যা পরিস্থিতি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সার্বক্ষণিক অবহিত করছেন এবং জরুরী ভিত্তিতে ২০ মেট্রিক টন জি.আর চাল ও নগদ টাকা এবং শুকনো খাবার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে বার্তা পাঠিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা কানাইঘাট নিউজকে বলেন, পাহাড়ী ঢলের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, মূলত পাহাড়ী ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। উপজেলায় ১৯টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে সেখানে এ পর্যন্ত ২০টি পরিবারের লোকজন আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা ঘাট বিদ্বস্থ ও প্রায় ১৮টি কালভার্ট ও ৩১টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্ধকৃত ১২ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজনে বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ ও সিলেট-০৫, (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের এমপি আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন। তিনি কানাইঘাটের বন্যা কবলিত সব এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে জরুরী ভিত্তিতে নদী ভাঙ্গণ কবলীত এলাকায় ভাঙ্গণ রোধ ও দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর অালম রানা ও কানাইঘাট থানার অফিসার ইন্চার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ উপজেলার বন্যা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এদিকে বন্যায় উপজেলার কয়েক হাজার গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। 

কানাইঘাট নিউজ ডটকম/১৪জুন ২০১৮ ইং

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়