Tuesday, December 6

নাফ নদীর তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মানবতা

নাফ নদীর তীরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মানবতা

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: গত বছরের শেষ দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে বাঁচার আশায় বাবা-মার সঙ্গে ছোট্ট নৌকায় চেপে বসেছিল তিন বছর বয়সী শিশু আয়লান কুর্দি। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের আশায় যেতে চেয়েছিল গ্রিসে। কিন্তু সাগরের উত্তাল ঢেউ কেড়ে নিয়েছে আয়লান কুর্দিকে। মুখ থুবড়ে পড়েছিল আয়লান কুর্দির নিথর দেহ। সাগর তীরে শিশু আয়লানের পড়ে থাকা মরদেহ হয়ে ওঠে বিপন্ন মানবতার প্রতীক। সেই সময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

আর এবার একই চিত্র আবারো ভেসে উঠলো মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরে। সেনাবাহিনীর নৃশংসতা থেকে বাঁচতে ১৫ জনের একটি দল বাংলাদেশের দিকে আসার চেষ্টা করছিল। মংডুর এই রোহিঙ্গারা নৌকায় চেপে বসেছিল। এ সময় নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ। রোববার রাতের এ ঘটনায় দুই শিশুসহ এক ডজনেরও বেশি রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা ভূক্তভোগীদের।

পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারীর মরদেহ নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যায়। পরে নদীর মিয়ানমার অংশের তীরে মুখ থুবরে পড়ে থাকতে দেখা যায় এক শিশুকে। হলুদ রঙের একটি শার্ট পরিহিত ছোট্ট এই শিশুর মুখ থুবড়ে পড়া ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শিশুটির নিথর কাদামাখা দেহ পড়ে রয়েছে মাটিতে। কর্দমাক্ত দেহ হাত চেপে রয়েছে।

এ শিশুটির সঙ্গে একই নৌকায় যাত্রী হয়েছিলেন নাফ নদীর টেকনাফ মোহনা থেকে সোমবার সকালে উদ্ধার হওয়া রেহেনা বেগম (২৫)। ছবি দেখানোর পর তিনি জানিয়েছেন, নিহত শিশুটির নাম তোহাইত। তার বয়স ১০ মাস। সে মংডুর বড় গওজবিল এলাকার জাফর আলম ও ছেনুয়ারার সন্তান। এবং সম্পর্কে রেহেনার খালাতো ভাই। যে স্থানটি দেখা যাচ্ছে তা মিয়ানমারের ওপারের চিত্র। সোমবার রাতে টেকনাফে এক বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।

মংডুর এক বৃদ্ধ বলেন, এই শিশুর অপরাধ কী ছিল? এই নিষ্পাপ বেসামরিকদের কী অপরাধ যে তাদের এভাবে হত্যা করতে হবে? নিষ্পাপ এই শিশুর নিথর দেহের ছবি যে কারো হৃদয়ে নাড়া দেবে।

মালয়েশিয়াভিত্তিক রোহিঙ্গা ভিশন টিভির মাধ্যমে এই ছবিটি প্রচার হয়েছে যা এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। শিশুহত্যার এই বিভৎস চিত্র দেখে অনেকেই মিয়ানমারের হাত থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের উদ্ধারে দেশটিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছেন।

আরভিশন টিভি জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকাগুলোর আরোহীদের বেশিরভাগই উত্তর মংডুর রাইমাবিল গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।

গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশের মংডু এবং পার্শ্ববর্তী রাতেডং শহরের তিনটি চৌকিতে অজ্ঞাত পরিচয়ধারীদের হামলায় ১৩ জন সীমান্তরক্ষী নিহত হয়।

এ ঘটনার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের অভিযুক্ত করে তাদের গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, অভিযানের নাম করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বিজিপি ও পুলিশের নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানা হচ্ছে। তারা নারীদের ধর্ষণ, হত্যা এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৫০ রোহিঙ্গা নিহত, সহস্রাধিক গ্রেফতার এবং বহু নারী ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর পরিচালিত নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়