Friday, April 27

সুবর্ণচরে তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের হাসি

12_0.jpg 


ঠাকুর দাস, সুবর্ণচর থেকে : নোয়াখালীর শষ্য ভান্ডার নামে পরিচিত উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরে চলতি রবি মৌসুমে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় খরচের বিপরীতে দ্বিগুণ লাভ হয়েছে তরমুজ চাষীদের। ভাল ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় তরমুজ চাষীদের চোখে মুখে খুশি দেখে মনে হয় যেন, তরমুজের লাল টুকটুকে বুকে সুখে হাসি হাসছে কৃষক।

চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার চরজব্বর, চরজুবিলী, চরআমান ঊল্যাহ, চরবাটা, পূর্বচরবাটা, চরক্লার্ক, মোহাম্মদপুর ও চরওয়াপদা ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তরমুজের চাষ করেছে কৃষক।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর আবাদী ভুমির মধ্যে চলতি রবি মৌসুম অন্যান্য ফসলের মধ্যে তরমুজ একটি স্বল্প মেয়াদী ফসল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ,পদ্ধতিগত ও ভালভাবে পরিচর্যা করায় তরমুজ চাষে খুবই লাভবান হয়েছে কৃষক । তাছাড়া প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় সুবর্ণচরে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে তরমুজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩,০০০ হেক্টর। তবে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ৪,২৫০ হেক্টর ভূমিতে তরমুজ চাষ করেছে কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অন্যান্য ফলনেও বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করি।

চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষ, ফলন কাটা, বিক্রি, পরিবহন, বিপণন ও তরমুজ আতিথেয়তাকে ঘিরে চলছে মহাধুমধাম। প্রতিটি ঘরে মৌসুমি তরমুজ হচ্ছে আতিথেয়তার প্রধান ফল। পথে ঘাটে শিশু, কিশোর, আবাল, বৃদ্ধ সবার হাতে হাতে তরমুজ। তরমুজ ক্ষেতে সকাল, দুপুর, বিকেল ঘুরে বেড়াছে দুরন্তপনার দল। শিক্ষার্থীরা ও পিছিয়ে নেই, ছুটি শেষে দল বেধে ছুটছে তরমুজ ক্ষেতে। এ যেন এক অন্য রকম দৃশ্য।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে চাষ উপযোগী তরমুজের উন্নত জাতগুলো জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানী ও ব্যাপক ভাবে চাষে হচ্ছে যার অধিকাংশই হাইব্রিড। সেগুলো হলো পতেঙ্গা,জয়েন্ট,টপ ইল্ড, গ্লোরি,ওরিয়ন, জাম্বু, পাওয়ার, ওয়ার্ল্ড কুইন, বিগটপ, চ্যাম্পিয়ন, সুগার অ্যাম্পায়ার,সুইট বেবি, ফিল্ড মাস্টার, অমৃত, মিলন মধু, সুগার বেলে, ক্রিমসন গ্লোরি, মোহনী, আমরুদ, ভিক্টর সুপার হাইব্রিড এবং ওশেন সুপার হাইব্রিড। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে ওরিয়ন, জাম্বু, পাওয়ার ও গ্লোরি জাতের তরমুজের চাষ করেছে সুবর্ণচরের কৃষক।

উপজেলার চরআমান উল্যাহ ইউনিয়নের চরবজলুল করিম গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন সোহেল জানান, আমি ৫ একর ভূমিতে ওরিয়ন, জাম্বু, গ্লোরি ও পাওয়ার জাতের তরমুজ চাষ করেছি। একর প্রতি খরচ হয়েছে ৩০হাজার টাকা এবং বিক্রি হয়েছে ১ লাখ টাকা। তিনি বলেন, বাম্পার ফলন হলেও প্রয়োজনীয় সময়ে পানি সেচ দিতে না পারায় তরমুজের অনেক কুশি নষ্ট হয়েছে। সেচ সংকট না হলে আরো বেশি লাভ হতো।

চরবাটা ইউনিয়নের মধ্যচরবাটা গ্রামের কৃষক মামুন ,মিন্টু চন্দ্র দাস, বাহার ,সোহাগ জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমরা লাভবান হয়েছি। তবে এখানে সেচ সংকট থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। ভাল বীজ, ভেজাল মুক্ত সার, প্রশিক্ষণ ও ভেজাল মুক্ত কীটনাশক এবং সময় মত সেচ সুবিধা ফেলে তরমুজ চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে জানায় চাষীরা।

একই উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের তরমুজ চাষী মোঃ মোস্তফা জানান, এবার ৬ একর ভূমিতে তরমুজ চাষ করি । আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা । তরমুজ বিক্রি করেছি আট লাখ টাকা। মোঃ বেলাল উদ্দিন জানান, ৩ একর ভূমিতে তরমুজ চাষে এক লাখ টাকা খরচ করে ৪ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি।

চলতি রবি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় বীজ, ভেজাল মুক্ত কিটনাশক ও সার, সেচ, শুদমুক্ত ঋন ,ন্যায্য দাম ও বাজার জাত করণে সহযোগিতা ফেলে সুবর্ণচরের কৃষকরা কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছন কৃষিবিদরা।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়