Saturday, July 29

২০৩০-এর আগেই সবার জন্য নিরাপদ পানি: প্রধানমন্ত্রী

২০৩০-এর আগেই সবার জন্য নিরাপদ পানি: প্রধানমন্ত্রী

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এসডিজি’র নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই আমরা শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই সকলের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারব।’ তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় নতুন খাল খনন, পুরনো খাল সংস্কার, জলাধার সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে বিভাগীয় সদরগুলোতে ভূ-উপরিস্থিত নিরাপদ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

আজ রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিন দিনব্যাপী ‘ওয়াটার সামিট-২০১৭’ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য- স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় সরকার গৃহীত কার্যক্রমসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানিনীতি প্রণয়ন। ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়্যরেজ অ্যাক্ট-১৯৯৬ প্রণয়ন, ন্যাশনাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন অ্যাক্ট-২০১৪ প্রণয়ন এবং আর্সেনিক সমস্যা মোকাবিলায় ‘ন্যাশনাল পলিসি ফর আর্সেনিক মিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্লান’ (এনএএমআইপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে।

তিনি বলেন, ইমপ্লিমেন্টেশন প্লান ফর আর্সেনিক মিটিগেশন ফর ওয়াটার সাপ্লাই-২০১৬ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গত ৮ বছরে এই দু’টি খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। বর্তমানে এই খাত দু’টিতে ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান আছে।

তিনি আরো বলেন, লবণাক্ত পানিপ্রধান এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে, ৭ হাজার পুকুর এবং গভীর কূপ খনন করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬শ’ টি। বর্ষার পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭শ’ জলাধার তৈরি করা হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ সকল বিভাগীয় শহরের নিরাপদ পানি ভূ-উপরিস্থ পানি থেকে নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলছে।

জাতিসংঘের পানি ও স্যানিটেশন-বিষয়ক বিশেষ প্যানেলের সদস্য শেখ হাসিনা বলেন, গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৪০ কোটি লোক স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ লোক মারা যায়, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।

বছরের ১৫ নভেম্বর মরক্কোর মারাকাসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের প্রদত্ত বক্তব্যে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে পৃথক ফান্ড গঠনের দাবি জানিয়েছি।’ বাংলাদেশকে জাতিসংঘ গঠিত নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি- তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা পানি সম্মেলন-২০১৭’, ডেল্টা সামিটের ওয়ার্কিং সেশন এবং শেরপা বৈঠকগুলোতে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃ নিষ্কাশনের পথে বাঁধাসমূহ চিহ্নিত হবে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশলও বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর শতকরা ৯০ শতাংশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পানি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই বন্যা এবং অন্যান্য পানিবাহিত দুর্যোগে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সমগ্র প্রাণিকূলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পানের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১শ কোটি মানুষেরই সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগর সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং প্রযুক্তিগত ভিন্নতায় পানি ব্যবহারের ধরন বদলেছে। তবে সুপেয় পানি প্রাপ্যতার প্রতি হুমকি রয়েই গেছে। বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ কমবেশি সুপেয় পানি সমস্যায় ভুগছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এমডিজি’র লক্ষ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪ শতাংশ লোকের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পেয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছেন।

দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় এসেছে ৬১ শতাংশ। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের পরিমাণ গত ৮ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়ে বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৩ সালেও এর পরিমাণ ছিল ৪২ শতাংশ।

সরকার প্রধান বলেন, শতবর্ষের পরিবর্তনের গতিধারা মাথায় রেখে পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য আমার সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ হচ্ছে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান’। আমরা ‘হান্ড্রেড ইয়ার বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি)-২১০০’ হাতে নিয়েছি। এটা একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, শত বর্ষের ডেল্টা পরিকল্পনায় ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও পানির বৈশিষ্টের ভিন্নতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে সমতল, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকাগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনার আওতায় নেওয়া হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এলজিআরডি এবং সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাস মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বক্তৃতা করেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়